চট্টগ্রাম মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল, ২০২৪

গ্রিন ও ক্লিন সিটি গড়ার কাজ করে যাচ্ছি

সিটি মেয়রের মিট দ্য প্রেস গণপরিবহন সংকট কাটাতে জানুয়ারি থেকে ১০০ এসি বাস কর আদায় বৃদ্ধি করতে না পারলে সামনের সময় কঠিন বিমানবন্দর সড়ক চার লেনে উন্নীত করার প্রকল্প নিয়েছি

নিজস্ব প্রতিবেদক

৪ ডিসেম্বর, ২০১৯ | ৪:৪৮ পূর্বাহ্ণ

সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন বলেছেন, ‘আমার দায়িত্বের চার বছরে নগরীতে প্রায় ছয় হাজার কোটি টাকার উন্নয়ন কাজ হয়েছে যা আগের দুই দশকেও হয়নি। নির্বাচনী ইশতেহারকে সামনে রেখে গ্রিন ও ক্লিন সিটি গড়ার কাজ করে যাচ্ছি। আমাদের সফল হতেই হবে। সত্যিকারের ক্লিন সিটি করতে হবে। জনগণকে সচেতন করতে সক্রিয়, বলিষ্ঠ ও কার্যকর ভূমিকা পালন করতে পারে গণমাধ্যম।’

গতকাল মঙ্গলবার আন্দরকিল্লাস্থ নগর ভবনে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের বর্তমান নির্বাচিত পরিষদের চার বছরের উন্নয়ন কর্মকা- তুলে ধরার লক্ষ্যে আয়োজিত মিট দ্য প্রেসে সিটি মেয়র এ কথা বলেন। এ সময় চসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সামশুদ্দোহা, প্রধান প্রকৌশলী লে. কর্নেল সোহেল আহমেদ, প্রধান নগর পরিকল্পনাবিদ এ কে এম রেজাউল করিম, প্রধান শিক্ষা কর্মকর্তা সুমন বড়ুয়া, মেয়রের একান্ত সচিব আবুুল হাশেম, কাউন্সিলর আবিদা আজাদ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
নিজের কাজের মূল্যায়ন প্রসঙ্গে মেয়র বলেন, ‘ব্যক্তিগতভাবে যদি আমাকে বলতে হয়, আমি বলব- আমি সফল। তবে আমি কি বললাম, সেটা বড় বিষয় নয়। জনগণই বিচার করার মালিক। তবে সফলতা-ব্যর্থতা বিচার-বিশ্লে­ষণ করার আগে দেখতে হবে আমরা দায়িত্ব নেয়ার আগে নগরবাসী কতটুকু সেবা পেয়েছে এবং এখন কতটুকু পাচ্ছেন। সেবার মান ও পরিধি কতটুকু বেড়েছে তাও বিচার করতে হবে।’

তিনি বলেন, ডোর টু ডোর ময়লা আবর্জনা সংগ্রহ করার লক্ষ্যে ৯ লাখ ছোট বিন ও ৩৪৩০টি বড় বিন বিভিন্ন বাসা বাড়ি, শিক্ষা ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠানে দেয়া হয়েছে। নগরের আকাশ ঢেকে রাখা ৪ হাজার বিলবোর্ড অপসারণ করা হয়েছে। নিজস্ব অর্থায়নের পাশাপাশি আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে নগরের সৌন্দর্যবর্ধনে করা হচ্ছে।
কর প্রসঙ্গে বলেন, কর্পোরেশনের একমাত্র আয়ের উৎস গৃহকর ও রেট আাদায়। কর প্রদানে জনগণের গড়িমসি নিতান্ত হতাশাজনক। উন্নয়ন প্রকল্পে সরকারের কাছে আমাদের ৭৮১ কোটি টাকা ম্যাচিং ফান্ড ও প্রায় ২০ কোটি টাকা রিফান্ড মানি বাবদ দেনা পড়ে আছে। আগামী জুনের মধ্যে দেনা পরিশোধের সময়সীমা বেঁধে দিয়েছে। পরিশোধ করতে না পারলে উন্নয়ন খাতে সরকারি সহযোগিতাও বন্ধ হয়ে যেতে পারে। এক্ষেত্রে একমাত্র আশা কর আদায়। কর আদায় বৃদ্ধি করতে না পারলে সামনের সময় অনেক কঠিন হবে।
ধূলা দুষণ প্রসঙ্গে বলেন, ‘ব্যাপক উন্নয়ন কর্মকা- হচ্ছে। সেবা সংস্থাগুলো ছাড়াও নগরবাসীর অনেকেও নির্মাণকাজ করছেন। সবাই নির্মাণ সামগ্রী উন্মুক্ত স্থানে রাখছেন। এজন্য বায়ু দূষণ বাড়ছে। এটা সহনীয় পর্যায়ে রাখতে সবাইকে দায়িত্ব নিয়ে কাজ করার আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘ম্যাজিস্ট্রেটকে বলা হয়েছে, সময় বেঁধে দিতে। এর মধ্যে নির্মাণ সামগ্রী না সরালে জরিমানা করা হবে।’

মশার ওষুধ ছিটানো প্রসঙ্গে বলেন, ব্যাপকভাবে মশার ওষুধ ছিটানো খুবই ব্যয়বহুল। এজন্য প্রয়োজনীয় টাকা চসিকের নেই। তাছাড়া মশার ওষুধ ব্যাপকভাবে ছিটানো হলে শরীরে বিভিন্ন ধরনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা যাওয়ার আশক্সকাও থেকে যায়।
খেলার মাঠ প্রসঙ্গে মেয়র বলেন, মাঠের সংকট রয়েছে। যেসব মাঠ আছে তা মেলাসহ নানা অনুষ্ঠানের জন্য বরাদ্দ দিতে হয়। ইচ্ছের বিরুদ্ধেও অনেক সময় মাঠ ব্যবহারের অনুমতি দিতে হয়।

মেয়র জানান, নগরীর ১ হাজার ৩৭৫টি খোলা ডাস্টবিন থেকে ৮২৫টি অপসারণ করা হয়েছে। নগরবাসীর সংখ্যা ও বেড়েছে বর্জ্য বেড়েছে। জনদুর্ভোগ লাঘবে দিনের পরিবর্তে রাতে বর্জ্য অপসারণ করছি। ৯ লাখ বিন বিতরণ করেছি। ১৯৭২ জন পরিচ্ছন্ন শ্রমিক নিয়োগ দিয়েছি। ১২৫৬ কোটি টাকা ব্যয়ে ৭ ফুট প্রস্থ, ২ দশমিক ৯ কিলোমিটার দীর্ঘ বারইপাড়া থেকে কর্ণফুলী নদী পর্যন্ত নতুন খাল খননের কাজ চলছে। ভূমি মালিকদের তিনগুণ ক্ষতিপূরণ দেয়া হচ্ছে।
এস আলম গ্রুপের মাধ্যমে নগরীতে গণপরিবহন সংকট কাটাতে তিন রঙের ১০০ এসি বাস চালু করা হচ্ছে। আশা করি জানুয়ারিতে ৩ রুটে এসব বাস চালু হবে। স্টপেজের জায়গা চিহ্নিত করা হচ্ছে। অপরিকল্পিত নগরায়ণের কুফল নগরবাসী ভোগ করছেন জানিয়ে মেয়র বলেন, নাজুক পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে বিমানবন্দর সড়ক চার লেনে উন্নীত করার প্রকল্প নিয়েছি। এখানে বন্দরের জমি লিজ নিয়ে অনেক স্থাপনা গড়ে তোলা হয়েছে। যা সরানো কঠিন কাজ। সিমেন্ট ক্রসিং পর্যন্ত দুই পাশে ড্রেন তৈরি করা হচ্ছে। জাইকার অর্থায়ন ও ডিজাইনে হচ্ছে পোর্ট কানেকটিং ও এক্সেস রোডের কাজ। নিমতলা থেকে অলংকার পর্যন্ত ৬ দশমিক ২ কিলোমিটার পোর্ট কানেকটিং সড়ক। এক্সেস রোডের কাজে এলইডি লাইটিং অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। আরাকান সড়কের কাজ ১২টি লটে চলমান আছে। কম সময়ে ডিসেম্বরের মধ্যে সম্পন্ন করার লক্ষ্যে কাজ চলছে। পোর্ট কানেকটিং সড়কের কাজ শেষ করতে আরও সময় লাগবে। কাজগুলো নিবিড়ভাবে মনিটরিং করা হচ্ছে। তিনি জানান, নগরীর ৯৫২ কিমি সড়ক বা ৮০ ভাগ আলোকায়ন করা হয়েছে। ১৩০৪ কিমি সড়কে ৬৪ হাজার ৬৮৩টি এলইডি বাতি স্থাপন করা হচ্ছে। এনার্জি বাতি ১১০২৩টি থেকে ১৫২৭৩টিতে, এলইডি বাতি ১০০টি থেকে ৪০৪০টিতে, মেটাল হ্যালাইড ১৭৫টি থেকে ১৯১টিতে উন্নীত করা হয়েছে। ৩৩২৯৪টি টিউবলাইট থেকে কমিয়ে ৩০৩৪৫টিতে আনা হয়েছে।
তিনি বলেন, নিউমার্কেট মোড়ে হকাররা ক্রেতা পাচ্ছেন বলে বসছে। হকার নেতাদের যতগুলো বৈঠক করেছি তার সময় একসাথে যোগ করলে ১০০ ঘণ্টার উপরে হবে। কিন্তু পুলিশের অভাবে আমাদের ম্যাজিস্ট্রেট সব সময় অভিযান চালাতে পারেন না। তাছাড়া ম্যাজিস্ট্রেট আছেন মাত্র একজন। তিনি কয় দিকে যাবেন?
কাজীর দেউড়ি শিশুপার্ক প্রসঙ্গে মেয়র বলেন, সেনাবাহিনী জায়গাটি শিশুপার্ক করার জন্য চসিককে দিয়েছিল। শিশুপার্ক কর্তৃপক্ষের সঙ্গে চসিকের চুক্তিটা নবায়নযোগ্য। তাদের আধুনিক রাইডের শর্ত দিয়েছি। ৫০ কোটি টাকা ব্যয়ে তারা আধুনিক রাইড সংগ্রহ করছে। আগ্রাবাদ শিশুপার্ক নিয়ে মামলা চলছে। এ ছাড়া সাড়ে তিন শতাধিক মামলা চলছে বিভিন্ন বিষয়ে।

সিটি মেয়র বলেন, সিটি কর্পোরেশনের সমস্যা এবং বিভিন্ন সেবা না পেলে জানাতে পারেন ১৬১০৪ হটলাইন নম্বরে। সিটি কর্পোরেশনের বিভিন্ন ধরণের অসংগতি ও নগরের বিভিন্ন দুর্ভোগ, অভিযোগ ও পরামর্শ জানাতে ১৬১০৪ নম্বরে কল করতে অনুরোধ জানিয়ে বলেন, কোনো এলাকায় যদি ডোর টু ডোর কর্মসূচির কর্মী না যায় তাহলে তা মেয়রের পক্ষে জানা সম্ভব নয়। যদি হটলাইনে ফোন করে অভিযোগ জানানো হয় তাহলে তিনি ব্যবস্থা নিতে পারেন।

মেয়র বলেন, নগরীর সেবা প্রদানকারী সরকারি বিভিন্ন সংস্থার উন্নয়ন কার্যক্রমে সিটি কর্পোরেশন সার্বিক সহযোগিতা দিয়ে যাচ্ছে। এছাড়াও নগরীর উন্নয়নের স্বার্থে বিভিন্ন ধরনের উন্নয়নমূলক কর্মকা- অন্যান্য নাগরিক সেবা প্রদানকারী সরকারি সংস্থার মাধ্যমে প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। যার মধ্যে রয়েছে কন্টেইনার টার্মিনাল নির্মাণের জন্য চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে প্রকল্প বাস্তবায়নের উদ্যোগ গ্রহণ এবং মেট্রোরেল প্রকল্প বাস্তবায়নে নিজস্ব অর্থায়নে পরামর্শক প্রতিষ্ঠান নিয়োগের মাধ্যমে প্রাক-সম্ভাব্যতা যাচাই সম্পন্ন করাসহ দীর্ঘ মেয়াদী কিছু প্রকল্প।

সিটি মেয়রের নেতৃত্বে গত চার বছরে চসিকের প্রকৌশল বিভাগ, পরিচ্ছন্নতা বিভাগ, নগর পরিকল্পনা, সচিবালয় বিভাগ, শিক্ষা বিভাগ, স্বাস্থ্য বিভাগ, রাজস্ব বিভাগ, বীর মুক্তিযোদ্ধাদের কল্যাণে গৃহীত ও বাস্তবায়িত বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট