চট্টগ্রাম শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪

লাম্পি স্কিনের সুচিকিৎসা মিলছে না

গরু নিয়ে বেকায়দায় খামারিরা

সীতাকু- সৌমিত্র চক্রবর্তী হ সীতাকু-

৮ ডিসেম্বর, ২০১৯ | ৫:৪২ পূর্বাহ্ণ

সীতাকু-ে গরুর নানারকম রোগ নিয়ে বেকায়দায় পড়েছেন খামারি ও সাধারণ গৃহস্থরা। বিশেষত নতুন করে লাম্পি স্কিন রোগের প্রকোপ বৃদ্ধি ও শীতজনিত রোগ বেড়ে যাওয়ায় দিশেহারা হয়ে প্রাণিসম্পদ কার্যালয়ে ছুটছেন সংশ্লিষ্টরা। সেখানে ডাক্তাররা চিকিৎসা দিলেও কিছু কিছু ওষুধে তেমন কোন সুফল মিলছে না। আবার লাম্পি স্কিনের মত রোগের সুচিকিৎসা না থাকায় হতাশ হয়ে ফিরছেন তারা। উপজেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, সীতাকু-ে ১০৬টি খামার ও ব্যক্তি পর্যায়ে মোট ৯৬ হাজার গরু আছে। প্রাকৃতিক নিয়মেই এসব গরু সময়ে সময়ে নানা রোগে আক্রান্ত হয়। সেসময় গরুর মালিকরা স্থানীয় পল্লী চিকিৎসক ও প্রাণিসম্পদ কার্যালয়ে হাজির হয়ে চিকিৎসা প্রদান করেন। এদিকে উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে খামারি ও গরুর মালিকদের সাথে কথা বলে গরুর রোগজনিত চিকিৎসা নিয়ে নানান অসন্তুষ্টির কথা জানা গেছে। বাড়বকু- ইউনিয়নের তেলিবাজার গ্রামের বাসিন্দা মো. হারুনুর রশিদ প্রকাশ ইরান বাদশা বলেন, তার একটি গরুর খামার আছে। এতে ৫০টি ফ্রিজিয়ান জাতের গরু আছে। এই গরুগুলো মাঝে মধ্যেই রোগে আক্রান্ত হয়। জ্বর সর্দি, পাতলা পায়খানাসহ নানান রোগ হয় সময়ে সময়ে। তখন প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তার কাছে ফোন করেন অথবা নিজেই আসেন। তিনি যে ওষুধ দেন সেটি কিনে খাওয়ান। হারুন অভিযোগ করে বলেন, মাঝে মাঝে কিছু কিছু ওষুধে কোন কাজই যেন হতে চায় না। তখন রোগ নিয়ে সমস্যায় পড়ি। কিন্তু প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তারা আন্তরিকভাবেই সহযোগিতা করেন বলে দাবি করে হারুন আরো বলেন, যখনই তাদেরকে ফোন করে রোগের কথা বলি তারা পরামর্শ দেন। তবে এবার তার চারটি

গরু ল্যাম্পি স্কিন রোগে আক্রান্ত হয়েছে। এগুলো নিয়ে দারুন সমস্যায় আছেন বলে জানান তিনি। হারুন বলেন, এই গরুগুলোর জন্য প্রায়ই প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তার কাছে আসেন।

তার পরামর্শ অনুযায়ী চিকিৎসা দিচ্ছেন। এছাড়া আরো কিছু ইন্ডিয়ান মুন্ডি জাতের গরু আছে। ল্যাম্পি স্কিন রোগ যেন সেগুলোকে স্পর্শ করতে না পারে এখন সে লক্ষে গরুগুলোকে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। অপর এক গরুর মালিক উপজেলার মুরাদপুর ইউনিয়নের বাসিন্দা মো. শাহীন বলেন, সারাবছরই গরুর নানান রোগ হয়। তিনি প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তার কাছেই চিকিৎসা নেন। এখন শীতের শুরুতেই একটি গরুর শ্বাসকষ্ট শুরু হয়েছে। এজন্য প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. শাহাজালাল মোহাম্মদ ইউনুসের কাছে চিকিৎসা নিতে আসেন। ডাক্তার তাকে জানিয়েছে শীতে গরুটি ঠান্ডায় আক্রান্ত হয়েছে। এ কারণে শ্বাসকষ্ট দেখা দিয়েছে। মো. শাহীনও প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা চিকিৎসায় আন্তরিক বলে জানালেও কিছু কিছু কোম্পানির ওষুধ তেমন কাজ করে না বলে মনে করছেন। এদিকে সাধারণ গৃহস্থ বা খামারিরা সারাবছর নানান রোগ নিয়ে আসলেও এ বছর নতুন করে আসা গরুর ল্যাম্পি স্কিন রোগই তাদের বেশি ভোগাচ্ছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। সবচেয়ে বড় সমস্যা এই রোগে পূর্ণ চিকিৎসা বাংলাদেশেই নেই বলে জানান ডাক্তারা।
সীতাকু-র বারৈয়ারঢালা ইউনিয়নের টেরিয়াইল এলাকায় গরুর খামারি মোহাম্মদ রাসেল জানান, তার খামারে ২২টি গরু রয়েছে। হঠাৎ কিছু গরুর গায়ে ফোলা লক্ষণ দেখতে পান তিনি। এরপর ঐ গরুগুলোকে নিয়ে উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তার কাছে যান। তিনি এটি লাম্পি স্কিন রোগ বলে শনাক্ত করেন। কিন্তু এও বলেন, যে এই রোগ বাংলাদেশে নতুন। তাই এর এখনো ভালো চিকিৎসা এখানে আসেনি। তবে তিনি কিছু এন্টিবায়োটিক ওষুধ দিয়েছেন যেন রোগটি আরো বেশি ছড়িয়ে পড়তে না পারে। প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা আক্রান্ত গরুগুলোকে আলাদা করে মশারির ভেতর রাখাসহ বেশ কিছু পরামর্শ দেন।

এসব বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা শাহাজালাল মো. ইউনুস বলেন, সীতাকু-ে প্রচুর খামারি ও গৃহস্থ গরুর নানান সমস্যা নিয়ে প্রাণিসম্পদ কার্যালয়ে আসেন। তিনি সাধ্যমত তাদের গরুকে চিকিৎসা দেন। সাম্প্রতিক সময়ে লাম্পি স্কিন রোগ নিয়ে কিছুটা সমস্যার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, এই রোগের চিকিৎসায় এন্টিহিস্টামিন ও ব্যাথানাশক ব্যবহার করে সুফল পাচ্ছি। রোগটি যেন না ছড়ায় সেদিকেই নজর রাখছি আমরা। আমরা চিকিৎসা দেওয়ার পাশাপাশি খামারিদের এসব বিষয়ে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিচ্ছি।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট