চট্টগ্রাম বৃহষ্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪

চবিতে পাল্টাপাল্টি মামলায় আসামি ৩৬ নেতাকর্মী

ছাত্রলীগের সংঘর্ষের ঘটনা

নিজস্ব সংবাদদাতা হ চবি

৫ ডিসেম্বর, ২০১৯ | ৫:৩৯ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি) ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের সংঘর্ষের ঘটনায় উভয়পক্ষের ৩৬ জনকে আসামি করে মামলা দায়ের করা হয়েছে। সংঘর্ষে জড়ানো দুটি গ্রুপ ভিএক্স ও সিএফসি পাল্টাপাল্টি এই মামলা দুইটি দায়ের করেন। এর মধ্যে সিএফসি বাংলাদেশ সরকারের শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল ও ভিএক্স নগরীর সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীনের অনুসারী হিসেবে ক্যাম্পাসে পরিচিত।

গতকাল বুধবার বিকেলে মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেন হাটহাজারী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাসুদ আলম। তিনি বলেন, উভয়পক্ষ মামলা করেছে। আইন অনুযায়ী পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

সিএফসির পক্ষ থেকে ২১ জনকে আসামি করে নাছির উদ্দীন সুমন বাদি হয়ে একটি মামলা করেছেন। এমামলায় আসামিরা হলেন ইংরেজি বিভাগের ২০০৯-১০ শিক্ষাবর্ষের মিজানুর রহমান বিপুল, ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের ২০১০-১১ শিক্ষাবর্ষের প্রদীপ চক্রবর্তী দুর্জয়, যোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের ২০১২-১৩ শিক্ষাবর্ষের সাদেক হোসেন টিপু, একই শিক্ষাবর্ষের গণিত বিভাগের নাজমুল সামির, চারুকলা বিভাগের ২০১৩-১৪ শিক্ষাবর্ষের আনোয়ার হোসেন শুভ, একই শিক্ষাবর্ষের রায়হান রেজা, রাজনীতি বিজ্ঞান বিভাগের আশিকুর রহমান রনি ও শামিম আজম, লোকপ্রশাসন বিভাগের এরদোগান আলী, ইতিহাস বিভাগের এমাদ উদ্দিন, সংস্কৃত বিভাগের হামিদ খান ও আল ফয়সাল খান, ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষের মাসুদ রানা, একই শিক্ষাবর্ষের লোকপ্রশাসন বিভাগের আই কে শাকিল ও ইমরান বিন হোসাইন ইমু, ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের সালাউদ্দিন কাদের রনি, নৃ-বিজ্ঞান বিভাগের ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষের আল আমিন শান্ত, একই শিক্ষাবর্ষের লোকপ্রশাসন বিভাগের জোবায়ের বিন হাসান ও শিহাব তামিম, ইতিহাস বিভাগের মনছুর আবেদীন এবং বাংলাদেশ স্টাডিজ বিভাগের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের কায়সার মাহমুদ।

অন্যদিকে ভিএক্স গ্রুপের নেতা জাহিদ হাসান বাদি হয়ে ১৫ জনকে আসামি করে আরেকটি মামলা দায়ের করেছেন। এই মামলার আসামিরা হলেন, জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ২০১২-১৩ শিক্ষাবর্ষের আবদুল্লাহ আল নাহিয়ান রাফি, মৃত্তিকা বিজ্ঞান বিভাগের ২০০৯-১০ সংঘর্ষের সুমন নাছির, ভূগোল ও পরিবেশবিদ্যা বিভাগের ২০১৪-১৫ শিক্ষাবর্ষের আশরাফুল আলম, একই শিক্ষাবর্ষের মো. আরিফ, কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষের ফখরুল ইসলাম,

একই শিক্ষাবর্ষের সাফায়েত হোসেন, ইইই বিভাগের ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষের মো. শাফি, একই শিক্ষাবর্ষের ইতিহাস বিভাগের অভি, রাজনীতি বিজ্ঞান বিভাগের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের মো. সৈকত, একই শিক্ষাবর্ষের ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের আরিফ আকন্দ, ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের মো. শান্ত, একই শিক্ষাবর্ষের লোকপ্রশাসন বিভাগের মো. শাওন, কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের তানজিল আহমেদ, ফারসি বিভাগের হৃদয় বর্মণ এবং ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের অর্ক।

এ বিষয়ে ভিএক্স গ্রুপের নেতা ও চবি ছাত্রলীগের সাবেক উপ-দফতর সম্পাদক মিজানুর রহমান বিপুল বলেন, ‘আমাদের বিরুদ্ধে যে মামলা করা হয়েছে। সেটার সম্পর্কে আমরা সম্পৃক্ততা নাই। সেটা তাদের সাথে এলাকাবাসীর সঙ্গে ঝামেলা। এই ঝামেলার সঙ্গে যারা জড়িত পুলিশ তদন্ত করে তাদের বের করবে। আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিস্থিতি অস্থিতিশীল করতে চাই না। কিন্তু বারবার রেজাউল হক রুবেলের নেতৃত্বে ও কিছু শিক্ষকের মদদে পরিস্থিতি অস্থিতিশীল করার জন্য এই ঝামেলা করছে।’

শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি ও সিএফসি গ্রুপের নেতা রেজাউল হক রুবেল বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ে যারা অস্ত্রবাজি করবে, মারামারি করবে তাদের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও পুলিশকে জানানো হয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে এসব অপরাধীদের বিরুদ্ধে প্রশাসন ব্যবস্থা নিচ্ছে না। এ কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ে বারবার এ ধরনের ঘটনা ঘটছে। বিগত দিনে যেসব ঘটনা ঘটেছে তদন্ত করে প্রকৃত দোষীদের গ্রেপ্তার করা উচিৎ।’

প্রসঙ্গত, গত ২৮ নভেম্বর রাত টেলিভিশন রুমে মিটিং করাকে কেন্দ্র করে ছাত্রলীগের দুইটি গ্রুপ ভিএক্স ও সিএফসির মধ্যে হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। এ ঘটনার জের ধরে টানা তিন দিন পাঁচনার সংঘর্ষে জড়ায় গ্রুপ দুইটি। এর মধ্যে গত ১ ডিসেম্বর বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের বাইরে হাটহাজারী থানার এগারো মাইল এলাকায় ছাত্রলীগ নেতা নাসির উদ্দিন সুমন ও আব্দুল্লাহ আল নাহিয়ান রাফিকে কুপিয়ে জখম করা হয়। ঘটনার পরপরেই সিএফসি গ্রুপ এর পেছনে ভিএক্স গ্রুপের নেতাকর্মীরা জড়িত বলে দাবি করে। একইদিন অপরাধীদের বিচারের দাবিতে ক্যাম্পাসে অনির্দিষ্টকালের জন্য অবরোধের ডাক দেয় সিএফসি গ্রুপ। তবে বৃহস্পতিবার (৫ ডিসেম্বর) রাষ্ট্রপতি মো. আব্দুল হামিদের চট্টগ্রামে সফর উপলক্ষে এই কর্মসূচি তিনদিনের জন্য শিথিল করা হয়। এরপর গত মঙ্গলবার ৩৫ জনকে আসামি করে পাল্টাপাল্টি মামলা করে গ্রুপ দুইটি।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট