চট্টগ্রাম বুধবার, ১৭ এপ্রিল, ২০২৪

আ.লীগের কেন্দ্রীয় শিল্প ও বাণিজ্য উপ কমিটির আলোচনা সভা

প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে ক্ষুধাকে জয় করেছি : তথ্যমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক

১৬ নভেম্বর, ২০১৯ | ৩:১৩ পূর্বাহ্ণ

তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, যদি বিএনপি ও তার মিত্রদের নেতিবাচক রাজনীতি না থাকতো তাহলে গত দশ বছরে বাংলাদেশ আরো বহুদুর এগিয়ে যেতে পারতো। আমরা পোস্টারে ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশ চাই একথা লিখি না। লিখি দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশ চাই। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ক্ষুধাকে জয় করেছি আমরা। তাই অলিগলিতে কেউ আজ বলে না, মা আমাকে এক মুঠো বাসি ভাত দাও। গতকাল শুক্রবার চট্টগ্রামের ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারের বঙ্গবন্ধু কনফারেন্স হলে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় শিল্প ও বাণিজ্য উপ কমিটি আয়োজিত ‘শিল্প ও বাণিজ্য ক্ষেত্রে উন্নয়নের এক দশক’ শীর্ষক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি একথা বলেন। আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য ও শিল্প ও বাণিজ্য উপ কমিটির চেয়ারম্যান কাজী আকরাম উদ্দিন আহমেদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় প্রধান আলোচক ছিলেন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা প্রফেসর ড. অনুপম সেন। বিশেষ অতিথি ছিলেন সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন, সংসদ সদস্য এম এ লতিফ, চট্টগ্রাম চেম্বার সভাপতি মাহবুবুল আলম। স্বাগত বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের শিল্প ও বাণিজ্য সম্পাদক সাবেক এমপি মো. আব্দুচ ছাত্তার। তথ্যমন্ত্রী বলেন, সবকিছুতে না বলার যে নেতিবাচক রাজনীতি দেশের উন্নয়নের ক্ষেত্রে অন্যতম প্রতিবন্ধকতা। আমরা মনে করি সমালোচনা পথচলাকে শাণিত করে। সমালোচনা ভুল শুদ্ধ করার ক্ষেত্রে সহায়তা করে। কিন্তু অন্ধের মতো সমালোচনা দেশ রাজনীতি ও সমাজ কোনটির জন্য সহায়ক নয়। সমালোচনার পাশাপাশি ভালো কাজের প্রশংসাও থাকতে হবে। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ নতুন উচ্চতায় উন্নীত হয়েছে। দশ বছর আগে আমাদের মাথাপিছু আয়

ছিল ৬’শ ডলার। বর্তমানে মাথাপিছু আয় ২ হাজার ডলার ছুঁই ছুঁই। ২০০৮ সালে আমাদের দেশে দারিদ্র সীমার নিচে বাস করতো ৪১ শতাংশ মানুষ। বর্তমানে দারিদ্রসীমার নিচে বাস করে ২০ শতাংশ মানুষ। অর্থাৎ দারিদ্র কমে অর্ধেকে নেমে এসেছে।

মন্ত্রী বলেন, ৫০’এর দশকের মাঝামাঝি সময়ে আমাদের দেশ খাদ্য ঘাটতির জনপদে রূপান্তরিত হয়। তখন এই জনপদে লোক সংখ্যা ছিল ৪ কোটি ৭০ লাখ। সেই থেকে এখন লোকসংখা দাঁড়িয়েছে ১৬ কোটি ৭০ লাখ। নগরায়ন, রাস্তা প্রশস্তকরণ, স্থাপনা নির্মাণসহ বিভিন্ন কারণে গত ৬০ বছরে মাথা পিছু কৃষি জমির পরিমাণ কমেছে ২০ থেকে ২৫ শতাংশ। বাংলাদেশ খাদ্যে শুধু স্বয়ংসম্পূর্ণ নয় খাদ্যে উদ্বৃত্তের দেশ রূপান্তর হয়েছে। দেশে যেখানে মাথাপিছু জমির পরিমাণ পৃথিবীতে সর্বনিম্ম এবং মানুষের ঘনত্ব পৃথিবীতে সর্বোচ্চ। দেশের ১৫ কোটি মানুষ মোবাইল ফোন ব্যবহার করে। সাড়ে ৩ কোটি মানুষ ফেসবুক ব্যবহার করে। চট্টগ্রামের রিকশাওয়ালা ভোলায় পরিবারের কাছে মোবাইলে টাকা পাঠায়। বিদেশে সন্তানের সঙ্গে ভিডিও কলে কথা বলে। ডিজিটাল বাংলাদেশ এখন বাস্তব। দেশের ৯৪ শতাংশ মানুষ বিদ্যুৎ পাচ্ছে। এখন গ্রামে এয়ার কন্ডিশনারের শো’রুম গড়ে উঠছে। মুজিব বর্ষ শেষে শতভাগ মানুষ বিদ্যুৎ পাবেন। এখন কলকাতার মানুষ বাংলাদেশে বেড়াতে আসে।

ড. অনুপম সেন বলেন, সরকার গঠনের পর কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাহসী উদ্যোগ ছিল। ২০০৮ সালে যুক্তরাষ্ট্রে মহামন্দা শুরু হয়। বিশ্বজুড়ে অর্থনৈতিক মন্দা দেখা দেয়। জার্মানি ছাড়া ইউরোপের প্রবৃদ্ধি ঋণাত্বক হয়। বাংলাদেশে প্রথমে মন্দার ধাক্কা লাগলেও তা কাটিয়ে উঠতে সক্ষম হয়। দেশে বিদ্যুৎ ও শিক্ষায় বড় সাফল্য এসেছে। চীন এখন ম্যানুফেকচারিং হাব। এর আগে ছিল জাপান, যুক্তরাষ্ট্র, ইংল্যান্ড। আগামীতে বাংলাদেশ হবে ম্যানুফেকচারিং হাব। সবজি, মিঠাপানির মাছ উৎপাদনে আমরা মাইলফলক অর্জন করেছি।

সিটি মেয়র আ জ ম নাছির বলেন, জলাবদ্ধতা নিরসনে প্রধানমন্ত্রী বরাদ্দ দিয়েছেন। সিডিএ প্রকল্প নিয়েছে। এটি বাস্তবায়নে অনেক সমস্যা রয়েছে। ফিজিবিলিটি স্ট্যাডি, ড্রয়িং ডিজাইন হচ্ছে। আগে পুরো শহরে ড্রেনেজ ব্যবস্থা ছিল না। যে ড্রেন আছে ৫-১০ মিনিটের বৃষ্টিতে পাহাড়ি বালুতে তা ভরে যায়। চসিক নতুন খাল খননের উদ্যোগ নিয়েছে। জলাবদ্ধতা নিয়ে অপরাজনীতি করা বাঞ্ছনীয় নয়। বঙ্গবন্ধু কন্যার ধারাবাহিকভাবে দেশ পরিচালনার সুফল জনগণ পেতে শুরু করেছেন। বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা প্রতিষ্ঠায় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করতে হচ্ছে তাঁকে। দেশের অর্থনীতি কৃষি নির্ভর। শিল্পনির্ভর করতে হবে। এ লক্ষ্যে কাজ করছেন প্রধানমন্ত্রী। বে টার্মিনাল বাস্তবায়নের চ্যালেঞ্জ দূর হয়েছে। বন্দরের সক্ষমতা বাড়াতে যা যা করা দরকার সরকার করছে। নালা, খাল, নদী কারা দখল করছেন? অন্য গ্রহের কেউ তো নয়। নাগরিকদের দায়িত্ব সম্পর্কে সচেতন হতে হবে।

এমএ লতিফ বলেন, একসময় রাজনীতিকদের ওপর মানুষের আস্থা ছিল না। কিন্তু শেখ হাসিনা প্রমাণ করে দিয়েছেন এ দেশ মানবিক দেশ, অর্থনৈতিক ম্যাজিকের দেশ। চীন, জাপান, কোরিয়া, মালয়েশিয়া জনসম্পদের কারণে এগিয়ে গেছে। টানেল হচ্ছে। এর জন্য চট্টগ্রামের মানুষকে আন্দোলন করতে হয়নি। একটি শাহ আমানত সেতুর জন্য ১২ বছর আন্দোলন করতে হয়েছিল। পাওয়ার এনার্জি, অবকাঠামো ৫০ বছরের জন্য করে দিচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী। এটি রক্ষার জন্য আমাদের সন্তানদের কারিগরি শিক্ষামুখী করতে হবে।

সভাপতির বক্তব্যে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় শিল্প ও বাণিজ্য উপ কমিটির সভাপতি কাজী আকরাম উদ্দিন আহমদ বলেন, যে জেগে ঘুমায় তাকে জাগানো যায় না। দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন যারা জেগে ঘুমাচ্ছে তারা দেখে না। শেখ হাসিনা বলেছেন, আমি দরকার হলে জেলে যাবো বাঙালির ঘরে ঘরে আলো দিয়ে যাব। পদ্মা সেতু নিজের টাকায় করবো। ১৯৬৪ সালের জানুয়ারিতে বঙ্গবন্ধুর বাড়ি যাওয়ার কথা স্মরণ করে তিনি বলেন, ইংলিশে কথা বলতেন বঙ্গবন্ধু। তিনি বলেছেন, তুমি চট্টগ্রামে চলে যাও। বঙ্গবন্ধু ৬ দফা চট্টগ্রামে দিয়েছিলেন। নেত্রীও চট্টগ্রামকে ভালোবাসেন। গত ১০ বছর বাংলাদেশের সোনালি যুগ। ৫ লাখ কোটি টাকার বেশি জাতীয় বাজেট আমাদের। আগে বাজেট হতো ঋণনির্ভর। এখন আয়কর মেলা হয় কারণ এ দেশের মানুষ কর দেয়া শিখেছে। সামাজিক নিরাপত্তা সূচকে ভারতের চেয়ে এগিয়ে। অমর্ত্য সেন বলেছিলেন, বাংলাদেশের অর্থনীতি উড়ছে।

চট্টগ্রাম চেম্বার সভাপতি মাহবুবুল আলম বলেন, দেশে যে মেগা প্রকল্প হচ্ছে সব প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে হচ্ছে। এনার্জি যদি না হতো বাংলাদেশে শিল্পায়ন হতো না। প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন, দেশে এলএনজি আসবে। এসেছেও। এর সুফল দেশবাসী পাচ্ছেন। প্রধানমন্ত্রী যা বলেন তা করেন। ১০ বছরে অবকাঠামো, জ্বালানি খাতে অভাবনীয় অগ্রগতি হয়েছে। জলাবদ্ধতা নিরসনে অন টাইম প্রকল্পের কাজ শেষ করতে হবে। বৃহত্তর চট্টগ্রামের টুরিজম শিল্পের প্রসারে কানেকটিভিটি বাড়াতে হবে।

স্বাগত বক্তব্যে আওয়ামী লীগের শিল্প ও বাণিজ্য সম্পাদক মো. আব্দুছ ছাত্তার বলেন, দেশে পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র, বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল, কর্ণফুলী টানেলের মতো মেগাপ্রকল্প বাস্তবায়নের পাশাপাশি ১০০ বছরের বাংলাদেশ ব-দ্বীপ পরিকল্পনা নিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট