চট্টগ্রাম শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪

রাতের আঁধারে সরব ভূমিখেকো

কর্ণফুলী নদীর শাহ আমানত সেতু এলাকা হ থামছে না সরকারি জায়গা দখল হ জেলা প্রশাসনের প্রতিবেদন ১৫৮ দশমিক ৪৫ একর হ ভূমি অবৈধভাবে দখল করে স্থাপনা গড়ে উঠেছে।

মুহাম্মদ নাজিম উদ্দিন হ

৫ ডিসেম্বর, ২০১৯ | ৫:৩৯ পূর্বাহ্ণ

কর্ণফুলী নদীর তীর ও জেগে ওঠা চরের খাস জায়গা দখলদারিত্ব থামছে না। নগরীর শাহ আমানত সেতু সংলগ্ন খাস জায়গায় মাটি ফেলে দখল করা হচ্ছে। নদীর তীর দখল করে অবৈধভাবে গড়ে ওঠা ইটভাটার দখলে থাকা জায়গা এখন পুনর্দখল করা হচ্ছে। অভিযোগ রয়েছে, নগর আওয়ামী লীগের এক নেতা রাতের আঁধারে মাটি ফেলে দখলের পাঁয়তারা করছে।

কর্ণফুলী নদীর ড্রেজিং প্রকল্পের মাটি ভরাট করে বাকলিয়ার বাস্তুহারা ও শাহ আমানত সেতু এলাকা জুড়ে শত শত একর সরকারি জায়গা অবৈধভাবে দখল করে নিয়েছে ভূমিখেকোরা। ২০১২ সালে ড্রেজিং প্রকল্পের ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের মালিক জাফর আলম ও বিএনপি নেতা আসলাম চৌধুরী (বর্তমানে কারাবন্দী) নদীর তীর দখল করে গড়ে তুলেছেন প্যাসিফিক মেরিন সার্ভিস অটো গ্রিন ব্রিকস্ নামের ইটভাটা। ড্রেজিং মাটি ও বালু ফেলার অনুমতি নিয়ে ২২ দশমিক ১৪ একর জায়গার উপর এই ইটভাটা নির্মাণ করা হয়েছে। ২০১৪ সালে তৎকালীন ভূমি প্রতিমন্ত্রী (বর্তমানে ভূমিমন্ত্রী) সাইফুজ্জামান জাবেদের নেতৃত্বে ভ্রাম্যমাণ অভিযান চালিয়ে সেই ইটভাটা বন্ধ করে দিয়েছেন।

সরেজমিন দেখা যায়, ব্রিক ফিল্ড লাগোয়া জায়গায় কর্র্র্র্ণফুলী নদীর ড্রেজিং প্রকল্পের নানা সরঞ্জাম রয়েছে। জেনারেটর, গার্ডার, ভয়াসহ নানা ধরনের যন্ত্রপাতি ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে এলাকা জুড়ে। আশপাশ এলাকায় ব্রিক ফিল্ড ও ড্রেজিং প্রকল্পের মালামাল অকেজো অবস্থায় পড়ে রয়েছে। ভাটার উত্তর দিকে দেয়াল দিয়ে ঘেরা জায়গায় মাটি ফেলে বিশাল স্তূপ করা হয়েছে। আর মাটির নিচে চাপা পড়ছে নানা সরঞ্জাম। এছাড়াও শাহ আমানত সেতু সংলগ্ন ব্রিক ফিল্ড এলাকায় গর্ত করে মাটি কাটা হয়েছে।

হাইকোর্টের নির্দেশে জেলা প্রশাসন চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে কর্ণফুলী নদীর অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ কার্যক্রম শুরু করেছিল। সদরঘাট, মাঝিরঘাট এলাকায় দুই দফায় উচ্ছেদ অভিযান চালানোর পর বন্ধ হয়ে যায় উচ্ছেদ কার্যক্রম। বন্দর কর্তৃপক্ষও লালদিয়ার চর এলাকায় অভিযান চালিয়ে বিপুল পরিমাণ অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করেছে। এরপর থেকে উচ্ছেদ অভিযান আর গতি পায়নি।
জেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, সদরঘাট, চাক্তাই ও রাজাখালী এলাকায় অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। সীমানাও নির্ধারণ করা হয়েছিল। কিন্তু অর্থাভাবে অভিযান চালানো হয়নি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মোহাম্মদ দেলোয়ার হোসেন পূর্বকোণকে জানান, ‘সরকারি খাস জায়গা দখলের কোন সুযোগ নেই। কাল (আজ বৃহস্পতিবার) এসি ল্যান্ড পাঠিয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
স্থানীয়রা জানায়, রাতে আঁধারে ট্রাক ও স্কেভেটর দিয়ে মাটি ফেলা হচ্ছে। ড্রেজিং প্রকল্পের কাজ বন্ধ থাকার পর থেকে এসব সরঞ্জাম ছড়িয়ে ছিটিয়ে নদীর তীরে পড়ে রয়েছে। অনেক সরঞ্জাম অকেজো হয়ে পড়েছে। ব্রিক ফিল্ড ও ড্রেজিং সরঞ্জাম রেখে নদীর তীরের কমপক্ষে একশ একর সরকারি জায়গা এখনো বিএনপি নেতা আসলাম চৌধুরীর দখলে রয়েছে। ড্রেজিং ও ব্রিক ফিল্ড বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর সরকারি খাস জায়গার দখল-বেদখল চলে আসছে দীর্ঘদিন ধরে। ড্রেজিং মাটিতে ভরাট করে চাক্তাই-রাজাখালী, বাকলিয়ার ক্ষেতচর এলাকায় গড়ে উঠেছে শত শত অবৈধ বস্তিঘর, ব্যবসা

প্রতিষ্ঠান।

জানা যায়, ২০১১ সালে কর্ণফুলী নদী ড্রেজিং কাজ শুরু হয়। বন্দর কর্তৃপক্ষ জেলা প্রশাসন থেকে ড্রেজিং মাটি ও বালু ফেলার জন্য সরকারি খাস জায়গা ব্যবহারের অনুমতি নেয়। তবে শর্ত ছিল, এ বালু নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে সরিয়ে ফেলতে হবে। উপরন্তু সরকারের সঙ্গে করা শর্ত ভঙ্গ করে ড্রেজিং বালু ও মাটি দিয়ে নদীর তীর ভরাট করে গড়ে উঠে শত শত অবৈধ স্থাপনা। সেই দখলদারিত্ব এখনো থামানো যায়নি।

জেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, ২০১৫ সালে জেলা প্রশাসনের রাজস্ব বিভাগ বাকলিয়া বাস্তুহারা ও শাহ আমানত সেতু এলাকায় দখলদারের পরিমাপ করে। তৎকালীন সদর সার্কেলের সহকারী কমিশনার (ভূমি) মোহাম্মদ সামিউল মাসুদ প্রতিবেদন জমা দেন। প্রতিবেদনে উল্লেখ ছিল, কর্ণফুলীর তীরে মোট ১৫৮ দশমিক ৪৫ একর ভূমি অবৈধভাবে দখল করে স্থাপনা গড়ে উঠেছে। এরমধ্যে ৫০ দশমিক ৬৪০০ একর সরকারি ভূমি নিয়ে মামলা আছে। বাকি ভূমি নিয়ে মামলা নেই। স্থানীয়ভাবে ১৫৮ একর ভূমির মূল্য দুই হাজার ৩৭০ কোটি টাকা বলে জানা যায়।

২০১৫ সাল থেকে জেলা প্রশাসন কর্ণফুলী নদীর অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের উদ্যোগ নিয়েছিল। একাধিকবার লাল পতাকা টাঙিয়ে সীমানাও নির্ধারণ করেছিল। কিন্তু অদৃশ্য কারণে বার বার পিছু হটেছে জেলা প্রশাসন। কর্ণফুলী নদীর তীর ও জেগে ওঠা চর দখল-বেদখলের মহোৎসব চলে আসছে।
পুলিশ সদর দপ্তরে পাঠানো পুলিশের এক গোয়েন্দা প্রতিবেদনে উল্লেখ ছিল, ১৮৯২ সালের সিএস খতিয়ান অনুযায়ী চর চাক্তাইয়ের এসব জমি বিভিন্ন ব্যক্তির নামে ছিল। পরে ১৯২৮ সালের আরএস খতিয়ানে ওই সম্পত্তি খাস খতিয়ানভুক্ত হয়। কারণ এর আগে এখানকার জমি নদী ভাঙনে বিলীন হয়েছিল। এরপর আবার কর্ণফুলীর নদীতে চর জেগে উঠতে শুরু করলে ওই জমি বিভিন্ন ব্যক্তির দখলে চলে যায়। সিএস খতিয়ানভুক্ত মালিকদের ওয়ারিশ দাবি করে অনেকেই আদালতে মামলা দায়ের করেন। অনেকেই আবার ওয়ারিশদের নামে কাগজ সংগ্রহ করে দখল করে নিয়েছে।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট