চট্টগ্রাম শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪

ট্রাফিকের পাইলট প্রকল্পকে বৃদ্ধাঙ্গুলি

আল-আমিন সিকদার

৩ ডিসেম্বর, ২০১৯ | ৪:৪১ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রামের যাত্রীদের সেবা নিশ্চিত করতে ‘পাইলট প্রকল্প’ গ্রহণ করে নগর ট্রাফিক বিভাগ। যেখানে যাত্রীসেবা নিশ্চিত করতে প্রতিটি রুটের বাসকে শেষ গন্তব্যে যাওয়ার পাশাপাশি বাধ্য করা হয় নির্ধারিত ভাড়াসহ টিকিট ব্যবস্থা রাখতে। শুধু তাই নয়, নির্ধারিত স্থান ছাড়া অন্য কোথাও বাসকে দাঁড়ানোর সুযোগ দেয়া হবে না। বাস চালকের থাকতে হবে নির্ধারিত পোশাক। এছাড়া ড্রাইভিং লাইসেন্স ছাড়া গাড়ি নিয়ে বের হওয়ার সুযোগ তো থাকছেই না। আর এসব পদক্ষেপ অনুসরণ করা হচ্ছে কি না তা মনিটরিং করবে পুলিশ।

কিন্তু এ উদ্যোগ গ্রহণের প্রায় দুই মাস পার হয়ে গেলেও নিশ্চিত হয়নি যাত্রীসেবা। প্রথমদিকে কিছুটা নিয়ম মেনে চললেও এখন শুধুমাত্র মনিটরিং টিমের কাছে ‘হাজিরা’ দিতেই শেষ গন্তব্যে যায় বাসগুলো। হাজিরা শেষে হলেই শুরু হয়ে যায় বাড়তি ট্রিপের মাধ্যমে অধিক টাকা আয়ের প্রতিযোগীতা। মাঝ পথে বাস ঘুরিয়ে দেয় চালকরা। গত একসপ্তাহের ট্রাফিক বিভাগ থেকে পাওয়া শেষ গন্তব্যে পৌঁছানো গণপরিবহনের তথ্য এমনটাই বলছে।

ট্রাফিকের তথ্য মতে, চালকদের মাঝপথে বাস ঘুরিয়ে দেয়া বন্ধ করতে কালুরঘাট, টাইগারপাস, লালদিঘি ও সি-বিচ মোড়ে বসানো হয়েছে পুলিশের মনিটরিং টিম। যেখানে উপস্থিত ট্রাফিক সার্জেন্টের কাছে গিয়ে স্বাক্ষর নিতে হয় প্রতিটি রুটে চলাচলকারী বাসগুলোকে। কালুরঘাটের ট্রাফিক পরিদর্শকের দেয়া তথ্য মতে, গত ২৪ নভেম্বর সি-বিচ টু কালুরঘাটে অর্থাৎ ১০ নম্বর রুটে চলাচলকারী বাসের ট্রিপ সংখ্যা ছিল ১৬৮টি। নিয়ম অনুসারে ১০ নম্বর রুটে চলাচলকারী বাসের শেষ গন্তব্যে অর্থাৎ কালুরঘাটেও এ ট্রিপ সংখ্যা সমান থাকার কথা। অথচ কালুরঘাটে ১৪৮টি পৌঁছে বলে জানান সংশ্লিষ্ট ট্রাফিক পরিদর্শক। সি-বিচ মোড়ে দায়িত্বরত ট্রাফিক পরিদর্শক জানান, গত ২৪ নভেম্বর সি-বিচ মোড়ে দায়িত্বরত ট্রাফিক সদস্যের স্বাক্ষর নিয়েছে ১৬৮টি গাড়ি। দুই ট্রাফিক পরিদর্শকের দেয়া তথ্যেই ঘাটতি রয়েছে ২০টি গাড়ির। এ থেকে বোঝা যাচ্ছে সি-বিচ মোড় থেকে অনেক গাড়ি কালুরঘাটের উদ্দেশ্যে ছেড়ে আসলেও তা শেষ গন্তব্য পর্যন্ত পৌঁছায়নি। এভাবে গত এক সপ্তাহের প্রতিটি শেষ গন্তব্যেও তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা যায়, শেষ গন্তব্য পর্যন্ত পৌঁছানো গাড়ির সংখ্যা ৪০ শতাংশেরও কম।

শুধু এই নিয়ম অমান্য করেই থেমে থাকেননি বাস চালকরা। ‘পাইলট প্রকল্পের’ প্রতিটি সিদ্ধান্তকেই বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে যাচ্ছেন তারা। এ উদ্যোগের মধ্যে বাড়তি ভাড়া বন্ধে ‘ভাড়া

উল্লেখ করে যাত্রীদের টিকিট দেওয়ার সিদ্ধান্ত’ থাকলেও তাও মানেনি গণপরিবহনগুলো। চালকদের গায়ে নির্ধারিত যে পোশাক পরার কথা ছিল তাও দেখা যায়নি কোনো চালকের গায়ে। শুধু তাই নয়, যে যাত্রীদের সেবা নিশ্চিত করতে এ উদ্যোগ তার বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে নেতিবাচক মন্তব্য করছেন যাত্রীরা।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ট্রাফিক কর্মকর্তা জানান, ‘যখন এই পাইলট প্রকল্পের উদ্যোগ গ্রহণ এবং কার্যকর শুরু হয় তখন নতুন সড়ক আইনের প্রজ্ঞাপন জারি হয়নি। মামলার ভয়ে নতুন উদ্যোগ অনেকটা কার্যকর হয়েছিল। কিন্তু নতুন আইন ঘোষণা হওয়ার পর তা বাস্তবায়নে যেতে না পারায় বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন চালকরা। ইচ্ছে অনুযায়ী সড়কে ফিটনেসবিহীন গাড়ি নামিয়ে যত্রতত্র গাড়ি থামানো থেকে শুরু করে বাড়তি ভাড়া আদায় করছেন তারা।’ নতুন আইনের কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করা ছাড়া সড়কে শৃঙ্খলা ফেরানো সম্ভব নয় বলে মন্তব্য করেন ওই কর্মকর্তা।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট