চট্টগ্রাম বৃহষ্পতিবার, ২৮ মার্চ, ২০২৪

সর্বশেষ:

কক্সবাজার বিমানবন্দরের উন্নয়ন প্রকল্প, নথির থামার নাম নেই

অনলাইন ডেস্ক

২২ নভেম্বর, ২০১৯ | ১০:৫৯ অপরাহ্ণ

ভূমি অধিগ্রহণ ও নথি চালাচালিসহ নানা জটিলতায় ধীরে চলছে প্রস্তাবিত কক্সবাজার আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ। বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ ( বেবিচক), পানি উন্নয়ন বোর্ড (বাউবো) ও স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর মিলে এ কাজ করছে। গত বছরের জুন মাসে প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও হয়নি; চতুর্থ দফায় নির্ধারণ করা হয়েছে ২০২০ সালের জুন মাস। নতুন এ সময়ে দ্রুত কাজ শেষ করতে জটিলতা নিরসনে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় ও বেবিচকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা একের পর এক বৈঠক করছেন। এটি বাস্তবায়ন হলে কক্সবাজার হবে বাংলাদেশের চতুর্থ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর।

সম্প্রতি সরেজমিনে দেখা যায়, সব মিলিয়ে ৫০ ভাগ কাজও শেষ হয়নি। এমন অবস্থায় ২০২০ সালের জুন মাসের মধ্যে সরকারি অর্থায়নের এ প্রকল্পের কাজ শেষ হবে কি না তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছেন প্রকল্পের কর্মকর্তারা। সূত্র: দেশ রূপান্তর।

এ প্রসঙ্গে বেবিচক সদস্য (পরিচালনা ও পরিকল্পনা) এয়ার কমোডর মো. খালিদ হোসেন জানান, ভূমি অধিগ্রহণসহ যাবতীয় জটিলতা দ্রুত সময়ে নিরসন করে কক্সবাজার আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ সম্পন্নের চেষ্টা চলছে। কাজ দ্রুত গতিতেই চলছে। আশা করি, নির্দিষ্ট সময়েই সম্পন্ন হবে।

সংশ্লিষ্টাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, কক্সবাজারে প্রতিদিনই দেশি-বিদেশি পর্যটক বাড়ছে। পর্যটকদের আরও আকৃষ্ট করার পদক্ষেপ হিসেবে কক্সবাজার বিমানবন্দরকে আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করার সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। এর অংশ হিসেবে প্রথম পর্যায়ে রানওয়ে ৬ হাজার ৭৭৫ ফুট থেকে বাড়িয়ে ৯ হাজার ফুটে উন্নীত করা হয়। ২০১৫ সালের ২ জুলাই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই রানওয়ে উদ্বোধন করেন। গত বছর প্রকল্পের চতুর্থ সংশোধনীতে রানওয়ে ৯ হাজার থেকে বাড়িয়ে ১২ হাজার ফুটে উন্নীত করার সিদ্ধান্ত হয়। এ ছাড়া বিমানবন্দরটি আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করতে রানওয়ের লাইটিং ফ্যাসিলিটিজ ও নেভিগেশন এইড, দূরত্ব পরিমাপক সরঞ্জাম, ডপলার ওমনি ডিরেকশন রেঞ্জ, যান্ত্রিক অবতরণ ব্যবস্থা ও স্বয়ংক্রিয় মেট্রোলজিক্যাল পর্যবেক্ষণ ব্যবস্থা স্থাপনের সিদ্ধান্ত হয়। আরও সিদ্ধান্ত হয় আধুনিক টার্মিনাল ভবন, ট্যাক্সিওয়ে এপ্রোচ, বোর্ডিং ব্রিজসহ লাইটিং ব্যবস্থার আধুনিকায়ন, ভূমি অধিগ্রহণ ও উন্নয়ন, রানওয়ে টার্নিং প্যাড, শোল্ডার, ওভাররান, সার্ভিস রোড ইত্যাদি প্রকল্পে অন্তর্ভুক্ত করার।

বেবিচকের এক কর্মকর্তা জানান, বিমানবন্দরের কাজ শেষ হলে এখানে ৭৭৭-৩০০ বোয়িং বিমান ওঠানামা করতে পারবে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে পর্যটকরা সরাসরি কক্সবাজার যাতায়াত করতে পারবেন। এখন ঢাকা হয়ে আসতে হয় কক্সবাজার।

বেবিচক কর্মকর্তারা জানান, কক্সবাজার বিমানবন্দরকে আন্তর্জাতিক মানে উন্নীতকরণের কাজ শুরু হয় ২০০৯ সালে। প্রকল্পটির মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে চার দফায়। প্রথমে ৩০২ কোটি টাকার একটি প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। নানা জটিলতায় প্রকল্পটি সামনের দিকে বেশি এগোতে পারেনি। ২০১২ সালে সংশোধন করে প্রকল্পের ব্যয় ৫৪৯ কোটি টাকায় উন্নীত করা হয়। গত নভেম্বরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে একনেক সভায় প্রকল্পটির তৃতীয় সংশোধনী অনুমোদন পায়। সর্বশেষ চতুর্থ দফায় প্রকল্পের মোট ব্যয় ৩ হাজার ৭০৯ কোটি ৬০ লাখ টাকা এবং বাস্তবায়নকাল ধরা হয় ২০১৯ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২১ সালের ডিসেম্বর।

প্রথমবার দরপত্রে দুর্নীতি ও অদক্ষতার জন্য মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে বেবিচকের তৎকালীন প্রকল্প পরিচালককে প্রত্যাহার করা হয়। এরপর কচ্ছপ গতিতে এগোয় কাজ। কক্সবাজার বিমানবন্দর উন্নয়ন প্রকল্পের কাজটি কোরিয়ার ইয়োসিন-ইলশিন-ডিডিস জয়েন্ট ভেনচারের তত্ত্বাবধানে হাল্লা-মীর আকতার জেভি নামে একটি আন্তর্জাতিক ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান করছে।

বেবিচকের এক কর্মকর্তা জানান, আগামী জুনের মধ্যে প্রকল্পের রানওয়ে সম্প্রসারণ ও আধুনিকায়নের কাজ শেষ হওয়ার কথা। কিন্তু ধীরগতিতে চলছে সেসব কাজ। প্রকল্প এলাকার কিছু জমি অধিগ্রহণ নিয়ে সৃষ্ট সমস্যার এখনো সমাধান হয়নি। ছাড় হয়নি ব্যাংকের চেকও। অধিগ্রহণভুক্ত ভূমি গত তিন বছরেও স্থানীয় প্রশাসন বেবিচককে হস্তান্তর করতে না পারায় গুরুত্বপূর্ণ যন্ত্রাপাতি স্থাপন করা যাচ্ছে না। এতে একদিকে দীর্ঘসময়েও কাজ করতে না পেরে ঠিকারদার যেমন বিপুল ক্ষতির মুখোমুখি হচ্ছে, অন্যদিকে রাত্রিকালীন ফাইট চালু করতে না পেরে বিপুল রাজস্ব বঞ্চিত হচ্ছে সরকার।

তিনি জানান, সব মিলিয়ে প্রকল্পটি সময়মতো শেষ করা নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। ২০২০ সাল তো নয়ই ২০২২ সালেও এই প্রকল্প শেষ হয় কি না তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে। কারণ হিসেবে তিনি জানান, বাকখালী নদীর ওপর ব্রিজ ও এপ্রোচ রোড নির্মাণের জন্য প্রত্যাশী সংস্থা হিসেবে এলজিইডি ভূমি অধিগ্রহণের উদ্দেশে প্রশাসনিক অনুমোদন দেয়ার জন্য বেবিচক ও মন্ত্রণালয়ে একটি প্রস্তাব পাঠালে ২০১৬ সালে সংস্থা দুটি এলজিইডির অনুকূলে প্রশাসনিক অনুমোদন দেয়। কিন্তু অধিগ্রহণের কাজে জেলা প্রশাসন ও এলজিইডি প্রায় তিন বছর পার করে গত ২৮ মার্চ বেবিচকের প্রকল্প পরিচালকের কাছে এলজিইডির পক্ষ থেকে ৬৯ কোটি ২৮ লাখ ৭২ হাজার ২৩ টাকার তহবিল চাহিদা পাঠায়। গত ৩১ মার্চ ২০১৮-১৯ অর্থবছরের সংশোধিত বাজেট অনুমোদিত হওয়ার পর বেবিচক থেকে গত ৭ এপ্রিল তহবিল ছাড়ের প্রস্তাব মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। এরপর ৭ মে মন্ত্রণালয় জিও জারি করে। এর ফাঁকে চলে যায় এক মাস। গত ১২ মে বেবিচক থেকে এজিতে তহবিল উত্তোলনের প্রস্তাব পাঠানো হয়। ২ জুন এজি থেকে বেবিচকের মূল হিসাবে তহবিল স্থান্তারত হয়। বেবিচকের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী হাবিবুর রহমান ২৭ জুন এলজিইডির কাছে চেকটি পাঠান। এতে লাগে ১৫ দিন।

 

পূর্বকোণ-রাশেদ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট