চট্টগ্রাম মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ, ২০২৪

সর্বশেষ:

দেশব্যাপী অনির্দিষ্টকালের পণ্য পরিবহন ধর্মঘট শুরু

দ্বিতীয় দফা বৈঠক আজ হ প্রভাব পড়বে নিত্যপণ্যের বাজারে : ব্যবসায়ী নেতা হ দাবি আদায় পর্যন্ত ধর্মঘট : পণ্য পরিবহন সমিতি

আল-আমিন সিকদার

২০ নভেম্বর, ২০১৯ | ২:৫৩ পূর্বাহ্ণ

দেশব্যাপী অনির্দিষ্টকালের পণ্য পরিবহন ধর্মঘট বহাল রেখেই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সাথে আজ দ্বিতীয় দফায় বৈঠকে বসবেন পণ্য পরিবহনের মালিক-শ্রমিক নেতারা। আজ বুধবার দুপুরে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সাথে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। এর আগে গতকাল মঙ্গলবার রাতে পণ্য পরিবহনের শ্রমিকদের সাথে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর একদফা বৈঠক হয়। তবে কোন সিদ্ধান্ত ছাড়াই সে বৈঠক শেষ হয়। ধর্মঘট প্রত্যাহারে শ্রমিকরা এককভাবে কোন সিদ্ধান্ত দিতে পারে না জানিয়ে বৈঠকে পণ্য পরিবহন মালিকদেরও সাথে রাখার দাবি জানান। শ্রমিকরা বলেন, যেহেতু পণ্য পরিবহন মালিক-শ্রমিক নেতারা ঐক্যবদ্ধভাবে ধর্মঘটের ঘোষণা দিয়েছেন তাই প্রত্যাহার করতে হলে তাদের (মালিকদের) সম্মতি লাগবে। এজন্য মালিকদের সাথে নিয়ে আরেকটি বৈঠক করার দাবি জানান শ্রমিকেরা।

বৈঠক সূত্র জানায়, প্রধানমন্ত্রী দেশে ফেরা পর্যন্ত পণ্য পরিবহন শ্রমিকদের ধর্মঘট স্থগিত করতে অনুরোধ করেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। প্রধানমন্ত্রীর সাথে নতুন আইন ও তাদের দাবি নিয়ে কথা বলা হবে বলেও জানান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। তবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর এ অনুরোধ রাখেননি শ্রমিকরা। তারা তাদের দাবি আদায়ের আগ পর্যন্ত ধর্মঘট চলবে বলে জানান। তবে আজ বুধবার পণ্য পরিবহনের মালিক-শ্রমিক নেতারা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সাথে দ্বিতীয় দফায় বৈঠক করার সিদ্ধান্ত নেন। বৃহত্তর চট্টগ্রাম পণ্য পরিবহন মালিক শ্রমিক ঐক্য পরিষদের আহবায়ক জহুর আহমদ পূর্বকোণকে বলেন, ‘কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আজ বুধবার সকাল ৬টা থেকে পণ্য পরিবহন চলাচল বন্ধ থাকবে। এতে সারাদেশের কোথাও পণ্য পরিবহনের চালকরা গাড়ি চালাবে না বলে ঘোষণা দেন। তবে রাতে (গতকাল) স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পণ্য পরিবহনের শ্রমিকদের সাথে বৈঠক করেছেন। বৈঠকে কোন সিদ্ধান্ত না হওয়ায় ধর্মঘট চলবে।’
এদিকে পণ্য পরিবহন বন্ধ থাকলে নিত্য পণ্যেও দাম বাড়বে বলে জানিয়েছেন খাতুনগঞ্জ ট্রেড এন্ড ইন্ড্রাস্ট্রিস এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ ছগির আহমেদ। তিনি পূর্বকোণকে বলেন, ‘ধর্মঘট হলে পোর্ট থেকে পণ্য খালাস করতে পারবে না ব্যবসায়ীরা। এতে পণ্য সংকটের দেখা দিবে । বাড়বে নিত্য পণ্যের দাম। কারণ, প্রতিদিন ঢাকা-চট্টগ্রাম লাইফ লাইন দিয়ে ১০ থেকে ১২ হাজার পণ্যবাহী গাড়ি চলাচল করে। এতে শুধু নিত্য পণ্যের বাজারেই নয়, প্রভাব পড়বে পোশাক খাত ও বন্দরেও।’

পরিবহন মালিকদের সাধারণ মানুষকে জিম্মি করার এ অপচেষ্টা রুখতে সরকারকে আরও কঠোর হওয়ার আহবান জানান নিরাপদ সড়ক চাই এর প্রতিষ্ঠাতা ইলিয়াছ কাঞ্চন। তিনি পূর্বকোণকে বলেন, ‘নিরাপদ সড়ক গড়ে তুলতে সরকারের এ চেষ্টা ব্যর্থ করতে চাচ্ছে একটি গোষ্ঠী। সড়কে এক সময় চাঁদাবাজি করত তারাও চাইছে না নতুন সড়ক আইন বাস্তবায়ন হোক। কারণ, সড়ক নিয়ন্ত্রণে এলে তারা আর চাঁদাবাজি করতে পারবে না। এই স্বার্থের কারণেই তারা আন্দোলনে যাচ্ছে। আমি সরকারের কাছে অনুরোধ করছি, যারা সাধারণ মানুষকে জিম্মি করে সরকারকে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে ফেলতে চাচ্ছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করার। এছাড়া গোয়েন্দা সংস্থার নজরদারি বৃদ্ধি করে প্রকৃত দোষীদের চিহ্নিত করে তাদের শাস্তির আওতায় আনতে হবে।’

উল্লেখ্য, গতকাল মঙ্গলবার ঢাকার তেজগাঁওয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে নতুন আইন স্থগিত রাখাসহ নয় দফা দাবিতে বুধবার থেকে সারাদেশে অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘটের ডাক দেয় পণ্য পরিবহনের মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদের নেতারা। পরিষদের আহ্বায়ক মো. রস্তম আলী খান বলেন, ‘আইনের সব ধারা নিয়ে আমাদের আপত্তি নেই। কিছু বিষয় নিয়ে আমরা বিভিন্ন সময় দাবি জানিয়েছি। কিন্তু সরকার আশ্বস্ত করলেও পরে সেগুলো বাস্তবায়ন করেনি। এ কারণেই কর্মসূচি।’

নয় দফা দাবি সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘সড়ক দুর্ঘটনায় চালককে এককভাবে দায়ী করা যাবে না। সড়ক দুর্ঘটনাজনিত কোনো মামলায় চালককে আসামি করলে তা অবশ্যই জামিনযোগ্য ধারায় হতে হবে। তদন্ত সাপেক্ষে প্রকৃত দোষী চিহ্নিত করার কাজে মালিক-শ্রমিক প্রতিনিধিদের যুক্ত করতে হবে। এ কমিটির মাধ্যমে সঠিক তদন্ত করে ব্যবস্থা নিতে হবে। সড়ক দুর্ঘটনায় কোনো গাড়ির মালিককে গ্রেপ্তার বা হয়রানি করা যাবে না। এছাড়া ‘সড়ক পরিবহন উপদেষ্টা কমিটি’, ‘সড়ক পরিবহন আইন-শৃঙ্খলা কমিটি’ এবং সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় গঠিত পণ্য পরিবহন সংশ্লিষ্ট যে কোনো কমিটিতে বাংলাদেশ ট্রাক-কভার্ডভ্যান মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদের প্রতিনিধি রাখতে হবে’।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট