চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪

প্রাক্তন-নতুনের মেলবন্ধনে মুখর ক্যাম্পাস

চুয়েটের সুবর্ণজয়ন্তী

জাহেদুল আলম হ রাউজান

৭ ডিসেম্বর, ২০১৯ | ৫:২৮ পূর্বাহ্ণ

সৌরভ দাশ। ১৩ ব্যাচে পড়তেন। পুরকৌশল বিভাগের ছাত্র। বাড়ি নগরীর পতেঙ্গায়। দু’মাস আগে ফুটবল খেলতে গিয়ে ভেঙ্গে ফেলেছেন পা। হাঁটতে পারেন না। দু’টি ক্র্যাচে ভর করে এসেছেন প্রাণের ক্যাম্পাসে। হয়তো জীবনে আর আসা হবেনা, সহপাঠী বন্ধু-বান্ধবীদের সাথে এই শেষ দেখা- এমন আশঙ্কা মনে নিয়ে ক্র্যাচের উপর ভর করে প্রাণের বিদ্যাপীঠকে ঘুরে ঘুরে দেখছেন তিনি। অনুভব করেছেন যেন এটি আজকের জন্য প্রাক্তন আর নবীনদের এক মহাযজ্ঞ। সঙ্গে নিয়ে এসেছেন বাবাকেও। শুধু সৌরভই নয়, দেশের বিভিন্নস্থানে ছড়িয়ে থাকা প্রাক্তনরাতো বটেই, বিদেশে কর্মজীবন হিসেবে সঙ্গী করে থাকা শিক্ষার্থীরাও ছুটে এসেছেন স্মৃতিময় চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (চুয়েট)। এ বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে গতকাল শুক্রবার ভোর থেকে শীতকে

উপেক্ষা করে নতুন ও পুরাতনরা হাজির হয়েছে প্রিয় ক্যাম্পাসে। প্রাক্তনদের বেশিরভাগই এসেছেন পরিবার-পরিজন নিয়ে। কেউ বৃদ্ধ মা-বাবা, কেউ স্ত্রী বা সন্তান নিয়ে আসেন নিজের বিদ্যাপীঠের প্রথম গোল্ডেন জুবলীর আনন্দ ভাগাভাগি করতে। প্রাক্তন এবং বর্তমান সহ¯্র শিক্ষার্থীর মেলবন্ধনে চুয়েট ক্যাম্পাস মুখরিত হয়। চোখ ধাঁধানো আলোকসজ্জা, আলপনা, কারুকাজে সাজিয়ে দেয়া চুয়েট ক্যাম্পাসে এসে বিমুগ্ধ হয় পুরাতনরা। একেকটি ব্যাচের প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা সেলফি, আড্ডা, শীত পিঠা, নাচ, গান, শোভাযাত্রা, ক্যাম্পাসের মাধুরি মেশানো প্রকৃতির উঁচু-নিচু কোলে ঘুরে ঘুরে কাটিয়েছেন দিন। শুনেছেন দেশের নামকরা ব্যান্ডের শিল্পীদের গান। একইসাথে মেজবান, রাতের খাবার, প্রিয় শিক্ষকদের সঙ্গে স্মৃতি রোমন্থন কত কী। কেউ কাঁধে ছেলে নিয়ে, কেউ স্ত্রীর সাথে, কেউ ব্যাগ নিয়ে ঘুরে বেড়ায় ক্যাম্পাস জুড়ে। ‘আরে দোস্ত কেমন আছিস?’, বলেই অনেকে বন্ধুকে জড়িয়ে ধরে কুশল বিনিময় করতে দেখা যায়। অনেকেই ক্যাম্পাসের সুখ স্মৃতি আর গোল্ডেন জুবলির আনন্দের কথা লিখেছেন আয়োজকদের দেয়া বোর্ডে।
এ বিশ্ববিদ্যালয়ের সদ্য প্রাক্তন ছাত্র সৌরভ দাশ বলেন, ‘জীবনের চারটি সোনালী বছর এখানে কাটিয়েছি। সুবর্ণ জয়ন্তীর মাধ্যমে সিনিয়র ও জুনিয়র ভাইদের সঙ্গে আনন্দ ভাগাভাগি করতে পারছি- এটাই ভালো লাগছে’। ২০০৫ সালে ইলেকট্রিক্যাল বিভাগ থেকে পড়ালেখা শেষ করেন রাঙ্গুনিয়ার রিমন সাহা। তিনি সুবর্ণজয়ন্তীতে যোগ দিয়েছেন স্ত্রী-সন্তান নিয়ে। অনুভূতি প্রকাশ করতে গিয়ে বলেন, ‘এই দিনটার জন্য অনেক বছর অপেক্ষা করেছি। এ অনুষ্ঠানে আসতে পেরে ভালো লাগছে। ক্যাম্পাসকে নতুন করে সাজিয়েছে, দিনের সৌন্দর্যে আমাকে মুগ্ধ করেছে, রাতের লাইটিং দেখার অপেক্ষায় আছি’ (দুপুরের মন্তব্য)।

১-৭ ব্যাচের কম্পিউটার সায়েন্স বিভাগের বর্তমান ছাত্রী কাজী সাবরিনা বলেন, ‘পুরাতনদের আনন্দ-উচ্ছ্বাস, স্মৃতি রোমন্থনের দৃশ্যেগুলো দেখে ভালো লাগছে। আমরাও একদিন তাদের মতো এ ক্যাম্পাসের পুরনো ছাত্রী হবো- সেই কথাই বসে বসে ভাবছি। তবে তাদের আনন্দে আমরাও আনন্দ করছি’।
২০১৪ সালে শিক্ষাজীবন শেষ করেন রিপা ও তাহমিনা নামের দুই সহপাঠী। তারা বলেন, ‘৩-৫ বছর পর এসেছি প্রাণের ক্যাম্পাসে। এ ক্যাম্পাসের সবকিছু নতুন লাগছে’। ১১ ব্যাচের সিভিল বিভাগের প্রাক্তন ছাত্রী চিং চিং মারমা এসেছেন বান্দরবান থেকে। তিনি বলেন, ‘আজকের দিনটা আমার কাছে স্পেশাল। বড় ভাই, বোন আর বন্ধু-বান্ধবীদের দেখছি। এ যেন প্রাণখোলা আনন্দ’।

এ প্রসঙ্গে চুয়েটের ভিসি অধ্যাপক ড. রফিকুল আলম বলেন, ‘চুয়েটের ৫০ বছর পূর্তি ও সুবর্ণজয়ন্তী ছিল দীর্ঘ আকাক্সিক্ষত। সেটি আজকে স্বার্থক হয়েছে সবার অংশগ্রহণে’। চুয়েটের সহকারী রেজিস্ট্রার ফজলুর রহমান ও জনসংযোগ কর্মকর্তা রাশেদুল ইসলাম বলেন, ‘দীর্ঘ প্রতীক্ষিত এই গোল্ডেন দিনের জন্য সবার অপেক্ষা ছিল। দেশের বিভিন্নস্থানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের পদচারণায় একটি অন্যন্য দিন ও রাত অতিবাহিত হয়েছে’।

প্রসঙ্গত, সুবর্ণজয়ন্তীর জমকালো আয়োজনে ছিল আইইবি চট্টগ্রাম কেন্দ্র থেকে নগরজুড়ে আনন্দ র‌্যালি, সন্ধ্যায় আইইবি চট্টগ্রাম কেন্দ্রে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, রাতে ঐতিহ্যবাহী মেজবান, আইইবি চট্টগ্রাম কেন্দ্র থেকে চুয়েট ক্যাম্পাসে যাত্রা, উদ্বোধনী অনুষ্ঠান, আলোচনা সভা, স্মৃতিচারণ, বর্তমান ও সাবেক শিক্ষার্থীদের সমন্বয়ে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, আমন্ত্রিত শিল্পীদের সাংস্কৃতিক পরিবেশনা, নৈশভোজ, ফায়ারওয়ার্কস, জনপ্রিয় কণ্ঠশিল্পী জেমস ও নগর বাউলের কনসার্টসহ প্রভৃতি। বেলা ১২টায় তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বেলুন ও পায়রা উড়িয়ে এ সুবর্ণজয়ন্তীর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট