চট্টগ্রাম শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪

১৬ বছরেও চালু হয়নি অপারেশন থিয়েটার

এক্স-রে মেশিন অব্যবহৃত ১৩ বছর

রামগড় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স

নিজাম উদ্দিন লাভলু, রামগড়

২১ নভেম্বর, ২০১৯ | ২:০৬ পূর্বাহ্ণ

খাগড়াছড়ির রামগড় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের তিনটি অপারেশন থিয়েটারের (ওটি) মধ্যে একটি ১৬ বছর ও অপর দুটি ৬ বছরেও চালু হয়নি। অন্যদিকে, ৩০০ এমএম ক্ষমতা সম্পন্ন একমাত্র এক্স-রে মেশিনটি ১৩ বছর যাবত অব্যবহৃত অবস্থায় থেকে এখন সম্পূর্ণ অকেজো। বছরের পর বছর অব্যবহৃত অবস্থায় পড়ে থাকায় কোটি কোটি টাকার মূল্যবান চিকিৎসা সরঞ্জামগুলো নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। সরকারি এসব মূল্যবান সম্পদ রক্ষা বা অপারেশন থিয়েটার চালুর কোন উদ্যোগ নেই সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের। এ কারণে জনগণ সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।

এদিকে, খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান কংজরী চৌধুরী সম্প্রতি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স পরিদর্শনকালে অপারেশন থিয়েটারসহ কোটি কোটি টাকার বিভিন্ন মূল্যবান চিকিৎসা সরঞ্জাম পরিত্যক্ত অবস্থায় দেখে ক্ষোভ ও অসন্তোষ প্রকাশ করেন। তিনি এসব মূল্যবান সম্পদ সঠিকভাবে রক্ষণাবেক্ষণের ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দেন।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, ২০০৫ সালে ৩১ শয্যার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে কোরিয়ার তৈরি ৩০০ এমএম ক্ষমতা সম্পন্ন একটি এক্স-রে মেশিন দেয়া হয়। মেশিনটি ২০০৬ সালের জুন মাসে এক্স-রে রুমে স্থাপন করা হয়। কিছুদিন মেশিনটি সচল থাকার পর আকস্মিকভাবে অচল হয়ে পড়ে। ২০১২ সালের ফেব্রুয়ারিতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এক প্রকৌশলী এসে মেশিনটি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে এটি মেরামত করতে সাড়ে ৫ লক্ষ টাকা ব্যয় হবে বলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাকে অবহিত করেন। পরবর্তী সময়ে এক্স-রে মেশিনটি সচল করার আর কোন উদ্যোগ নেয়া হয়নি। এছাড়া এক্স-রে রুমের এসিসহ এক্স-রে ফিল্ম, ফিকচার ডেভেলপার, ক্যাসেট, ডায়ার কেভিনেট, হেঙ্গার, লিড এফরোল, ভিউ বক্স ইত্যাদি সরঞ্জামগুলো দীর্ঘদিন ধরে ব্যবহৃত না হওয়ায় নষ্ট হয়ে গেছে। এক্স-রে মেশিনটি অকেজো থাকায় এক্স-রে টেকনিশিয়ানকে অন্যকাজে নিয়োজিত রাখা হয়েছে। অন্যদিকে, স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের দুটি অপারেশন থিয়েটারের মূল্যবান সরঞ্জামও নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, অপারেশন থিয়েটারে যাবতীয় যন্ত্রপাতি ছাড়াও অপারেশনের প্রয়োজনীয় ওষুধপত্রও সরবরাহ করা হয়। বছরের পর বছর তালাবদ্ধ রুমে অব্যবহৃত অবস্থায় পড়ে থাকার কারণে কোটি কোটি টাকার এসব চিকিৎসা সরঞ্জাম নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। ওষুধপত্রও মেয়াদোর্ত্তীণ হয়ে নষ্ট হয়ে গেছে। এদিকে লেবার রুমে প্রসবকালীন যাবতীয় সরঞ্জাম থাকলেও গাইনী ডাক্তার না থাকায় লেবার বিভাগ চালু করা যাচ্ছে না। এ কারণে অব্যবহৃত অবস্থায় পড়ে থেকে লেবার বিভাগের সরঞ্জামও নস্ট হয়ে যাচ্ছে। হাসপাতালের একটি মাত্র ইসিজি মেশিন কয়েক বছর ধরে বিকল অবস্থায় পড়ে আছে। একইভাবে সাকার মেশিন ও জরুরি বিভাগের স্টেলাইজেশন বা জীবাণুমুক্তকরণ মেশিনও দীর্ঘদিন যাবত অকেজো।

উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. জিনাত রেহানা বলেন, অপারেশন থিয়েটার চালু করতে হলে এনেস্থেসিয়া, গাইনী ও সার্জারী বিভাগের কমপক্ষে তিনজন কনসালটেন্ট ও তাদের সহযোগী পোস্টিং থাকতে হবে। কিন্তু এ হাসপাতালে পদগুলো দীর্ঘদিন যাবত শূন্য। এ কারণে অপারেশন থিয়েটার চালু করা সম্ভব হচ্ছে না। তিনি জানান, গত অক্টোবরে ঢাকা থেকে একজন ইঞ্জিনিয়ার এসে এক্স-রে মেশিনটি পরীক্ষা নিরীক্ষা করে বলেছেন এটি সম্পূর্ণ অকেজো হয়ে গেছে। অব্যবহৃত অবস্থায় পড়ে থাকা চিকিৎসা সরঞ্জাম ও এক্স-রে মেশিন সম্পর্কে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে নিয়মিত রিপোর্ট পাঠানো হচ্ছে।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট