চট্টগ্রাম বুধবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

নতুন সড়ক আইন

মন্ত্রী বললেন কার্যকর নির্দেশনা পায়নি প্রশাসন

আল-আমিন সিকদার

১৮ নভেম্বর, ২০১৯ | ২:৫৯ পূর্বাহ্ণ

ঘটনাবহুল নাটকীয়তার পর রবিবার (গতকাল) থেকে নতুন সড়ক আইন কার্যকরের ঘোষণা দিলেও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের সেই ঘোষণা চট্টগ্রামে কার্যকর হয়নি।

স্থানীয় প্রশাসনের বক্তব্য, আইন বাস্তবায়নের নির্দেশনা এখনও আসেনি। তাই নতুন আইন সম্পর্কে গাড়ির চালক-মালিকদের সচেতনতা বৃদ্ধিতে প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন তারা। পরিবহন সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মাঠপর্যায়ে সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা না দিয়ে মন্ত্রীর নতুন সড়ক আইন বাস্তবায়নের বিষয়টি অনেকটা, ‘ঘোড়ার আগে গাড়ি জুড়িয়ে দেয়া’ সেই প্রবাদের মতো।
এই অবস্থায় আদৌ সড়কের নতুন আইন কার্যকরীভাবে বাস্তবায়ন করা সম্ভব হবে কিনা, সেই সংশয় রয়েই যাচ্ছে। গতকাল (রবিবার) রাজধানীর বসুন্ধরার আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটিতে সড়ক নিরাপত্তা ও সড়ক পরিবহন আইন নিয়ে আলোচনা সভায় নতুন আইন কার্যকর শুরু

হয়েছে বলে জানান মন্ত্রী।

গত ২২ অক্টোবর নতুন ‘সড়ক পরিবহন আইন-২০১৮’ কার্যকরের তারিখ ঘোষণা করে গেজেট জারি করে সরকার। ১ নভেম্বর থেকে নতুন আইন বাস্তবায়নের ঘোষণাও দেয়া হয়। তবে নতুন আইনে শাস্তি ও জরিমানার হার বেশি হওয়ায় প্রথমেই এই আইন কার্যকরে যায়নি সরকার। পর পর দুই সপ্তাহ নতুন আইনে কোন মামলা না করার নির্দেশনা দেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। সে অনুযায়ী নতুন আইনে কোন মামলা করেনি ট্রাফিক পুলিশ। চালিয়েছে গাড়ির চালক-মালিকদের সচেতনতা বৃদ্ধিতে প্রচারণা। তবে এরইমধ্যে দেশের বিভন্ন জায়গায় নতুন সড়ক আইনের বেশকিছু ধারা বাতিলের দাবিতে ধর্মঘট পালন করেছে চালকরা। পাশাপাশি কমে গেছে সড়কে ফিটনেসবিহীন গাড়ির চলাচল। এতে জিম্মি হয়ে পড়েছে সাধারণ পথচারীরা। নতুন এ আইন বাস্তবায়ন হলে পরিবহণ ধর্মঘটের সৃষ্টি হতে পারে। যে কারণে মন্ত্রী আইন কার্যকরের ঘোষণা দিলেও নির্দেশনার দোহাই দিয়ে বাস্তবায়নে যায়নি প্রশাসন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক নগর ট্রাফিক পুলিশের এক কর্মকর্তাও একই কারণে আইন কার্যকর না করার ইঙ্গিত দিয়েছেন। তিনি পূর্বকোণকে বলেন, ‘নতুন সড়ক আইনে আইন অমান্যকারীদের শাস্তি ও জরিমানার হার অনেক বেশি। সে ভয়ে আইন ঘোষণার পর থেকে সড়কে গাড়ির সংখ্যা অনেক কমে গেছে। যার প্রভাব পড়েছে সাধারণ যাত্রীদের উপর। আইন বাস্তবায়নের আগে আমরা তাই নতুন আইন সম্পর্কে গাড়ির চালক ও মালিকদের সচেতন করছি। গাড়ির মালিক-চালকরা আগে যে টাকা জরিমানা দিতো তা অনেক কম ছিল। নতুন আইনের জরিমানার সাথে তাই তাদেরকে আমরা মানিয়ে নেয়ার চেষ্টা করছি। এখনই কার্যকরের দিকে গেলে হিতে বিপরীত হতে পারে। তাছাড়া বেশকিছু চক্র চাইছে এমন কোন ঘটনা ঘটুক যাতে দেশে অরাজকতা সৃষ্টি হয়। যাতে এরা তার ফায়দা লুটতে পারে। আমরা এসব কারণ বিবেচনা করে এখনই নতুন আইন বাস্তবায়নে যাচ্ছি না। আমরা চেষ্টা করছি নতুন এ আইনের সাথে চালক-মালিকদের অভ্যস্ত করে তুলতে’।

ট্রাফিক পুলিশের এই কর্মকর্তার সন্দেহ অনেকটা সত্যি বলেই ধারণা পাওয়া যায় চট্টগ্রাম নাজিরহাট-খাগড়াছড়ি বাস-মিনিবাস মালিক সমিতির প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক মো. শাহজাহানের বক্তব্যে। তিনি বলেন, ‘নতুন আইন কার্যকরের পর থেকে আমাদের ড্রাইভারের সংখ্যা কমে গেছে। এতে অনেক বাস প্রতিদিন বসে থাকে। প্রচুর লোকসান হচ্ছে আমাদের। ২৫০ টা বাসের মধ্যে আমাদের ৮০ টা বাস বন্ধ চালকের অভাবে। কারণ নতুন আইনে লাইসেন্সের ওপর জোর দিয়েছে সরকার। আমাদের যে চালকরা আছে তারা সবাই ভারী গাড়ি চালানোর লাইসেন্স পাননি। তবে মধ্যম ক্যাটাগরির লাইসেন্স দিয়ে তারা এতদিন গাড়ি চালাতো। এখন জরিমানার ভয়ে গাড়ি চালাচ্ছে না তারা। মাঝখানে নতুন এ আইন কার্যকর করতে প্রশাসনকে বেশকিছু দিন সময় বেধে দেন। তাই অনেক চালক এখনো গাড়ি চালাচ্ছে। যদি আইন কার্যকর শুরু হয় তাহলে এমনিতেই সড়কে গাড়ির সংখ্যা কমে আসবে। কোন ধর্মঘট ছাড়াই চালক সংকটের কারণে গাড়ি চলবে না’।

এদিকে নতুন সড়ক আইনকে পুঁজি করে যাতে ট্রাফিক পুলিশের সদস্যরা রাস্তায় কোন অনৈতিক সুবিধা গ্রহণ না করেন সে ব্যাপারে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেন চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন বাস মালিক গ্রুপের মহাসচিব বেলায়েত হোসেন বেলাল।
নগর ট্রাফিক পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার মোস্তাক আহমেদ পূর্বকোণকে বলেন, ‘সড়কে নতুন আইন বাস্তবায়নে এখনো কোন নির্দেশনা পাইনি। তাই আমরা এখনো নতুন আইন সম্পর্কে গাড়ির চালক-মালিকদের সচেতনতা বৃদ্ধিতে প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছি। তবে বিভিন্ন অনিয়মের কারণে প্রতিদিনই গাড়ি আটক হচ্ছে। নতুন আইন সম্পর্কে চালক-মালিক ও পথচারীদের সচেতনতার প্রয়োজন আছে’।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট