চট্টগ্রাম শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪

পূবালী ব্যাংকের বুথ থেকে উত্তোলন দেড় মিনিটেই টাকা লুট

নাজিম মুহাম্মদ

২২ নভেম্বর, ২০১৯ | ৩:১৬ পূর্বাহ্ণ

পূবালী ব্যাংকের চট্টগ্রামে দুটি এবং কুমিল্লায় একটি এটিএম বুথ থেকে সাড়ে নয় লাখ টাকারও বেশি তুলে নেওয়ার পর ব্যাংকগুলোর বুথের নিরাপত্তা নিয়ে নতুন করে সংশয়ের সৃষ্টি হয়েছে। এর আগে ক্লোনকার্ড ব্যবহার করে টাকা তোলার ঘটনা ঘটলেও এবার ব্যবহার করা হয়েছে বিশেষ ডিভাইস। জালিয়াতি করে টাকা তোলার ক্ষেত্রে এটি সর্বশেষ ব্যবহৃত প্রযুক্তি।

গত ১৯ নভেম্বর সন্ধ্যা পৌনে সাতটায় চকবাজার কলেজ রোড শাখা পূবালী ব্যাংকের এটিএম বুথ থেকে একব্যক্তি বিশেষ ডিভাইস ব্যবহার করে টাকা তুলে নেন। একইব্যক্তি রাত আটটা ৪৪ মিনিটে টাকা তুলে নেন পূবালী ব্যাংকের ডবলমুরিং বুথ থেকে। ওই রাতে কুমিল্লার কান্দিরপাড় বুথ থেকেও তিনি টাকা তোলেন। এ সংক্রান্ত প্রাপ্ত ভিডিও থেকে দেখা যায়, প্রতিটি ক্ষেত্রেই তিনি একটি মাস্টার চাবি ব্যবহার করে প্রথমে বুথের মনিটর খুলে ভেতরে একটি বিশেষ ডিভাইস বসিয়ে দেন। এরপর হাতে থাকা একটি ছোট যন্ত্রের মাধ্যমে ওই ডিভাইসের নিয়ন্ত্রণ নেন। এভাবে তিনি ব্যাংকের মূল সংযোগ থেকে এটিএম বুথটি বিচ্ছিন্ন করে ইচ্ছেমতো টাকা তুলে নেন। টাকা তোলা শেষ হলে বুথটি পুনরায় কেন্দ্রীয় সার্ভারের সঙ্গে সংযুক্তও করে দেন। তবে টাকা তোলা শেষে তিনি আর মনিটর খুলে ডিভাইসটি নেননি। সেটি ভেতরে রেখেই নিষ্ক্রিয় করা হয়। পুরো কাজের জন্য তিনি সময় নেন মাত্র এক মিনিট ২৩ সেকেন্ড থেকে দেড় মিনিট।

ব্যাংকের একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এভাবে টাকা তুলে নেওয়ার চেষ্টা করা হলে তাদের পাহারা দেওয়া প্রায় অসম্ভব। গোপনীয়তা রক্ষার শর্তে এমনিতেই গ্রাহক এটিএম বুথে প্রবেশ করলে তাকে অনুসরণের নিয়ম নেই। তবে একজন কার্ড ব্যবহারকারী দীর্ঘসময় বুথের ভেতরে অবস্থান করলে বাইরে থাকা নিরাপত্তা প্রহরী গিয়ে তা দেখতে পারেন। কিন্তু পূবালী ব্যাংকের বুথ থেকে টাকা তোলার ঘটনা ঘটেছে অতি দ্রুত।
সাধারণত এটিএম বুথ খোলা ও সেখানে টাকা রাখা, আটকে থাকা কার্ড তোলাসহ বুথের মূল মেশিন খোলার সময় সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের বুথ মনিটরিং কর্মকর্তার কাছে একটি বার্তা যায়। পূবালী ব্যাংকের ক্ষেত্রে তেমনটি হয়নি। বুথ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা বিষয়টি জানতেই পারেননি। বরং কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকেই বিষয়টি সম্পর্কে চট্টগ্রামের কর্মকর্তাদের অবহিত করা হয়। এরপর তা যাচাই করে সত্যতা পান ব্যাংক কর্মকর্তারা।
ঘটনা শেষে ডবলমুরিং ও চকবাজার থানায় দুটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা হয়। চকবাজার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নিজাম উদ্দিন বলেন, নতুন এজাহারে মামলা করা হয়েছে। পূবালী ব্যাংক চকবাজার শাখার কর্মকর্তা মিনহাজ উদ্দিন দিলনেওয়াজ বাদি হয়ে মামলাটি করেন। একইভাবে গতকাল ডবলমুরিং থানায়ও মামলা হয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ব্যাংকের বুথ থেকে টাকা তোলা হলেও তাতে কোনো গ্রাহকের হিসাব নম্বর ব্যবহার করা হয়নি। কোনো গ্রাহকের হিসাব থেকেও টাকা বের হয়নি। টাকা গেছে ব্যাংক থেকে। বুথ জালিয়াতির ক্ষেত্রে এটি সম্পূর্ণ নতুন ধারণা। সংশ্লিষ্ট ব্যাংক কর্মকর্তাদের ধারণা, পূবালী ব্যাংকের বুথ স্থাপনসহ ওই কাজে জড়িতদের কেউ এই কাজ করতে পারেন। কারণ হিসেবে তাঁরা বলেন, মনিটর খোলার মাস্টার চাবিতো অন্য কারো হাতে থাকার কথা নয়। ওই চাবি ব্যবহার করে এক সেকেন্ডেই বুথের মনিটরের সামনের অংশটি খোলা সম্ভব হয়।

চট্টগ্রামে এর আগে ২০১৩ সালে শরিফুল নামের একজনকে এটিএম বুথ থেকে টাকা তোলে নেওয়ার অভিযোগে পাঁচলাইশ থানা পুলিশ গ্রেপ্তার করেছিল। শরিফুল তখন পুলিশকে জানিয়েছিলেন, শ্রীলংকান এক লোক থেকে টাকা তোলার ওই কায়দা তিনি আয়ত্ব করেন। তিনি বিভিন্ন ডেভিড কার্ডের পাসওয়ার্ড চুরি করে ক্লোন কার্ড বানাতেন। তখন ওইসব কার্ড দিয়ে বুথ থেকে টাকা না তুলে বিভিন্ন সুপার সপ থেকে পণ্য কিনতেন। কখনও সেখানকার কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগসাজশে নগদ টাকা তুলে নিতেন। একটি আইপিএস’র ব্যাটারি কিনে বাসায় লাগাতে গিয়ে তিনি ধরা খান। জেল থেকে বেরিয়ে ঢাকায়ও একই কাজ করার সময় সিআইডির হাতে গ্রেপ্তার হন দ্বিতীয়বার।

গত জুন মাসে ঢাকায় ডাচ-বাংলা ব্যাংকের কয়েকটি এটিএম বুথ থেকে টাকা তোলার ঘটনায় পুলিশ ইউক্রেনের ছয়জন নাগরিককে গ্রেপ্তার করে। ব্যাংক থেকে উত্তোলিত টাকার পরিমাণ ছয়লাখ বললেও পুলিশ তদন্ত করে জানতে পারে, প্রকৃত টাকার পরিমাণ ১৬ লাখ। তারাও কিছু কার্ড ব্যবহার করেছিলেন যেগুলোর সঙ্গে গ্রাহকের নম্বরের কোনো সম্পর্ক ছিল না।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট