চট্টগ্রাম শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

সেই ২০ টন পচা পেঁয়াজের আমদানিকারক আয়াছ!

আড়তে ১৯৮ টন নতুন পেঁয়াজ

খাতুনগঞ্জে অভিযানে জরিমানা মূল্য তালিকায় ৮৫, পাইকারিতে বিক্রি ১৫০ টাকা। প্লেনে চড়ে মঙ্গলবার দেশে আসছে মিসরীয় পেঁয়াজ

নিজস্ব প্রতিবেদক

১৭ নভেম্বর, ২০১৯ | ৩:৫০ পূর্বাহ্ণ

পেঁয়াজের বাজার অস্থিরতার মধ্যে গতকাল শনিবার খাতুনগঞ্জের বিভিন্ন আড়তে ১৯৮ টন পেঁয়াজ এসেছে। এর মধ্যে চীন ও মিশর থেকে আনা ১১৪ টন পেঁয়াজ বন্দরে খালাস হয়েছে এবং মিয়ানমার থেকে আসা ৮৪ টন পেঁয়াজ বন্দরনগরীর পাইকারি বাজার খাতুনগঞ্জের বিভিন্ন আড়তে এসেছে। গত বৃহস্পতিবার রাতে নগরীর খাতুনগঞ্জের সিটি কর্পোরেশনের ময়লার ভাগাড় থেকে ২০ টন পচা পেঁয়াজ সরাতে হয়েছে পরিচ্ছন্ন কর্মীদের।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গুদামে পচে যাওয়ায় খাতুনগঞ্জের আমদানিকারক আয়াছ উদ্দিন এসব পচা পেঁয়াজ ফেলে দিয়েছেন। তিনি মিয়ানমার থেকে ১২০ টন পেঁয়াজ আমদানি করেছিলেন। এরমধ্যে প্রায় ৩০ টন পেঁয়াজ পচে গেছে। গতকাল শনিবার মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে আমদানিকারক আয়াছ উদ্দিন জানান, মাছ ধরার ট্রলারে মিয়ানমার থেকে পেঁয়াজ আমদানি করা হচ্ছে। মূলত এসব ট্রলার আমদানি ভোগ্যপণ্য বহনযোগ্য নয়। উপরে ত্রিপল ঢেকে পেঁয়াজ আনতে হচ্ছে। আয়াছ বলেন, আমি ১২০ টন পেঁয়াজ আমদানি করেছিলাম। প্রায় ১২দিন সাগর পথ পাড়ি দিয়ে পেঁয়াজ বহনকারী ট্রলার ঘূর্ণিঝড় বুলবুল এর আগে বন্দরে পৌঁছে। ঘূর্ণিঝড়ের সময় আরো ৩/৪দিন পেঁয়াজগুলো ট্রলারে ছিলো। এরমধ্যে বৃষ্টির পানিতে এসব পেঁয়াজ ভিজেছে। খাতুনগঞ্জে গুদামে আনার পর এ কয়দিনে প্রায় ৩০ টন পেঁয়াজ পচে গেছে।

আয়াছ বলেন, আমি পেশাদার পেঁয়াজ ব্যবসায়ী না হবার কারণে বিষয়টি বুঝতে পারিনি। প্রায় ৩০ লাখ টাকার আর্থিক ক্ষতি হয়েছে। চাক্তাই ব্যবসায়ী সমিতির সহসভাপতি আবছার উদ্দিন জানান, বাজারে নতুন পেঁয়াজ না আসা পর্যন্ত সমস্যা পুরোপুরি সমাধান হবে না। সংকটে পেঁয়াজ ব্যবসা করতে গিয়ে কেউ দেউলিয়া হয়েছে আবার কেউ আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ হয়েছে। এদিকে চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কম থাকায় আধ পচা পেঁয়াজও বিক্রি হচ্ছে নগরীর খুচরা বাজারে। এদিন খাতুনগঞ্জ ও চাক্তায়ের পাইকারি বাজারের বিভিন্ন এলাকায় পচা পেঁয়াজের কিছু বস্তা পড়ে থাকতেও দেখা গেছে।
চট্টগ্রাম সামুদ্রিক বন্দরের উদ্ভিদ সংগনিরোধ কর্তৃপক্ষের উপ-পরিচালক আসাদুজ্জামান বুলবুল জানান, চট্টগ্রাম বন্দরে শনিবার মিশর থেকে আনা ৫৮ টন এবং চীন থেকে আনা ৫৬ টন পেঁয়াজ খালাস হয়েছে। গত ২৯ সেপ্টেম্বর থেকে শনিবার পর্যন্ত মোট ৬ হাজার ১৪১ টন পেঁয়াজ চট্টগ্রাম বন্দর থেকে ছাড় হয়েছে। এই সময়ের মধ্যে পেঁয়াজ আনতে আমদানি অনুমতিপত্র (আইপি) নেওয়া হয়েছে ৭১ হাজার ৮০২ টনের। এরমধ্যে গত বুধবার পর্যন্ত ৬৬ হাজার ১৬২ টনের আইপি নেওয়া হয়েছিল। এরপর গত কয়েক দিনে আরও ৫ হাজার ৬৪০ টন পেঁয়াজ আমদানির অনুমতিপত্র খোলা হয়েছে বলে জানান আসাদুজ্জামান বুলবুল। এর আগে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে পেঁয়াজ এসেছে ৫ হাজার ৯৪৭ টন। শুক্রবার আরও ৮০ টন পেঁয়াজ ছাড় হয়।

খাতুনগঞ্জের হামিদুল্লাহ মার্কেট কাঁচামাল আড়তদার সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. ইদ্রিস বলেন, “আজ মিয়ানমার থেকে আমদানি করা ছয় ট্রাক পেঁয়াজ (৮৪ টন) খাতুনগঞ্জে এসেছে। বন্দর থেকে ছাড় হওয়া পেঁয়াজ গত দুই দিনে খাতুনগঞ্জে আসেনি। সেগুলো দেশের অন্য জেলার পাইকাররা কিনে নিয়ে গেছে।” গতকাল শনিবার দুপুরে নগরীর ফিরিঙ্গি বাজার ব্রিজঘাট এলাকায় দেখা যায়, কয়েকজন মিলে আধ পচা পেঁয়াজ থেকে ভালো পেঁয়াজ বেছে নিয়ে রোদে শুকাচ্ছে। এদিকে গতকাল বিকেলে খাতুনগঞ্জে যায় চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের ভ্রাম্যমাণ আদালত।

নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আবদুস সামাদ শিকদারের নেতৃত্বে পরিচালিত অভিযানে ছিলেন আরেক নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট গালিব চৌধুরী। মূল্য তালিকার চেয়ে বেশি দামে পেঁয়াজ বিক্রি করায় খাতুনগঞ্জের বার আউলিয়া বাণিজ্যালয়কে ৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট গালিব জানান মূল্য তালিকায় ৮৫ টাকা লেখা থাকলেও তারা মিয়ানমারের পেঁয়াজ পাইকারিতে বিক্রি করছিল ১৫০ টাকা কেজি দরে।
“আরও কিছু প্রতিষ্ঠানে গিয়ে তাদের কাছে পেঁয়াজ কেনার ‘ইন ভয়েস’ এবং বিক্রির রশিদ পাওয়া যায়নি। তাদের সতর্ক করা হয়েছে। অভিযান চলবে।”
প্লেনে চড়ে মঙ্গলবার দেশে আসছে মিসরীয় পেঁয়াজ
মিসর থেকে কার্গো বিমানযোগে আমদানি করা পেঁয়াজের প্রথম চালান আগামী মঙ্গলবার ঢাকায় পৌঁছাবে বলে জানিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।

পর্যায়ক্রমে অন্য আমদানিকারকদের আমদানি করা পেঁয়াজও কার্গো উড়োজাহাজে ঢাকায় পৌঁছাবে। মন্ত্রণালয়ের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, এস আলম গ্রুপ বিপুল পরিমাণ পেঁয়াজ আমদানি করছে। এটি তার প্রথম চালান। এর আগে গত শুক্রবার বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, দেশে পেঁয়াজের সরবরাহ ও মূল্য স্বাভাবিক রাখতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে টিসিবির মাধ্যমে সরাসরি তুরস্ক থেকে, এস আলম গ্রুপ মিসর থেকে, বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান আফগানিস্তান ও সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে জরুরিভিত্তিতে কার্গো উড়োজাহাজযোগে পেঁয়াজ আমদানি করবে।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, সম্প্রতি ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের কারণে টেকনাফ স্থলবন্দর, চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দরসহ বিভিন্ন স্থানে পেঁয়াজ পরিবহনে কয়েক দিনের জন্য সমস্যা হয়েছিল। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে এ পরিস্থিতি মোকাবিলায় জরুরিভিত্তিতে উল্লিখিত পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। আশা করা হচ্ছে, খুব কম সময়ের মধ্যে পর্যাপ্ত পেঁয়াজ বাজারে চলে আসবে এবং মূল্য স্বাভাবিক হয়ে আসবে।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, দেশের গোয়েন্দা সংস্থা ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এ বিষয়ে তৎপর। কেউ পেঁয়াজ অবৈধ মজুত করলে, কারসাজি করে অতি মুনাফা অর্জনের চেষ্টা করলে বা অন্য কোনো উপায়ে বাজারে পেঁয়াজের সংকট সৃষ্টির চেষ্টা করলে, তাদের বিরুদ্ধে আইন মোতাবেক কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। বাজার মনিটরিং করার জন্য বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের বেশ কয়েকটি টিম কাজ করছে। জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর বাজার অভিযান জোরদার করেছে। এছাড়া দেশের বিভিন্ন স্থানে উৎপাদিত দেশীয় পেঁয়াজ বাজারে আসতে শুরু করেছে।

উল্লেখ্য, দাম কম ও সহজ পরিবহনের কারণে প্রতিবেশী দেশ ভারত থেকে প্রয়োজনীয় পেঁয়াজ আমদানি করা হয়। তবে এ বছর ভারতের মহারাষ্ট্র ও অন্য এলাকায় বন্যার কারণে পেঁয়াজের ফলন ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ফলে কিছুদিন আগে রফতানির ক্ষেত্রে ভারত প্রতি টন পেঁয়াজের মিনিমাম এক্সপোর্ট প্রাইস (এমইপি) নির্ধারণ করে। এরপর, গত ২৯ সেপ্টেম্বর থেকে ভারত কর্তৃপক্ষ পেঁয়াজ রফতানি বন্ধ ঘোষণা করে। বিকল্প হিসেবে বাংলাদেশ মিয়ানমার থেকে এলসি এবং বর্ডার ট্রেডের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় পেঁয়াজ আমদানি শুরু করে। পাশাপাশি মিসর ও তুরস্ক থেকেও এলসির মাধ্যমে পেঁয়াজ আমদানি শুরু করা হয়। সম্প্রতি মিয়ানমারও পেঁয়াজের মূল্যবৃদ্ধি করেছে। ফলে বাংলাদেশের বাজারেও এর প্রভাব পড়েছে।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট