চট্টগ্রাম শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

কাস্টমসে ঘুষ বাণিজ্য বন্ধ হচ্ছে না

দুদকের নজরে একাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারী হ ঘুষ ছাড়া মেলে না ছাড়পত্র হ ফের অভিযানে মিলেছে প্রাথমিক সত্যতা

ইমাম হোসাইন রাজু

২১ নভেম্বর, ২০১৯ | ৩:০৮ পূর্বাহ্ণ

আমদানি পণ্যের ছাড়পত্র পেতে নানা হয়রানি যেন কাস্টম হাউসে নিত্যদিনের ঘটনা। শুল্কসহ যাবতীয় সকল ডকুমেন্ট পরিপাটি থাকার পরও ঘুষ ছাড়া ফাইল পাওয়া যেন সোনার হরিণ। কন্টেইনার বা জাহাজে পণ্য নষ্ট হয়ে গেলেও তাতে এক বিন্দু মাথা ব্যথা নেই কাস্টম্স কর্তৃপক্ষের। পণ্য ছাড়পত্রের এমন ঘুষ বাণিজ্যের অভিযোগ দীর্ঘদিন থেকেই রয়েছে দুদকের কাছে। এছাড়া ঘুষ গ্রহণকালেও দুদকের হাতে গ্রেপ্তার হতে হয়েছে কর্মকর্তা থেকে শুরু করে কর্মচারীকে। তবুও কমেনি এ ঘুষ বাণিজ্য। ফের ঘুষ বাণিজ্য ও সেবা গ্রহীতাদের হয়রানিসহ নানা অভিযোগের ভিত্তিতে গতকাল মঙ্গলবার অভিযান চালিয়েছে দুদক। অভিযানে কাউকে আটক না করলেও প্রাথমিক সত্যতা পাওয়া গেছে। দুর্নীতি দমন কমিশন-দুদক সমন্বিত জেলা কার্যালয়, চট্টগ্রাম-১ এর সহকারী পরিচালক জাফর সাদেকের নেতৃত্বে দুই সদস্যের একটি টিম এ অভিযান পরিচালনা করে। অন্য দুই সদস্য হলেন : উপ-সহকারী পরিচালক মাহমুদা আক্তার ও কনস্টেবল ফিরোজ মাহমুদ। দুদক সূত্রে জানা যায়, দুদকের হটলাইন নম্বর ১০৬-এ সেবা গ্রহীতাদের হয়রানি এবং পণ্য খালাসের ছাড়পত্র পেতে কতিপয় কিছু কর্মকর্তা-কর্মচারী ঘুষ বাণিজ্য চালিয়ে যাচ্ছে এমন অভিযোগ পাওয়া যায়। পরে দুপুরে দুদক টিম অভিযান পরিচালনা করেন। এই সময় তারা বিভিন্ন গ্রাহকের সাথে কথা বলেছেন এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ থেকে বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করা হয়। প্রাথমিকভাবে এ বিষয়ে সত্যতা পাওয়া গেছে। অভিযানের বিষয়ে দুর্নীতি দমন কমিশন-দুদক সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক লুৎফুল কবির চন্দন পূর্বকোণকে বলেন, ‘দুদকের হটলাইন নম্বর ১০৬-এ অভিযোগের ভিত্তিতে অভিযান চালায় দুদক। এসময় তথ্য সংগ্রহ করেছে দুদক টিম। এ বিষয়ে আরও যাচাই-বাছাই করা হবে। যাচাই-বাছাই শেষে সুনির্দিষ্ট তথ্যের ভিত্তিতে প্রধান কার্যালয়ে প্রতিবেদন পাঠানো হবে। কমিশনের সিদ্ধান্ত অনুসারে পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে’। এদিকে, চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের অনিয়ম ও দুর্নীতির বিষয়ে আগ থেকেই একাধিক অনুসন্ধানের কাজ চালিয়ে যাচ্ছে দুদক। যার মধ্যে কাস্টম হাউসের একাধিক কর্মকর্তা-

কর্মচারীদের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট দুর্নীতি ও হয়রানির অভিযোগ রয়েছে দুদকের কাছে। যাদের অনুসন্ধান কাজ চালিয়ে যাচ্ছে দুদকের প্রধান কার্যালয় ও চট্টগ্রাম জেলা কার্যালয়। দুদকের বিশ^স্ত সূত্রে জানা যায়, দুদকের এ তালিকায় কাস্টমস হাউসের বেশ কয়েকজন রাজস্ব কর্মকর্তাসহ একাধিক কর্মকর্তা ও কর্মচারী রয়েছেন। এছাড়াও কয়েকটি সিন্ডিকেটের বিষয়েও নজর রেখে অনুসন্ধান চালিয়ে যাচ্ছে দুদক। এসব কর্মকর্তা, কর্মচারী ও সিন্ডিকেটের যোগসাজশে আমদানিকারক ও রপ্তানিকারক পণ্যের তথ্য গোপন করে সরকারের বিপুল পরিমাণ রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে আসছে।

এর আগে গত ১০ জানুয়ারি ঝটিকা অভিযানে ঘুষের ছয় লাখ টাকাসহ চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউসের রাজস্ব কর্মকর্তা (প্রশাসন) নাজিম উদ্দিন আহমদকে হাতেনাতে গ্রেপ্তার করে দুদক। নাজিম উদ্দিন আহমদ বন্দরের জাহাজের ছাড়পত্র নেয়ার জন্য দীর্ঘদিন থেকে ঘুষ-বাণিজ্য করে আসছেন বলে জানায় দুদক। শুধু নাজিম উদ্দিন নয়, অভিযোগ রয়েছে এমন কাজের সাথে আরও একাধিক কমকর্তা জড়িত রয়েছেন। চলতি বছরের ২৭ জানুয়ারিতে চট্টগ্রামে এক মতবিনিময় সভায় দুর্নীতি দমন কমিশন-দুদকের চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ কাস্টম হাউসের দুর্নীতি ও হয়রানিসহ একাধিক অভিযোগের বিষয়টিও উল্লেখ করেন।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট