চট্টগ্রাম শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

জেলা-উপজেলায় নেতৃত্বে পরিবর্তন না আসায় অসন্তোষ বাড়ছে

মেয়াদহীন কমিটিতে শ্রমিক লীগের কার্যক্রম

কক্সবাজার

আরফাতুল মজিদ, কক্সবাজার

৯ ডিসেম্বর, ২০১৯ | ৩:৪৬ পূর্বাহ্ণ

ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা রয়েছে কক্সবাজার জেলা শ্রমিক লীগের কমিটি নিয়ে। মেয়াদোত্তীর্ণ এই কমিটির সাথে ইয়াবা ব্যবসায়ীদের গভীর সখ্যতা রয়েছে বলে অনেক অভিযোগ। উখিয়া, টেকনাফ ও হ্নীলায় দেয়া হয়েছে কমিটি। এই তিন কমিটির বেশিরভাগ সভাপতি-সম্পাদক ইয়াবাসহ আটক হয়ে বর্তমানে কারাগারে রয়েছেন। উখিয়া ও রামু কমিটি নিয়েও রয়েছে বহু বিতর্ক। কক্সবাজার জেলা শ্রমিক লীগের ৮ উপজেলা, ৪ পৌর কমিটি ও দুই সংগঠনিক কমিটির অধিকাংশ মেয়াদ নেই দীর্ঘ কয়েক বছর ধরে। খোদ জেলা কমিটির মেয়াদ শেষ হয়েছে প্রায় আড়াই বছর আগে। দীর্ঘদিন ধরে নেতৃত্বে পরিবর্তন না আসায় বর্তমান কমিটির বেশিরভাগ নেতাকর্মীর মধ্যে অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। এতে অনেক সময় শ্রমিক লীগের নেতাকর্মীদের নিজেদের মধ্যে প্রায়ই ঘটে হাতাহাতি।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, টেকনাফ উপজেলা শ্রমিক লীগের সভাপতি শাহজাহান মিয়া ইয়াবাসহ আটকের ঘটনায় বর্তমানে কারাগারে রয়েছেন। তিনি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের শীর্ষ মাদক কারবারি। চলতি বছরের ২৫ জুলাই ভারত পালিয়ে যাওয়ার সময় বেনাপোল থেকে তাকে আটক করে আইনশৃৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। এরপর টেকনাফে তার বাসায় অভিযান চালিয়ে ৫০ হাজার ইয়াবা, ৪টি বন্দুক ও ২৫ রাউন্ড গুলি উদ্ধার করে পুলিশ। তালিকাভুক্ত ইয়াবা কারবারি হওয়ার পরও তাকে টেকনাফ উপজেলা শ্রমিক লীগের সভাপতি করা হয়েছিল। একই কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক দিদারুল আলম কম্পো ইয়াবাসহ আটক হন দু’ বার।

একইসাথে উখিয়া উপজেলা শ্রমিক লীগের কমিটির সভাপতি সরওয়ার কামাল পাশা এক আওয়ামী লীগ নেতা হত্যা মামলার আসামি। এছাড়া সাধারণ সম্পাদক সুজন দুইবার ইয়াবাসহ পুলিশের হাতে আটক হন। বর্তমানে তিনি ইয়াবাসহ আটকের ঘটনায় কারাগারে। হ্নীলা ইউনিয়ন কমিটি নিয়েও রয়েছে বহু সমালোচনা। দুইজনের আহ্বায়ক কমিটি নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে চলছে হ্নীলা শ্রমিক লীগ। এই কমিটির আহ্বায়ক দিল মোহাম্মদ সিকদারও আটক হয়েছিলেন পুলিশের কাছে। রামু উপজেলা কমিটিতেও ত্যাগীদের বাদ দিয়ে অনুপ্রবেশকারীদের সভাপতি সম্পাদক করার অভিযোগ উঠেছে। রামু শ্রমিক লীগের সভাপতি শফিকুল আলম কাজল একজন অনুপ্রবেশকারী বলে অভিযোগ তৃণমূল কর্মীদের। একইসাথে সাধারণ সম্পাদক শাহাব উদ্দিনের বিরুদ্ধেও হত্যা মামলা রয়েছে। দীর্ঘ কয়েক বছর ধরে মেয়াদোত্তীর্ণ হয়ে পড়েছে চকরিয়া উপজেলা শ্রমিক লীগ। সেখানে পরিবর্তনের কোন আভাস নেই। জামাল উদ্দিন বর্তমানে সভাপতির দায়িত্ব পালন করলেও সাধারণ সম্পাদক বাবুল পদত্যাগ করেছেন। জেলা শ্রমিক লীগের এক নেতা একটি অনুষ্ঠানকে পুঁজি করে ৫০ হাজার টাকা চাঁদা দাবি করায় সাধারণ সম্পাদকের পদ থেকে বাবুল সরে দাঁড়ান বলে জানা গেছে।

মহেশখালী উপজেলা কমিটি মেয়াদোত্তীর্ণ। সভাপতির দায়িত্বকালে মারা যান জাকারিয়া। বর্তমানে ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আব্দুর শুক্কুর। সম্পাদকের দায়িত্বে রয়েছেন সরওয়ার আলম। মেয়াদহীন এই কমিটি ভারপ্রাপ্ত দিয়ে যেমন-তেমনভাবে চলছে। নেই কোন গতিও। একইসাথে কুতুবদিয়া উপজেলা কমিটিও মেয়াদহীন। এছাড়া কক্সবাজার পৌর আহ্বায়ক কমিটি নিয়েও চলছে বহু বিতর্ক। বর্তমানে আহ্বায়ক কমিটিতে কে আছে বা কে নেই তার কোন হিসেবও নেই। যে যার মতো করে পৌর কমিটির নেতা। ২০১৬ সালে শাহেদুল আলম রানাকে আহ্বায়ক করে একটি কমিটি গঠন করা হলেও এখনো পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করা হয়নি। এরইমধ্যে চলে পাল্টাপাল্টি বহিষ্কারও। সদর উপজেলা কমিটি নিয়েও নতুন করে শুরু হয়েছে সমালোচনা।
জানা গেছে, ২০১৪ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি জাতীয় শ্রমিক লীগ কক্সবাজার জেলা শাখার সম্মেলনে জহিরুল ইসলাম সিকদার সভাপতি ও শফিউল্লাহ আনসারী সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত করে ওইদিন সম্মেলনে কমিটিটি ঘোষণা করা হয়েছিল। পরে ১৪ সেপ্টেম্বর কেন্দ্রীয় কমিটি বরাবরে ৭১ সদস্যবিশিষ্ট কমিটি জমা দেয়া হয়। ১৫ সেপ্টেম্বর সকালে জাতীয় শ্রমিক লীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি শুক্কুর মাহমুদ ও সাধারণ সম্পাদক মুক্তিযোদ্ধা সিরাজুল ইসলাম এ কমিটির অনুমোদন দেন। তিন বছরের এই কমিটি এখন ছয় বছরের পথে।

জাতীয় শ্রমিক লীগ কক্সবাজার জেলা শাখার সভাপতি জহিরুল ইসলাম সিকদার পূর্বকোণকে বলেন, কমিটির মেয়াদ শেষ হয়নি। আমাদের জেলা কমিটির মেয়াদ আরো তিন বছর বাড়ানো হয়েছে। কর্মকা-ের ওপর ভিত্তি করে কেন্দ্র থেকে এই মেয়াদ বাড়ানো হয়। ছয় মাস আগে কমিটির মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে। তবে আমাদের কয়েকটি উপজেলা কমিটি মেয়াদোত্তীর্ণ। এছাড়া বিভিন্ন মামলা ও অভিযোগ থাকার কারণে কয়েকজনকে বহিষ্কার করা হয়েছে। আমাদের এখানে কেউ ইয়াবা ব্যবসায়ী নেই।

এদিকে দলের কয়েকজন নেতা জানিয়েছেন, জেলা কমিটি মেয়াদোত্তীর্ণ। নতুন করে কেউ কমিটির অনুমোদন দেয়নি। গুজব ছড়িয়ে তারা কমিটির

মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে বলে অপপ্রচার চালাচ্ছে।
জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক শফিউল্লাহ আনছারী বলেন, এক বছর আগে আমাদের কমিটির মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে। মেয়াদ বাড়াতে আমরা আবেদনও করি। কক্সবাজার শ্রমিক লীগের সবাই পরিচ্ছন্নকর্মী। এখানে কোন ঝামেলা নেই। তবে টেকনাফ কমিটি নিয়ে অভিযোগ ছিল। তাই কমিটি বিলুপ্ত করা হয়েছে।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট