চট্টগ্রাম বৃহষ্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪

বিশেষায়িত বার্ন ইউনিট না থাকায় রোগীরা ঢাকামুখী, চরম দুর্ভোগ

চমেক হাসপাতাল হ নেই কোনো আধুনিক সরঞ্জাম, বার্ন আইসিইউ হ দীর্ঘদিন থেকেই সংকট চিকিৎসক-জনবলের হ শয্যার চেয়ে কয়েকগুণ বেশি রোগী ভর্তি থাকে

ইমাম হোসাইন রাজু

৮ ডিসেম্বর, ২০১৯ | ৫:৫৬ পূর্বাহ্ণ

গত দু’দিন আগে গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণে গুরুত আহত হয়ে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে ভর্তি হয় ওসমান গনি। আগুণে তার শরীরের ৭০ শতাংশ পুড়ে যায়। কিন্তু তার চিকিৎসার প্রয়োজনীয় আধুনিক সরঞ্জাম ও বিশেষ পরিচর্চা কেন্দ্র না থাকায় ঢাকা প্রেরণ করা হয়। একই কারণে ঘটনায় আহত আরও দু’জনকেও ঢাকার প্রেরণ করতে বাধ্য হন চিকিৎসকরা।
শুধু ওসমান গনি নন সম্প্রতি নগরীর পাথরঘাটায় বিস্ফোরণে আহত অর্পিতা নাথকেও ঢাকায় প্রেরণ করা হয়। শুধুমাত্র প্রয়োজনীয় চিকিৎসা-সরঞ্জামের অভবেই এমন অসংখ্য রোগীই ঢাকায় যেতে বাধ্য হচ্ছেন। এরমধ্যে যাওয়ার পথেই মৃত্যু হচ্ছে অনেকের।
তথ্য মতে, ২০১৪ সালে পৃথকভাবে যাত্রা শুরু করা ২৬ শয্যার এই ওয়ার্ডে বৃহত্তর চট্টগ্রাম থেকে প্রতিদিন গড়ে ৭০ থেকে ৮০ জন রোগী ভর্তি থাকে। এছাড়া আউটডোরে চিকিৎসা সেবা নিতে হাজির হয় অন্তত শতাধিক। এরমধ্যে যাদের এখানে রেখে চিকিৎসা সেবা সম্ভব তাদের ভর্তি করানো হয়। তবে চিকিৎসা সুবিধা না থাকায় অন্যদের ঢাকায় গিয়ে সেবা নিতে পরামর্শ দিয়ে থাকেন চিকিৎসকরা। এরমধ্যে খুব বেশি দগ্ধ রোগীদের ঢাকায় নিয়ে যেতে চরম দুর্ভোগেও পড়তে হয়।
চমেক হাসপাতালের গুরুত্বপূর্ণ এই ওয়ার্ডে প্রতিদিন এমন রোগীরা চিকিৎসা নিতে হাজির হয়। কিন্তু সেই অনুযায়ী এখন পর্যন্ত বাড়েনি চিকিৎসা সুবিধা। এরমধ্যে কোন রোগী ২৫ শতাংশের উপর দগ্ধ হয়ে চিকিৎসা নিতে আসলে, চিকিৎসক তাকে ঢাকায় প্রেরণের পরামর্শ দিয়ে থাকেন। মূলত বিভাগটিতে নিবিড় পরিচর্যাকেন্দ্র (আইসিইউ) না থাকায় এবং প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি এবং চিকিৎসক ও জনবলের সংকটেই এমন কাহিল অবস্থা বিভাগটির।
তথ্য অনুযায়ী, বিভাগটির একটি অধ্যপক পদ থাকলেও দীর্ঘদিন থেকেই পদটি শূন্য। একসজ সহযোগী অধ্যাপক দিয়ে চলছে বিভাগটি। যদিও বর্তমানে কমপক্ষে তিনজন সহযোগী অধ্যাপকের প্রয়োজন আছে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা। এছাড়া ছয়জন সহকারী অধ্যাপক থাকার প্রয়োজন হলেও বর্তমানে আছেন মাত্র একজন। দুই পদের বিপরীতে রেজিস্টারও আছেন একজন। সহকারী রেজিস্টারের ছয় পদের বিপরীতে রয়েছে মাত্র তিনজন। বলা যায়, রোগী অনুপাতে চরম চিকিৎসক সংকেটর মধ্যেই চলছে এই ইউনিট।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, শয্যার চেয়ে কয়েকগুণ বেশি রোগী ওয়ার্ডটিতে ভর্তি রয়েছে। যার দুই-তৃতীয়াংশ রোগীকে মেঝেতে রেখে চিকিৎসা সেবা দিয়ে যাচ্ছেন চিকিৎসকরা। যদিও সেবার মানে খুশিই ছিলেন বেশিরভাগ রোগী। তবে শয্যা না থাকায় অসন্তোষ প্রকাশ করেন অনেকেই।
সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকরা জানায়, প্রতিদিন গড়ে এখানে ৭০ থেকে ৮০ জন রোগী ভর্তি থাকে। তারমধ্যে শীতকালে রোগীর সংখ্যা আরও বেড়ে যায়। অনেক সময় একশর উপরেও চলে যায় রোগী সংখ্যা। এরমধ্যে ২৪ ঘণ্টাই ওয়ার্ডে রোগী ভর্তি হয়ে থাকেন। কিন্তু সে অনুযায়ী চিকিৎসক ও জনবলের সংকট প্রকট।
এদিকে চীন সরকারের অর্থায়নে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে বিশেষায়িত বার্ন এন্ড প্লাস্টিক ইউনিট হাসপাতাল হওয়ার কথা থাকলেও জায়গার অভাবে তা পুরোপুরি অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। যা নিয়ে গত ২৭ অক্টোবর দৈনিক পূর্বকোণে ‘চট্টগ্রামে বার্ন ইউনিট হচ্ছে না’ শিরোনামে একটি সংবাদও প্রকাশিত হয়। কিন্তু বিপরীতে দিনদিন চট্টগ্রামে দগ্ধ রোগীর সংখ্যা বাড়ছেই। কিন্তু সে অনুপাতে সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন রোগীরা।
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের বার্ন এন্ড প্লাস্টিক সার্জারী ইউনিটের প্রধান ও বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. রফিক উদ্দিন আহমেদ এ প্রসঙ্গে পূর্বকোণকে বলেন, ‘একেতো জনবল সংকট। তারমধ্যে নেই আইসিইউ’র ব্যবস্থা। বাধ্য হয়েই গুরুত্বপূর্ণ রোগীদের ঢাকায় প্রেরণ করতে হয়। তবে বিশেষায়িত বার্ন ইউনিট যদি হয়, তাহলে এ সমস্যা কেটে যাবে। কাউকে আর ঢাকায় প্রেরণ করতে হবে না। বরং এখানেই তার চিকিৎসা সম্ভব হবে’।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট