চট্টগ্রাম শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

লোকালয়ে এসে হাত পাতছে বানর!

সীতাকু- হ পাহাড়ে খাদ্য সংকট হ কেউ কেউ খাবার দেয়, হামলায় মারাও পড়ছে বন্যপ্রাণী

সৌমিত্র চক্রবর্তী হ সীতাকু-

৭ ডিসেম্বর, ২০১৯ | ৫:৩৮ পূর্বাহ্ণ

সীতাকু-ে পাহাড়ে চরম খাবার সংকটে ভুগছে বন্যপ্রাণীরা। ফলে খাবারের সন্ধানে প্রায়ই লোকালয়ে এসে হাত পাতছে এসব প্রাণী! তবে তাদেরকে কেউ কেউ অল্পকিছু খাবার দিলেও বেশিরভাগ ক্ষেত্রে খাবারের পরিবর্তে হামলার শিকার হয়ে বেঘোরে মারা যাচ্ছে প্রাণীগুলো। সর্বশেষ গত ৩ ডিসেম্বর একটি ভাল্লুক খাবারের খোঁজে এসে স্থানীয়দের পিটুনিতে মারা পড়েছে। ফলে হুমকির মুখে পড়ছে জীববৈচিত্র। স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, সাম্প্রতিক সময়ে সীতাকু-ের বিভিন্ন স্থানে পাহাড়ি বন্যপ্রাণীরা প্রায়ই লোকালয়ে এসে খাদ্যের সন্ধান করছে। অনেক ক্ষেত্রেই প্রাণীগুলো সাধারণ মানুষের হামলার শিকার হচ্ছে। তবে পাহাড়ের পাদদেশে মন্দিরসহ বিভিন্ন বাড়িতে এসব প্রাণীরা এসে উপস্থিত হলে কিছুটা খাবার জুটছে। ফলে এসব এলাকায় প্রতিদিন অধিক সংখ্যক বন্যপ্রাণী নেমে আসছে। লোকমুখে এসব তথ্য শুনে গতকাল (শুক্রবার) দুপুরে সরেজমিনে সীতাকু- পৌরসদর চন্দ্রনাধ ধামের শম্ভুনাথ মন্দির এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, মন্দিরে বেশ কিছু বানর এসে তীর্থ যাত্রীদের কাছে খাবারের জন্য হাত পাতছে! কেউ কলা, আপেলসহ বিভিন্ন খাবার দেওয়ার সাথে সাথে ঝাঁপিয়ে পড়ে কুড়িয়ে নিচ্ছে তারা।

তীর্থ যাত্রীরা জানান, একসময় এখানে বানর বা কোন বণ্যপ্রাণী আসত না। এসব প্রাণী জনমানব থেকে অনেক দূরে অবস্থান করত। কিন্তু এখন প্রায়ই এসে খাবার চাইছে প্রাণীগুলো।

সীতাকু- পৌরসদরের এক দর্শনার্থী অনিক দাশ এ প্রতিবেদককে বলেন, এতবড় সবুজ পাহাড়েই খাবারের অভাব দেখা দিয়েছে বলে আমরা ধারণা করছি। নইলে একসময় প্রাণীগুলো এভাবে মানুষের হামলার ভয় উপেক্ষা করে সাধারণ মানুষের কাছে হাত পাতত না। তিনি বলেন, আজকে বানরগুলোকে দেখে খুবই অসহায় বলে মনে হচ্ছিল। এরা খাবারের জন্য এক দৃষ্টিতে মানুষের মুখের দিকে তাকিয়েছিলো। এ অবস্থা দেখে আমি সাথে থাকা কয়েকটি আপেল ছুঁড়ে দিলে বানরেরা খাবারগুলো ছোঁ মেরে কেড়ে নেয়।
খাবারের অভাবে এসব বানরের শারীরিক অবস্থা ক্রমশ খারাপ হয়ে যাচ্ছে বলে মনে করছেন উপজেলার বড়দারোগারহাট থেকে আসা এক দর্শনার্থী মো. সুজিত ধর। তিনি বলেন, বানরগুলোকে দেখেই বোঝা যাচ্ছে ওরা ঠিকমত খাবার পাচ্ছে না। এ কারণে এভাবে সবার কাছে খাবার চাইছে। তারা পাহাড়ে বানরদের খাবারের ব্যবস্থা করে এসব বন্যপ্রাণীদের সংরক্ষণ করার জন্য বনবিভাগের কর্মকর্তাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। এদিকে এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, সীতাকু- শম্ভুনাথ মন্দিরের মত উপজেলার বিভিন্ন স্থানে প্রায়ই লোকালয়ে হানা দিচ্ছে পাহাড়ি অজগর সাগ, ভাল্লুক, সজারুসহ আরো নানান প্রাণী। গত মঙ্গলবারও উপজেলার সোনাইছড়ি ইউনিয়নের শীতলপুর এলাকায় একটি ভাল্লুক ছানা খাবারের জন্য নেমে আসলে স্থানীয়রা সেটি ধরার চেষ্টা করেন। এসময় ভাল্লুক ছানাটি ইকবাল নামের এক যুবককে কামড়ে দিয়ে বাঁচার চেষ্টা করলে স্থানীয়রা সেটিকে পিটিয়ে নির্মমভাবে হত্যা করেন।

সোনাইছড়ি পাহাড়ের ত্রিপুরা পল্লীতে বসবাসকারী ত্রিপুরা সর্দার কাঞ্চন ত্রিপুরা বলেন, ঐ ভাল্লুক ছানাটিকে স্থানীয়রা পিটিয়ে হত্যা করার পর কিছু লোক খবর পেয়ে বাইরের এলাকা থেকে এসে মৃত ভাল্লুক ছানাটি খাবার জন্য নিয়ে যায়। একইভাবে আরো অন্যান্য এলাকাতে বন্যপ্রাণী নেমে আসলেও বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সেগুলো বেঁচে ফিরতে পারে না। স্থানীয় অসচেতন মানুষের প্রহারে বেঘোরে মারা পড়ছে অসংখ্য প্রাণী। তবে মাঝেমধ্যে কিছু কিছু প্রাণীকে জীবিত ধরে এলাকাবাসী নিকটতম চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানায় নিয়ে পৌঁছে দেন। ফলে সেখানে কিছু প্রাণী এখনো বেঁচে আছে।
চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানার সদস্য সচিব হাটহাজারীর ইউএনও মো. রহুল আমিন জানান, সীতাকু-ে লোকালয়ে অনেক সময় বিভিন্ন বন্যপ্রাণী ধরা পড়ে থাকে। কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয় হলো বেশিরভাগ প্রাণীই স্থানীয়দের প্রহারে মারা যায়। তিনি বলেন, সীতাকু- থেকে ধরা পড়া অনেকগুলো হরিণ, অজগর সাপ থেকে শুরু করে সজারুও এনে দিয়েছে এলাকাবাসী। কিন্তু স্থানীয়দের পিটুনিতে গুরুতর আহত থাকায় সজারুসহ কয়েকটি হরিণকে আমরা বাঁচাতে পারিনি। এসব প্রাণীকে না পিটিয়ে চিড়িয়াখানায় পাঠিয়ে দেবার পরামর্শ দেন তিনি।

সীতাকু- উপজেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা ডা. শাহজালাল মো. ইউনুস বলেন, মাঝেমধ্যে এখানে কিছু বন্যপ্রাণী ধরা পড়ে বলে আমরা শুনে থাকি। এরমধ্যে কিছু কিছু আহত প্রাণী আমাদের কাছে আসে। আবার সব আসে না। সম্প্রতি একটি ভাল্লুক ছানা ধরা পড়েছে বলে শুনেছি। কিন্তু আমাদের কাছে আসেনি। তিনি মনে করেন পাহাড়ে খাদ্য সংকটের কারণেই বন্যপ্রাণীরা এভাবে লোকালয়ে আসছে। সেখানে পর্যাপ্ত খাবার থাকলে প্রাণীগুলো এভাবে নেমে এসে মারা পড়ত না।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট