চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪

দায় নিতে রাজি নয় কেজিডিসিএল

উৎস নিয়ে ধু¤্রজাল!

পাথরঘাটায় বিস্ফোরণ হ দুই ভবন ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা, বের করে দেওয়া হয়েছে লোকজন হ নিহত অজ্ঞাত ব্যক্তির পরিচয় মিলেছে হ দু’জনকে আসামি করে মামলা হ ভবন মালিক দু’ভাই পলাতক

নিজস্ব প্রতিবেদক

১৯ নভেম্বর, ২০১৯ | ৩:০২ পূর্বাহ্ণ

পাথরঘাটায় বিস্ফোরণের ঘটনায় দেওয়াল ধসে নিহত সাতজনের মধ্যে অবশিষ্ট ব্যক্তির পরিচয়ও পাওয়া গেছে। তার নাম মাহমুদুল হাসান (২৮)। তার বাড়ি লোহাগাড়া উপজেলায়। বিস্ফোরণের ঘটনায় মাহমুদুল হাসানের স্ত্রী শাহীন আক্তার বাদি হয়ে গতকাল সোমবার কোতোয়ালী থানায় একটি মামলা করেছেন। মামলায় বড়–য়া বিল্ডিংয়ের মালিক অমল বড়–য়া ও টিটু বড়ুয়াকে আসামি করা হয়েছে। রবিবার সকালে বিস্ফোরণের পর থেকে দুই ভাই পলাতক আছেন।

বিস্ফোরণের পর চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ) বড়–য়া বিল্ডিং ও পাশের ভবনটিকে ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করেছে। এই দুই ভবন থেকে সব ভাড়াটিয়াকে বের করে দেওয়া হয়েছে। বিস্ফোরণের ঘটনায় ভবন দুটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। দুই ভবনেরই সব জানালার কাচ ভেঙে গেছে। ক্ষতি হয়েছে ভবনের অবকাঠামোর।

গত রবিবার সকালে নগরীর পাথরঘাটার ব্রিক ফিল্ড রোডের বড়ুয়া ভবনের নিচ তলায় বিস্ফোরণে এক শিশুসহ সাতজন নিহত হন। আহত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন ১০ জন। এরমধ্যে অর্পিতা নামে দগ্ধ এক স্কুলছাত্রীকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।

বিস্ফোরণের ঘটনায় গঠিত তিনটি কমিটি গতকাল থেকে কাজ শুরু করেছে। তবে কর্ণফুলী গ্যাস বিতরণ কোম্পানি (কেজিডিসিএল) বলেছে, গ্যাসের কারণে এই বিস্ফোরণ হয়নি। এটি সেপটিক ট্যাংকের বিস্ফোরণ।

তবে বিস্ফোরক অধিদরপ্তর ও ফায়ার সার্ভিস কর্তৃপক্ষ কেজিডিসিএল এর এই বক্তব্য মানতে রাজি নয়। বিস্ফোরক অধিদপ্তর চট্টগ্রাম অঞ্চলের পরিদর্শক তফাজ্জল হোসেন বলেছেন, রাইজার ও রাইজারের পাইপ লাইন অতিপুরাতন। ডেলিভারি পাইপের পুরুত্ব অনেক কমে গেছে। পাইপ লাইনটি রাবার দিয়ে মোড়ানো থাকার কথা ছিলো- তা ছিল না। যেহেতু ডেলিভারি পাইপলাইনটি পুরাতন। আমরা ধারণা করছি পাইপ লাইনের যে কোন একটি ছিদ্র দিয়ে গ্যাস লিকেজ হয়েছে। রান্না ঘরের পাশে দেয়াল থাকায় রুমের যেদিকে ফাঁকা ছিলো সেদিকে গ্যাস প্রবাহিত হয়েছে। রাতভর গ্যাস লিকেজের কারণে ঘরের দুটি রুমই গ্যাস চেম্বারে পরিণত হয়েছে। আমরা শুনেছি ঘটনার সূত্রপাত যে বাসায় সেই বাসার একটি মেয়ে সকালে উঠে পূজা করতে ম্যাচের কাঠি জ্বালিয়েছে। এতে বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। মেয়েটির মুখম-ল আর শরীরের বিভিন্ন অংশ পুড়ে গেছে। গ্যাস লিকেজের কারণে এ ঘটনা হয়েছে। এতে কোন সন্দেহ নেই। রান্নাঘর অক্ষত থাকা প্রসঙ্গে বিস্ফোরক কর্মকর্তা তফাজ্জল বলেন, রান্না ঘরে যেহেতু ম্যাচের কাঠি জ্বালানো হয়নি তাই সেখানে কোন কিছুই হয়নি।

ফায়ার সার্ভিসের সহকারী পরিচালক মো. জসিম উদ্দিন বলেন, কয়েক বছর আগে নগরীর দেওয়ান বাজারেও একই ধরনের ঘটনা ঘটেছিল। সকালে বদ্ধ ঘরে গ্যাস জমেছিল। চুলায় আগুন ধরানোর সঙ্গে সঙ্গে বিস্ফোরণে ওই কক্ষের পাশাপাশি পাশের ঘরের কয়েকটি কক্ষ বিধ্বস্ত হয়। পাথরঘাটার ঘটনাটিও অনুরূপ গ্যাসজনিত বলেই আমাদের মনে হচ্ছে।

চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) প্রধান নগর পরিকল্পনাবিদ শাহীনুল ইসলাম খান বলেছেন, ভবনটি নির্মাণের সময় ভবন কোড মানা হয়নি। বর্তমানে বড়–য়া ভবন ও পাশের ভবনটি ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। এই দুই ভবন থেকে সবাইকে বের করে ফেলা হয়েছে। তিনি বলেন, ব্রিকফিল্ড সড়কটি ৪০ ফুট প্রস্থ হওয়ার কথা থাকলেও সেটি বর্তমানে ২০ ফুটও নেই।
কেজিডিসিএল’র প্রতিবেদন জমা : কেজিডিসিএল ঘটনার একদিনের মাথায় তদন্ত প্রতিবেদন দিয়েছে। এতে বলা হয়েছে, গ্যাস নয় সেপটিক ট্যাংকে অতিরিক্ত মিথেন গ্যাস জমে যাওয়ার কারণে এই বিস্ফোরণ ঘটেছে। গতকাল সোমবার চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসকের কাছে প্রতিবেদন জমা দেওয়া হয়। কমিটির প্রধান কেজিডিসিএল’র মহাব্যবস্থাপক (ইঞ্জিনিয়ারিং ও সার্ভিসেস) প্রকৌশলী সারোয়ার হোসেন বলেন, বিস্ফোরণের পর বাসার কোনও আসবাবপত্র পোড়েনি। গ্যাস লাইনের সাথে যুক্ত রান্নার চুলাও একই অবস্থায় ছিল। গ্যাস লাইনের ত্রুটির কারণে বিস্ফোরণ হলে অবশ্যই আগুন ধরতো। এই বিস্ফোরণ হতে পারে সেপটিক ট্যাংকের মিথেন গ্যাসের কারণে।

কেজিডিসিএল প্রতিবেদন জমা দিলেও জেলা প্রশাসন ও ফায়ার সার্ভিসের যৌথ কমিটি এবং পুলিশের পক্ষ থেকে তদন্ত কাজ অব্যাহত রয়েছে। আগামী দুইদিনের মধ্যে তারা প্রতিবেদন জমা দেবে।
নগর পুলিশ গঠিত তদন্ত কমিটি সদস্য কোতোয়ালী অঞ্চলের সহকারী কমিশনার নোবেল চাকমা বলেন, আমরা ভুক্তভোগীদের সঙ্গে কথা বলছি। বিশেষজ্ঞদের সঙ্গেও কথা বলছি। তাদের বক্তব্য এবং পারিপার্শ্বিক অবস্থা পর্যালোচনা করে প্রতিবেদন দেওয়া হবে।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট