চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪

৯ মামলার আসামি হলেন টেকনাফ আ’লীগের সভাপতি

কক্সবাজার সংবাদদাতা

১৬ নভেম্বর, ২০১৯ | ৩:৫০ অপরাহ্ণ

কেন্দ্রের সকল নির্দেশ অমান্য করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ের তালিকাভূক্ত শীর্ষ ইয়াবা ব্যবসায়ী আওয়ামীলীগের সভাপতি হলেন। শুক্রবার (১৫ নভেম্বর) সন্ধ্যায় টেকনাফ সদর ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের ত্রিবার্ষিক সম্মেলনে তালিকা ভূক্ত ইয়াবা ব্যবসায়ী হাম জালালকে সভাপতি ঘোষণা করা হয়। হাম জালালেরর বিরুদ্ধে মাদক ও অস্ত্র আইনের অন্তত ৯টি মামলা রয়েছে।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ের মাদক ব্যবসায়ীর তালিকায় শীর্ষে থাকা টেকনাফ সদর ইউনিয়নের ছোট হাবিবপাড়ার হাজী খলিলুর রহমানের ছেলে হাম জালাল । এ বছরের জানুয়ারীতে ৩০০০ ইয়াবা সহ টেকনাফে পুলিশের হাতে আটক হয়েছিলো হাম জালাল। এর আগে টেকনাফ থেকে চট্টগ্রামে ইয়াবা নেয়ার সময় চট্টগ্রামের লোহাগাড়ায় ইয়াবা নিয়ে পুলিশের হাতে ধরা পড়েছিলো এই হাম জালাল। কিছুদিন আগে মিয়ানমার থেকে ইয়াবা পাচারের সময় পুলিশির সাথে বন্দুকযুদ্ধে তার ছোট ভাই ইয়াবা ব্যবসায়ী বাহাদুর নিহত হয়েছে। শীর্ষ এই ইয়াবা ব্যবসায়ী কিছুদিন আগে জেল থেকে জামিনে বের হয়। ইয়াবা সহ জামিনে এসে আওয়ামীলীগের সভাপতি বনে যায় এই ইয়াবা ব্যবসায়ী। অথচ কোন ইয়াবা ব্যবসায়ী বা বিতর্কিত ব্যক্তিকে আওয়ামীলীগের কোন পদে না আনার নির্দেশনা দিয়েছিলো কেন্দ্রীয় আওয়ামীলীগ।

টেকনাফের আওয়ামীলীগ নেতারা জানিয়েছেন, হাম জালালকে কাউন্সিলে প্রার্থী হতে না দিতে জেলা আওয়ামীলীগের নির্দেশনা ছিলো। কিন্তু উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক নুরুল বশর জেলা আওয়ামীলীগের নির্দেশনা অমান্য করে হাম জালালকে ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি ঘোষণা করে। উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক নুরুল বশরের কারণেই হাম জালাল আওয়ামীলীগের সভাপতি হতে পেরেছে।

টেকনাফ থানার ওসি প্রদীপ কুমার দাশ জানিয়েছেন, হাম জালাল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তালিকাভুক্ত ইয়াবা ব্যবসায়ী। তার বিরুদ্ধে ৯টি মামলা রয়েছে। গত ২৬ জানুয়ারী ৩ হাজার ইয়াবা সহ টেকনাফ থানায় গ্রেপ্তার হয়েছিলেন হাম জালাল। তার পুরো পরিবার এই ইয়াবা ব্যবসায় জড়িত। কিছুদিন আগে জামিনে এসে হাম জালাল আবারও ইয়াবা ব্যবসা শুরু করেছে বলে পুলিশের কাছে তথ্য আছে। হাম জালালকে আটক করার চেষ্টা করছে টেকনাফ থানা পুলিশ।

ওসি প্রদীপ বলেন, টেকনাফকে মাদক মুক্ত করার জন্য পুলিশ দিন রাত কাজ করে যাচ্ছে। সেখানে হাম জালালের মতো একজন চিহ্নিত ও তালিকাভূক্ত ইয়াবা ব্যবসায়ী আওয়ামীলীগের সভাপতি হতে পারা খুবই দুঃখজনক।

শুক্রবার টেকনাফ সদর ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সম্মেলন ও কাউন্সিলের বিশেষ অতিথি জেলা পিপি এড. ফরিদুর আলম বলেন, যেখানে আওয়ামীলীগ সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মাদকের বিরুদ্ধে শুদ্ধি অভিযান চলছে, সকল মাদক ব্যবসায়ী ও বিতর্কিত ব্যক্তিদের দলে না রাখতে কেন্দ্রীয় নির্দেশনা আছে। সেখানে হাম জালালের মতো চিহ্নিত ইয়াবা ব্যবসায়ীকে সভাপতি পদে প্রার্থী করেন উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক নুরুল বশর। সম্মেলন চলাকালেই জেলা আওয়ামীলীগের পক্ষে হাম জালালকে বাদ দিতে নির্দেশনা দেয়া হয়েছিলো। কিন্তু টেকনাফ উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারনণ সম্পাদক নুরুল বশর কেন্দ্র বা জেলা আওয়ামীলীগের কোন নির্দেশ মানেনি। তাই সম্মেলনে উপস্থিত জেলা আওয়ামীলীগ নেতারা কাউন্সিল না করেই চলে আসেন।

এ ব্যাপরে জানতে চাইলে টেকনাফ উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক নুরুল বশর জানান, হাম জালাল দীর্ঘদিন ধরে আওয়ামীলীগ করছেন। তার পুরো পরিবার আওয়ামীলীগের রাজনীতির সাথে জড়িত। হাম জালালের বিরুদ্ধে ইয়াবা পাচারের অভিযোগ ও মামলা নেই। কাউন্সিলে দলের নেতাকর্মীদের সভাপতি প্রার্থী হয়েছেন।

এ ব্যাপারে জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক মুজিবুর রহমান বলেন, হাম জালালের বিরুদ্ধে ইয়াবা ব্যবসার সুনির্দিষ্ট অভিযোগ থাকার বিষয়টি টেকনাফ উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদককে একাধিকবার জানানো হয়েছিলে। বার বার নিষেধ করার পরও দলের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে হাম জালালকে উপজেলা সাধারণ সম্পাদক নুরুল বশর সভাপতি ঘোষনা করার বিষয়টি দুঃখজনক। দলের গঠনতন্ত্রের বিরোধী ভাবে কাউন্সিল করায় টেকনাফ সদর ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের কাউন্সিলের সকল কার্যক্রম বাতিল করেছে জেলা আওয়ামীলীগ। এই বিষয়ে রোববার (১৭ নভেম্বর) জরুরী সভা করবে কক্সবাজার জেলা আওয়ামীলীগ।

পূর্বকোণ/পিআর

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট