চট্টগ্রাম শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

জরাজীর্ণ পটিয়া আদালত ভবন

১৩৭ বছরের পুরোনো ঝুঁকিপূর্ণ ঘরে বসে বিচার কাজ

টিনের ছাউনির ছিদ্র দিয়ে বর্ষায় পানি ঢুকে নষ্ট হয় নথি। বর্তমানে সাত কোর্টে মামলা প্রায় ৩০ হাজার।

হারুনুর রশিদ ছিদ্দিকী, পটিয়া

৫ ডিসেম্বর, ২০১৯ | ৪:৪৮ পূর্বাহ্ণ

বৃটিশ আমালে নির্মিত দক্ষিণ চট্টগ্রামের একমাত্র যুগ্ম জেলা ও দায়রা আদালত ভবন জরাজীর্ণ হয়ে পড়েছে। টিনশেড ছাউনি, বাঁশের বেড়ার ১৩৭ বছরের আদালত ভবনটিতে দীর্ঘদিন ধরে জরাজীর্ণ ও ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় বিচারকসহ কর্মকর্তা-কর্মচারীরা কাজ করছেন।

১৮৮২ সালে চৌকি আদালত চালু করা হয়। আদালতটির ৬ তলাবিশিষ্ট ভবন নির্মাণের জন্য সাম্প্রতিক সময়ে ২১ কোটি টাকা বরাদ্দ হলেও পরবর্তীতে এই বরাদ্দ বাতিল করা হয়। প্রশাসনিক জটিলতা ও বিচার বিভাগের কিছু ভুল ত্রুটির কারণে পটিয়া যুগ্ম জেলা জজ আদালতের ৬ তলা ভবনটির বরাদ্দ বাতিল হয়। নতুন ভবনের জন্য আইনজীবীরা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।

জানা গেছে, ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের সূতিকাগার এই পটিয়ায় ব্যবসা-বাণিজ্য, শিল্প-সাহিত্য, শিক্ষা-সংস্কৃতি ও রাজনীতিতে ঐতিহ্য রয়েছে। কিন্তু পৌর সদরের প্রাণকেন্দ্রের আদালত ভবন, রাস্তাসহ অসংখ্য সমস্যায় জর্জরিত। ১৯৮৫ সালে গণপূর্ত বিভাগ জরাজীর্ণ আদালত ভবনটি পরিত্যক্ত ঘোষণাও করেছিলো। পরবর্তীতে ১৯৯১ সালে বিএনপি সরকারের আমলে তৎকালীন আইনমন্ত্রী মির্জা হাফিজ উদ্দিন ৬ কোটি টাকা ব্যয়ে আদালত ভবন নির্মাণের উদ্যোগ নিলেও ওই সময়ের যোগাযোগ মন্ত্রী কর্নেল অলি আহমদ (বীরবিক্রম) ওই বরাদ্দ বাতিল করেন বলে অভিযোগে প্রকাশ।
আদালতের ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া ১১ হাজার ভোল্টের বিদ্যুৎ লাইন, টিনের ছাউনির ছিদ্র দিয়ে প্রতি বর্ষা মৌসুমে বৃষ্টির পানি ঢুকে নথি নষ্ট হচ্ছে। বর্তমানে ছয়টি কোর্টে প্রায় ৩০ হাজার মামলা রয়েছে। ছয় বিচারকের মধ্যে রয়েছেন ৪ জন। ফলে বিচারপ্রার্থীরা নানাভাবে হয়রানি ও ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন।

আদালত ও বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, পটিয়াসহ মোট সাতটি আদালতের মধ্যে পটিয়া প্রথম, দ্বিতীয়, অতিরিক্ত আদালত এবং বোয়ালখালী, চন্দনাইশ, আনোয়ারা ও কর্ণফুলী আদালতে বর্তমানে প্রায় ৩০ হাজার মামলা বিচারাধীন। সাত কোর্টে চারজন বিচারক রয়েছেন। বিচারকের এজলাস, চেম্বার, বাসভবন সমস্যা দীর্ঘদিনের। ২০১০ সালে তৎকালীন প্রধান বিচারপতি ও পটিয়া পৌর সদরের সুচক্রদ-ী গ্রামনিবাসী ফজলুল করিমকে পটিয়া আইনজীবী সমিতির এক সংবর্ধনা প্রদানকালে পটিয়া আদালতের বহুতল ভবন নির্মাণের প্রতিশ্রুতি দেন। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় থেকে ৬ তলাবিশিষ্ট প্রায় ২১ কোটি টাকা বরাদ্দ দিলেও অদৃশ্য কারণে অর্থ মন্ত্রণালয় ফাইল আটকে রাখে। যার কারণে ৬ তলা বিশিষ্ট ভবন নির্মাণের কাজ আর শুরু করা যায়নি। তবে পটিয়ার সংসদ সদস্য ও হুইপ সামশুল হক চৌধুরী বিভিন্ন সময় আইনজীবীদের পটিয়া আদালত ভবন নির্মাণের ব্যাপারে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন বলে আইনজীবীরা জানান।

পটিয়া যুগ্ম ও দায়রা জজ আদালতের আইনজীবী সমিতির সভাপতি দীপক কুমার শীল জানিয়েছেন, আদালতের টিন শেড ছিদ্র হয়ে বৃষ্টির পানি পড়ার কারণে মামলার নথি নষ্ট হচ্ছে। বিচারকদের খাসকামরা, চেম্বার, বাসভবন, রাস্তা ও আদালত ভবনসহ বাউন্ডারি ওয়াল না থাকায় বিচারক, আইনজীবী ও আদালতের সংশ্লিষ্টরা নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছেন। পটিয়ার কৃতী সন্তান সাবেক প্রধান বিচারপতি ফজলুল করিম ৬ তলা বিশিষ্ট একটি ভবনের জন্য অর্থ বরাদ্দ দিলেও পরবর্তীতে অর্থ মন্ত্রণালয় সম্পূরক বাজেটে দ্বিতল ভবনের জন্য ১০ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়ে ভবনের টেন্ডার প্রক্রিয়া শুরু করে। কিন্তু তাও অদৃশ্য কারণে বাতিল করা হয়েছে। জরাজীর্ণ ও ঝুঁকিপূর্ণ আদালত ভেঙে বহুতল একটি ভবন অতীব জরুরি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে রাস্তাঘাট, ব্রিজ-কালভার্ট থেকে শুরু করে বিভিন্ন উন্নয়ন কাজ করছেন। ১৩৭ বছরের পুরনো ঐতিহ্যবাহী পটিয়া আদালতে বহুতল ভবন নির্মাণের জন্য আইনজীবীরা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।

চট্টগ্রাম-১২ (পটিয়া) আসনের সংসদ সদস্য ও জাতীয় সংসদের হুইপ সামশুল হক চৌধুরী জানিয়েছেন, নতুন আদালত ভবন নির্মাণের জন্য ২১ কোটি টাকা বরাদ্দ হলেও পরবর্তীতে তা বাতিল করা হয়েছে।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট