চট্টগ্রাম মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

শিশুদের আনন্দভুবনে রয়েছে হতাশাও

চট্টগ্রাম শিশু একাডেমি পর্যাপ্ত বরাদ্দ নেই, বৈষম্যের শিকার কর্মকর্তা-কর্মচারীরা

মরিয়ম জাহান মুন্নী

১৫ নভেম্বর, ২০১৯ | ২:১০ পূর্বাহ্ণ

‘মেঘের কোলে রোদ হেসেছে, বাদল গেছে টুটি। আজ আমাদের ছুটি ওভাই আজ আমাদের ছুটি’। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরে লেখা গানটির সাথে তাল মিলিয়ে লাল সবুজ রঙের পোশাক পড়া একঝাঁক শিশু করছে নাচ। কানায় কানায় ভরা ছিল ক্লাসরুমটি। দৃশ্যটি চট্টগ্রাম শিশু একাডেমির। শিশুরা জাতির শ্রেষ্ঠ সম্পদ। শিশুদের শারীরিক, মানসিক, সাংস্কৃতিক গুণাবলী ও সুপ্ত প্রতিভার বিকাশ সাধনের লক্ষ্যে দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশ শিশু একাডেমি কাজ করে যাচ্ছে। এটি শিশুদের সাংস্কৃতিক ও মানসিক প্রতিভা বিকাশের একমাত্র সরকারি প্রতিষ্ঠান। চট্টগ্রামের এ প্রতিষ্ঠান থেকে অনেক শিশু-কিশোর প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে

দেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করেছে। ১৯৮১ সালের এপ্রিলে নগরীর ৯৩৯, ও আর নিজাম রোডে নিজস্ব জায়গায় তিন হাজার ৪০ বর্গফুটে চারতলা ভবনে প্রতিষ্ঠিত হয়। এরপর থেকেই শিশুদের উন্নয়নে বাংলাদেশ শিশু একাডেমি বিভিন্ন কর্মসূচি বাস্তবায়ন করে আসছে। কিন্তু চট্টগ্রামের শিশু একাডেমির শিক্ষক ও কর্মকর্তারা নানাভাবে বৈষম্যের শিকার। অন্যান্য সরকারি প্রতিষ্ঠানের মত এই প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা সরকারি বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত ।

প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক ও কর্মকর্তারা জানান, অন্যান্য সরকারি প্রতিষ্ঠানের চেয়ে বেতনও কম। আবার অবসরকালীন সময়ে শিক্ষক-কর্মকর্তারা পায় না কোনো পেনশন। তাই চাকরি জীবনে তাদের মধ্যে হতাশা কাজ করে। বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটিতে স্থায়ী জনবলের মধ্যে জেলা শিশু বিষয়ক কর্মকর্তা আছেন পাঁচজন। স্থায়ী ও খ-কালীন প্রশিক্ষক এবং অন্যান্য কর্মকর্তা রয়েছেন ৪৪ জন। তাই পেনশনের বিষয়ে সরকারকে এগিয়ে আসা দরকার।

শিশু বিষয়ক প্রধান কর্মকর্তা নারগীস সুলতানা বলেন, সরকারের পক্ষ থেকে চট্টগ্রাম শিশু একাডেমি বার্ষিক অনুদান পায় মাত্র ১০ লাখ টাকা। কিন্তু চট্টগ্রাম কেন্দ্রের আনুষঙ্গিক খরচসহ কার্যদিবস পরিচালনার জন্য বছরে প্রায় ২৫ লাখেরও বেশি টাকা প্রয়োজন হয়। একজন প্রশিক্ষক একটি ক্লাসের জন্য ৭ শ টাকা করে পান। সপ্তাহে পাঁচটি ক্লাস হয়। এভাবে ৩৫ জন প্রশিক্ষকের বছরে ১৪ লাখ ৭০ হাজার টাকা বেতন আসে। আবার বিভিন্ন বিভাগে নয়জন কর্মকর্তার বছরের গড়ে সাত হাজার করে বেতন আসে প্রায় সাত লাখ ৫৬ হাজার টাকা। সবমিলিয়ে বছরে একাডেমিক শিক্ষক-কর্মকর্তাদের বেতন আসে প্রায় মোট ২২ লাখ ২৬ হাজার টাকা। কিন্তু সরকার থেকে পাওয়া বার্ষিক অনুদান অতি নগণ্য। সরকারি অর্থায়নের বাইরে একাডেমির নিজস্ব খাত বলতে বই বিক্রয় কেন্দ্র ও শিক্ষার্থী থেকে একাডেমিক খরচ বাবত বছরে জনপ্রতি ২৩শ’ টাকা করে আদায় হয়। বর্তমানে একাডেমির সবগুলো বিভাগে মোট শিক্ষার্থী আছে ২৬০০ জন। এ টাকা দিয়ে একাডেমির শিক্ষক-কর্মকর্তা ও শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন খরচ বহন করা হয়। একাডেমি পরিচালনা কাজের জন্য যে অর্থের প্রয়োজন তা আমরা পাই না। আবার অবসরকালিন সময়ে সরকারের পক্ষ থেকে কোন পেনশনও দেয়া হয় না।

তবে এবছর একাডেমির নতুন ভবনের উন্নয়ন কাজের জন্য সরকারের পক্ষ থেকে অর্থ বরাদ্দ হয়েছে।

প্রসঙ্গত, জেলা শিশু একাডেমিতে চিত্রাংকন, নৃত্য, সংগীত, তবলা, আবৃত্তি, স্পেনিশ গিটার, হাওয়াই গিটার, কি-বোর্ড, নাট্য কলা, কম্পিউটার, ইংরেজি ভাষা শিক্ষা, দাবা, আরবি হাতের লেখা ও সুন্দর হাতের লেখা শিক্ষাসহ মোট ১৪টি প্রশিক্ষণ বিভাগ রয়েছে। শিক্ষাকার্যক্রম চারবছর মেয়াদের।
পিয়াংকা দাশ নামে এক অভিভাবক বলেন, ‘আমার মেয়ে এখানে নাচ শিখে। যেহেতু সরকারি প্রতিষ্ঠান, তাই খরচ অনেক কম। তবে এখনতো অনেক প্রাইভেট প্রতিষ্ঠান রয়েছে। তারাও অনেক ভালো প্রশিক্ষণ দিচ্ছে। তাই শিশু একাডেমিকে প্রশিক্ষণের ক্ষেত্রে আরো উন্নত করা দরকার’।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট