চট্টগ্রাম বৃহষ্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪

চুয়েট’র ৪র্থ সমাবর্তন অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রপতি

মানুষের রক্ত শোষণ করে বড়লোক হবেন না

হ আমাদের জ্ঞান ও দক্ষতাকে আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করতে হবে

নিজস্ব সংবাদদাতা হ রাউজান

৬ ডিসেম্বর, ২০১৯ | ৪:৫৫ পূর্বাহ্ণ

প্রকৌশলীগণ উন্নয়নের কারিগর মন্তব্য করে রাষ্ট্রপতি ও চুয়েটের চ্যান্সেলর মো. আবদুল হামিদ বলেছেন, ‘কেবল পুঁথিগত বিদ্যা নয়, দেশ বিদেশের সর্বশেষ তথ্য সম্মৃদ্ধ শিক্ষা, গবেষণা ও সৃজনশীল কর্মকা-ে যাতে শিক্ষার্থীরা সম্পৃক্ত হতে পারে, তার দ্বার উন্মোচন করবে বিশ্ববিদ্যালয়।

তিনি বলেন ছোটকাল থেকে দেখে আসছি-শুনে আসছি, যখন ধানকাটা শুরু হয়, তখন চালের দাম বাজারে কমে যায়। বাংলাদেশে নিয়ম হয়ে গেছে উল্টা। এবার একদিকে কৃষকরা হাহাকার করছে নায্যমূল্য পাচ্ছে না বলে, অপরদিকে যারা মজুদদার তারা কেজিতে দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। এটা খুব দুঃখজনক। চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জে মজুদ করা পেঁয়াজ কর্ণফুলী নদীতে ফেলে দেয়া হয় এবং পেঁয়াজে গাছ গজে যাওয়ার কথা উল্লেখ করে রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘পেঁয়াজ, ধান, চাল মজুদদারদের গণধোলাই নয়, মগজ ধোলাই দিতে হবে। মানুষের রক্ত শোষণ করে রাতারাতি বড় লোক হওয়া ঠিক না। ছাত্র-ছাত্রীদের দেশ গড়া, প্রকৌশলী শিক্ষায় পড়ালেখার পাশাপাশি পবিত্র দায়িত্ব ফরমালিন ও মজুদারদের বিরুদ্ধে এগিয়ে আসা। এমপি, অন্যান্য রাজনীতিবিদ, জনপ্রতিনিধিসহ সবার দায়িত্ব রয়েছে অসাধু ব্যবসায়ীদের মোটিভিশেন করার। ব্যবসার মাধ্যমে মানুষকে ঠকিয়ে খাওয়া কোন ধর্ম বলে না।’ রাষ্ট্রপতি গতকাল (বৃহস্পতিবার) বিকেল সাড়ে তিনটায় বহুল প্রতীক্ষিত ও প্রত্যাশিত চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (চুয়েট)’র ৪র্থ সমাবর্তন অনুষ্ঠানে সভাপতির ভাষণে এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. কাজী শহীদুল্ল­াহ। সমাবর্তন বক্তা ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. এ.কে. আজাদ চৌধুরী। শুভেচ্ছা রাখেন চুয়েটের ভাইস চ্যান্সেলর অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ রফিকুল আলম। মঞ্চে উপবিষ্ট ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরকৌশল অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মো. রবিউল আলম, প্রকৌশল ও প্রযুক্তি অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মো. রেজাউল করিম, স্থাপত্য ও পরিকল্পনা অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মো. মইনুল ইসলাম, তড়িৎ ও কম্পিউটার কৌশল অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ কামরুজ্জামান ও যন্ত্রকৌশল অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. জামাল উদ্দিন আহম্মদ। ধন্যবাদ জ্ঞাপন করে বক্তব্য রাখেন বিশ্ববিদ্যালয় রেজিস্ট্রার (অতিরিক্ত দায়িত্ব) অধ্যাপক ড. ফারুক-উজ-জামান চৌধুরী। উপস্থিত ছিলেন সাবেক মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন এমপি, এ.বি.এম ফজলে করিম চৌধুরী এমপিসহ অনেকে।

অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রপতি আরো বলেন, ‘আগামী ২০৫০ সালে বা ২১০০ সালে বাংলাদেশের উন্নয়ন কেমন হওয়া উচিত বা বাংলাদেশের অবস্থান কোন স্তরে পৌঁছাবে, তা বিবেচনায় রেখেই উন্নয়ন পরিকল্পনা প্রণয়ন করতে হবে। বিশ্বায়নের এই যুগে প্রতিযোগিতায় ঠিকে থাকতে আমাদের জ্ঞান ও দক্ষতাকে আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করতে হবে। তিনি আরো বলেন, প্রকৌশলীদের জ্ঞানের ভিত্তি সুদৃঢ় করতে যুগোপযোগী পাঠক্রম ও উন্নত পাঠদানের ব্যবস্থা থাকতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ তৈরিতে ছাত্র-শিক্ষকদের মাঝে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় থাকা আবশ্যক। চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার মহান উদ্দেশ্য বাস্তবায়নে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখবে এবং একটি জ্ঞানভিত্তিক সমাজ বির্নিমাণে অবদান রাখবে বলে আমার প্রত্যাশা। তিনি ছাত্র-ছাত্রীদের উদ্দেশে বলেন, সমাবর্তন বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য একটি মাইলফলক, একইসাথে তা ¯œাতকদের জন্য একটি স্মরণীয় দিন। জীবনের আসল সংগ্রাম এখন থেকে শুরু। জাতির পিতা বলেছিলেন, স্বাধীনতা সংগ্রামের চাইতে দেশ গড়ার সংগ্রাম বেশি কঠিন। জাতির পিতার এই আহ্বানকে তোমরা বুকে ধরাণ করে দেশ গড়ার কাজে ব্রতী হবে।

এবারের সমাবর্তনে মোট ২২৩১ জনকে ডিগ্রি প্রদান করা হয়। এরমধ্যে স্নাতক রয়েছেন ২১৪৮ জন, মাস্টার্স ৭৯ জন, পোস্ট গ্রাজুয়েট ডিপ্লে­ামা ২ জন এবং পিএইচডি ২ জন। কৃতিত্বপূর্ণ ফলাফলের জন্য উক্ত সমাবর্তনে রাষ্ট্রপতি কর্তৃক চারজনকে ‘গোল্ড মেডেল’ (বিশ্ববিদ্যালয় স্বর্ণপদক) প্রদান করা হয়। স্বর্ণপদক প্রাপ্তরা হলেন ২০১৪-১৫ শিক্ষাবর্ষের ইলেকট্রিক্যাল এন্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থী ই.এম.কে. ইকবাল আহমেদ, ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষের ইলেকট্রিক্যাল এন্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থী রুবায়া আফসার, ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষের ইলেকট্রিক্যাল এন্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থী সঞ্চয় বড়–য়া এবং ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের কম্পিউটার সায়েন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থী মো. রাশেদুর রহমান।

গতকাল রাষ্ট্রপতি সমাবর্তন অনুষ্ঠানে যোগ দেন বিকেল ৩ টায়। ৪ টার পর বক্তব্য শেষে তিনি অনুষ্ঠানের সমাপ্তি ঘোষণা করে অনুষ্ঠাস্থল ত্যাগ করেন। তিনি রাউজান পাহাড়তলীস্থ পিংক সিটি থেকে হেলিকপ্টারে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা হন। এদিকে রাষ্ট্রপতির আগমনকে ঘিরে চুয়েট ক্যাম্পাস ছাড়াও রাউজানের প্রশাসন, বিভিন্ন রাজনীতিক, সামাজিক সংগঠন নানা প্রস্তুতি নেয়। এতে উৎসবমুখর পরিবেশ সৃষ্টি হয়। চট্টগ্রাম শহর থেকে কাপ্তাই সড়কপথে চুয়েট যাওয়ার সময় রাস্তার দুই পাশে দাঁড়িয়ে রাউজানের হাজার হাজার জনতা হাতে জাতীয় পতাকা এবং রাষ্ট্রপতির ছবি সংম্বলিত পতাকা নিয়ে রাষ্ট্রপতিকে স্বাগত জানান। রাষ্ট্রপতির এ আগমনকে ঘিরে সড়কটির দু’পাশ থেকে অবৈধ এবং ভ্রাম্যমাণ স্থাপনা উচ্ছেদ করে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা অভিযান চালানো হয়। দু’পাশের গাছ, স্থাপনাগুলো সাজে নতুন রূপে। গাছ ও স্থাপনাগুলোতে লাগানো হয়েছে গোলাপী-সাদা রঙ। ঝকঝেেক-তকতকে করা হয়েছে কাপ্তাই সড়কের ৮ কিলোমিটার পথ। চুয়েট ক্যাম্পাসজুড়ে ছিল অন্যরকম পরিবেশ। মূল ফটক, চুয়েটের অভ্যন্তর, ভবন, চত্বর, গাছপালা সাজানো হয় ভিন্ন আয়োজন-আমেজে। পথে পথে শোভা পায় রকমারি আলপনা। নানা রঙ্গে রঙিন করে তোলা হয় পুরো ক্যাম্পাস।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট