চট্টগ্রাম বৃহষ্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪

মুক্তিযোদ্ধা ছালামত উল্লাহ মল্ল

মাইন বিস্ফোরণে রেলের ইঞ্জিন উড়িয়ে দিয়ে ২২ পুলিশকে ধরে ফেলি

হারুনুর রশিদ ছিদ্দিকী হ পটিয়া

৭ ডিসেম্বর, ২০১৯ | ৫:৩৮ পূর্বাহ্ণ

১৯৭১ সালের সেপ্টেম্বরের শেষের দিকে ধলঘাট রেলস্টেশনে চট্টগ্রাম থেকে দোহাজারীগামী সন্ধ্যা ৬টার দিকে ট্রেনে করে জিআরপি পুলিশ যাচ্ছিল। এ খবর পেয়ে প্রফেসর শাসমুল ইসলামের নেতৃত্বে আমরা ১০/১৫ জনের মুক্তিযোদ্ধার একটি দল স্টেশনের দুইপাশে অবস্থান নিই। এ সময় সুবেদার নুরুল আলম (গৈড়লা) রেলের ইঞ্জিনে মাইন বিস্ফোরণ করে ইঞ্জিন উড়িয়ে দেয়। মুক্তিযোদ্ধারা বগিতে থাকা ২২জন জিআরপি পুলিশকে ১১টি রাইফেলসহ ধৃত করি। তাদেরকে করলডেঙ্গা পাহাড়ে ফরেস্ট অফিসে নিয়ে যাওয়া হয়। মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচারণে মুক্তিযোদ্ধা ছালামত ঊল্লাহ মল্ল এসব তথ্য জানান।
মুক্তিযোদ্ধা ছালামত ঊল্লাহ মল্ল ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে তিনি ৯ম শ্রেণির ছাত্র ছিলেন। তিনি জানান, শেষের দিকে বোয়ালখালী উপজেলার সরোয়াতলী ইউনিয়নের মু্িক্তযোদ্ধা মুনসুর ছিদ্দিকী (মৃত) এর মাধ্যমে ধলঘাটের কৃতি সন্তান যুদ্ধকালীন কমান্ডার প্রফেসর শামসুল ইলসলাম (মৃত) এর গ্রুপে বোয়ালখালী’র করল ডেঙ্গা পাহাড়ে লেচু বাগান এলাকায় একবাড়িতে মিলিত হই। আমার সাথে ছিলেন আমার চাচাতো ভাই আবু ছিদ্দিকী মল্ল। সেখানে গিয়ে দেখি তৎকালীন ইপিআর বাহিনীর ১০/১৫ জন অস্ত্রসন্ত্রসহ সৈনিক ছিলেন। ঐদিন সন্ধ্যায় প্রফেসর শামসুল ইসলাম, মুনসুর ছিদ্দিকী, ছিদ্দিক আহমদসহ বোয়ালখালীর জ্যোষ্টপুরা সেনের বাড়িতে তাদের মূল ক্যাম্পে যাই। সেখানে ক্যাপ্টেন করিম ও ইপিআর সুবেদার টিএম আলী গ্রুপের ২০ জনের সশন্ত্র সৈনিক, বোয়ালখালীর যুদ্ধকালীন কমান্ডার মো. সোলাইমান (সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান) সহ অন্যান্য মুক্তিযোদ্ধারা ক্যাম্পে ছিলেন। তৎমধ্যে ধলঘাটের গৈড়লাগ্রামের শহীদ ইব্রাহিম (ছদœনাম মিয়া ভাই), ছনহরার প্রদ্যুৎ পাল (দুলাল), বরলিয়ার বদিউলজামাল, বোয়ালখালীর সরোয়াতলী গ্রামের আ.ফ.ম নাছির উদ্দিন, বোয়ালখালীর নেভি সৈনিক জহির আহমদ, সেনাবাহিনীর জহির উদ্দিন, সরোয়াতলী গ্রামের সুজিত নাথসহ আরো অনেকেই ছিলেন। সেখানে একরাত যাপনের পর করলডেঙ্গা লেচু বাগান এলাকায় ক্যাপ্টেন করিম ও প্রফেসর শামসুল ইসলাম, ইপিআর সুবেদার টিএম আলী গ্রুপের সৈনিক আবদুল বারেকের নেতৃত্বে আমরা ৫ জন সশন্ত্র প্রশিক্ষণ গ্রহণ করি। তৎমধ্যে আবু ছিদ্দিক মল্ল বোয়ালখালীর সামশুদ্দিন আহমদ, শিকলবাহার আবদুল কুদ্দুস, সরোয়াতলীর সাখাওয়াত হোসেন ছিলেন। সেখানে ১৫ দিন ব্যাপী এস এল আর, রাইফেল, স্ট্যানগান, গ্রেনেড নিক্ষেপ চালানোসহ বিভিন্ন প্রশিক্ষণ গ্রহণ করি। আগস্ট মাসের শেষের দিকে মুনসুর ছিদ্দিকীর নেতৃত্বে বোয়ালখালীর রাজাকার জাকের কে ধরার জন্য তার বাড়িতে অপারেশন চালাই। পরে সে পালিয়ে যায়। সেপ্টেম্বর মাসে ধলঘাটের হাসপাতালের ডাক্তার বদিউল আলমকে রাজাকারেরা ধরে নিয়ে যায়। খবর পেয়ে ক্যাপ্টেন করিম ও প্রফেসর শামসুল ইসলামের নেতৃত্বে অনেক মুক্তিযোদ্ধাসহ ধলঘাট হাসপাতালে গিয়ে ৪/৫ জন করে বিভিন্ন গ্রুপে ভাগ হয়ে ধলঘাট রেলস্টেশনের পাশেসহ বিভিন্ন এলাকায় অবস্থান নিই। আমাদের উপস্থিতি টের পেয়ে ঐদিন দুপুর ১২টার দিকে পটিয়া থেকে রেল ইঞ্জিনের দুটি বগি নিয়ে একদল পাকিস্তানি সৈনিক ধলঘাট রেলস্টেশনে নেমে করলডেঙ্গা পাহাড়ের দিকে রকেট লেঞ্চার ছুঁড়ে এবং আশেপাশে এলোপাতাড়ি গুলি করতে থাকে। এ সময় আমিসহ আমার গ্রুপের ৫/৬ জন ধলঘাট আর্বান সমবায় সমিতির বাউন্ডারি ওয়ালের ভিতরে এমবুশে ছিলাম। সেখান থেকে আমরা পাল্টা গুলি চালাই। এ সময় পাকিস্তানিদের গুলিতে নন্দেরখীল বাকদ-ী গ্রামের কয়েকজন নিহত হয়। পরে ভারতে দেমাগ্রীরি যাওয়ার জন্য রাঙ্গুনিয়ার পদুয়া রাজাখালি বাজারের পূর্বে পাহাড়ি টিলায় ফরেস্ট অফিসে মুনসুর ছিদ্দিকীর নেতৃত্বে নিয়ে যায়। সেখানে একটি প্রাইমারি স্কুলে রাতযাপন করি। সেখানে ক্যাপ্টেন করিম, আহমদ শরীফ মনির, শহীদ ইব্রাহিম মিয়া ভাইকে দেখতে পাই। সেখান থেকে ভারতে যাওয়ার সময় ৩দিন পর রাঙ্গামাটির কাপ্তাই লেকের শেষের দিকে করোয়া নামের ফরেস্ট অফিসে পৌঁছে খাওয়ার জন্য বিশ্রাম নিই। এ সময় সেখানে অবস্থানরত পাকিস্তানি সৈন্যরা আমাদেরকে ঘিরে এলোপাতাড়ি গুলি করতে থাকে। পাকিস্তানিদের গুলিতে শিকলবাহার কুদ্দুস, বোয়ালখালীর সামশুদ্দিন গুলিবৃদ্ধ হয় এবং পটিয়ার ্এয়াকুবদ-ীর হারুন শহীদ হয়।
পটিয়া উপজেলার ধলঘাট ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান মুক্তিযোদ্ধা ছালামত উল্লাহ মল্ল ১৯৫৫ সালে ধলঘাট ইউনিয়নের উত্তর সমুরা গ্রামের মল্লবাড়ি এলাকায় জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা মৃত আবদুল আজিজ মল্ল। তিনি পটিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের ২০০১ সালের সহ-সভাপতি ও ২০০৫ সালে উপজেলার ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। ১৯৯৪ সালে পটিয়া উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের ডেপুটি কমান্ডারের দায়িত্বে ছিলেন। তিনি একজন সফল ব্যবসায়ী।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট