চট্টগ্রাম বুধবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

ছয় বছরে মাত্র চার ওয়ার্ড কমিটি

নগর ছাত্রলীগ

ইফতেখারুল ইসলাম

১৬ নভেম্বর, ২০১৯ | ৩:২৬ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রাম মহানগর ছাত্রলীগের কমিটির বয়স ছয় বছর দুই সপ্তাহ। এখনো ওয়ার্ড এবং থানা পর্যায়ে কমিটি গঠন করতে পারেনি বর্তমান কমিটি। এ কারণে ছাত্রলীগের তৃণমূল পর্যায়ে নেতৃত্বজট সৃষ্টি হচ্ছে। কেউ কেউ সুযোগ না পেয়ে রাজনীতি বিমুখ হয়ে পড়ছে।

একাধিক ছাত্রলীগ নেতার সাথে আলাপকালে তারা জানান, ছাত্রলীগের ওয়ার্ড এবং কলেজ পর্যায়ের কমিটিগুলোর মেয়াদ কবে শেষ হয়েছে তা তারা নিজেরাও জানে না। কোন কোন কমিটির বয়স ২০বছরের অধিক। অনেক ছাত্রনেতার সন্তানের বয়স ছাত্র রাজনীতি করার মত হয়ে যাচ্ছে। দীর্ঘ দিন এই পদে থাকতে তাদের অনেকেই অনীহা দেখাচ্ছে। তবুও জট খুলছে না। আসছে না নতুন নেতৃত্ব।

এদিকে দীর্ঘ দিন নতুন নেতৃত্ব না আসায় সেসব ওয়ার্ড এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নতুন করে কমিটি দিতে ভয় পাচ্ছে নগর ছাত্রলীগ। কারণ একটি কমিটিতে যে পরিমাণ পদ তার কয়েকগুণ বেশি পদ প্রত্যাশী ওইসব এলাকায় তৈরি হয়েছে। কাকে বাদ দিয়ে কাকে রাখবেন তা নিয়ে চলছে দ্বন্দ্ব। এর বাইরে আছে গ্রুপিং। কার অনুসারী কয়টি পদ পাবে। প্রধান পদ কার অনুসারী পাবে তা নিয়েও আছে সমীকরণ। এদিকে, নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীনের অনুসারীরা বর্তমান কমিটি বাতিলের দাবি জানিয়ে দীর্ঘ দিন ধরে আন্দোলন করছে। মেয়াদ উত্তীর্ণ কমিটির বাতিলের দাবিতে সভা-সমাবেশও করেছে তারা। তারা সম্মেলনের মাধ্যমে নতুন কমিটি চায়। এদিকে, নগর ছাত্রলীগ ওয়ার্ড এবং থানা পর্যায়ে কমিটি গঠনের জন্য যে প্রাথমিক তালিকা তৈরি করছে তাও একতরফাভাবে করা হচ্ছে বলে একাংশের অভিযোগ।

তবে নগর ছাত্রলীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক জাকারিয়া দস্তগীর পূর্বকোণকে বলেছেন, কমিটি মেয়াদোত্তীর্ণ হয়ে গেছে একথা সত্য। সম্মেলন করার জন্য কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের কাছে তারা গিয়েছিলেন উল্লেখ করে বলেন, যখনই সম্মেলনের দিন-তারিখ নির্ধারণ করার একটি প্রস্তুতি চলছিল তখনই ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় রদবদল হয়ে যায়। এখন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের জাতীয় সম্মেলনের জন্য দেশব্যাপী প্রস্তুতি চলছে। এই মুহুর্তে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ থেকে নগরের সম্মেলনের নির্দেশনা আসার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে। তবে সম্মেলনের জন্য প্রাথমিক প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ১৫টি থানার প্রাথমিক তালিকা তৈরি করা হয়েছে। ১১টি ওয়ার্ডে সভা করে প্রাথমিক তালিকা তৈরি করা হয়েছে। তবে এখনো কোন থানা বা ওয়ার্ডে কমিটি ঘোষণা করা হয়নি। এছাড়া মহসিন কলেজ, সিটি কলেজ এবং এমইএস কলেজে কমিটি গঠনের লক্ষে বেশ ভাল অগ্রগতি হয়েছে। কেন্দ্রের নির্দেশ পাওয়ার সাথে সাথে সম্মেলন করা হবে। এক পক্ষ তৃণমূল পর্যায়ে তালিকা তৈরির প্রক্রিয়াকে এক তরফা হিসেবে আখ্যা দিলেও তিনি তা মানতে নারাজ। তিনি বলেন, যারা প্রকৃত ছাত্র এবং মাঠের রাজনীতি করে তারাই কমিটিতে স্থান পাবে। এখানে কে কার অনুসারী তা বিবেচ্য বিষয় নয়।
প্রসঙ্গত, নগর ছাত্রলীগের ২৪জন বিশিষ্ট কমিটি ঘোষণা করা হয় ২০১৩ সালের ৩০অক্টোবর। এই কমিটিতে বর্তমান সিটি মেয়র আ.জ.ম নাছির উদ্দিন এবং অন্যান্য কলেজ, থানা ও ওয়ার্ড পর্যায়ের নেতারা আকাঙ্খানুযায়ী পদ পদবি না পাওয়ায় ব্যাপক অসন্তোষ সৃষ্টি হয়। এমনকি চট্টগ্রাম সার্কিট হাউজে একটি সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটে। দীর্ঘ ৮ মাস পর ২০১৪ সালের ১৪ জুন সর্ববৃহৎ ২৫১ জনের কমিটি গঠন করা হয়। কমিটিতে অছাত্র এবং বিবাহিতদের অনেকেই স্থান পায় বলে বিতর্ক উঠে। অসন্তোষ রোধে ওই কমিটি ২৫১ থেকে ২৯১ জনে উন্নীত করা হয়।

ছয় বছরে বর্তমান কমিটি ১, ২, ১০, ১৮ এই ৪ টি ওয়ার্ড ছাত্রলীগের কমিটি দিতে সক্ষম হয়েছে। অপরদিকে, ত্যাগী নেতাকর্মীদের বাদ দিয়ে নবাগত ও অসাংগঠনিকদের পদ-পদবি দেয়া হয়েছে দাবি করে দুইটি ওয়ার্ডে সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিনের অনুসারীদের স্বাক্ষরিত পাল্টা কমিটি ঘোষণা করা হয়। আগামীতে ওয়ার্ড এবং থানা পর্যায়ে কমিটি ঘোষণা করা হলে পাল্টা কমিটি ঘোষণার আশঙ্কা উড়িয়ে দেয়া যায় না বলে একাধিক ছাত্রলীগ নেতা জানান।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট