চট্টগ্রাম শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

কার মাইক্রোর দখলে লালদিঘি এলাকা

নিজস্ব প্রতিবেদক

১৫ নভেম্বর, ২০১৯ | ১:৪৫ পূর্বাহ্ণ

রাতের আঁধার নামার সাথে সাথে নগরীর লালদিঘি মাঠে বাড়তে থাকে মাদক ও গাঁজাসেবীদের উৎপাত। মাঠ সংলগ্ন মাইক্রো স্ট্যান্ডের চালক ও হেলপারদের সাথে ভবঘুরে-উদ্বস্তুু নেশাখোরদের আখড়ায় পরিণত হয় লালদিঘি মাঠ। চলে অসামাজিক কার্যকলাপও। মাঠের সুরক্ষা না থাকায় নির্বিঘেœ নানা অপকর্ম চলে আসছে। দিন দিন শ্রীহীন হয়ে পড়ছে নগরীর ঐতিহ্যবাহী লালদিঘি মাঠ। অথচ এ মাঠে রাজনৈতিক সভা-সমাবেশ জাতীয় গুরুত্ব বহন করে। একে ঘিরেই গড়ে ওঠেছে চট্টগ্রামের ব্যবসা কেন্দ্র। হাজার হাজার লোকের সমাগম হয়। সদা কর্মচঞ্চল লালদিঘি এলাকা চট্টগ্রামের রাজনীতি, অর্থনীতি ও সংস্কৃতির প্রাণকেন্দ্র হিসেবে গড়ে উঠেছে।

লালদিঘি মাঠকে কেন্দ্র করে জেল রোড, লালদিঘির পশ্চিম পাড়, সিনেমা প্যালেস, জেলা পরিষদ মার্কেট সংলগ্ন সড়কের বড় একটা অংশ জুড়ে দখলে নিয়েছে মাইক্রো ও প্রাইভেট কারচালকরা। সেখানে সড়কের উপর রীতিমতো অঘোষিত প্রাইভেট গাড়ির স্টেশন গড়ে ওঠেছে।

লালদিঘি পাড়ের একাধিক মাইক্রোবাস চালক বলেন, লালদিঘি মাঠ এলাকায় গাড়ি রাখলে ভাড়ার অভাব হয় না। বিভিন্ন কোম্পানি, ব্যক্তি কার-মাইক্রোর ভাড়া নিতে ছুটে আসেন লালদিঘিতে। লালদিঘির মাঠ ঘিরেই প্রসার ঘটেছে ভাড়া কার মাইক্রোর ব্যবসা। লালদিঘির মাঠে ১৯১০ সালে বৈশাখের ১২ তারিখ আবদুল জব্বার সর্বপ্রথম বলীখেলা আয়োজন করেন। তখন থেকে প্রতিবছর বৈশাখের ১২ তারিখ লালদিঘির পাড়ে জব্বারের বলীখেলা অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। সেই বলীখেলা এখনো চট্টগ্রামের ঐতিহ্যের স্মারক হিসেবে চলে আসছে।

লালদিঘির উত্তর পাশে ছিল একটা মঠ, যার গম্বুজে লেখা ছিল ১৯৩৯ সাল। গায়ে ছিল রায় বাহাদুর রাজকমল ঘোষের নাম। কালের স্বাক্ষী হয়ে এখনো দাড়িয়ে আছে ঐতিহাসিক সেই মঠ। রায় বাহাদুর ছিলেন একজন জমিদার। তাঁর নিজ বাড়ি ছিল রাউজান উপজেলার চিকদাইর গ্রামে। তিনি অবসর সময় কাটাতেন তখনকার খোলামেলা লালদিঘির পাড়ে। তিনি ছিলেন লালদিঘির অভিভাবক। পরবর্তীতে তিনি দিঘিটির মালিকানা চট্টগ্রাম মিউনিসিপাল কর্পোরেশনের হাতে তুলে দেন। মেট্টোপলিটন পুলিশ সদর দপ্তরের পাহাড়ের পাদদেশ থেকে পশ্চিমে পরীর পাহাড়ের পাদদেশ পর্যন্ত পুরো জায়গাটা সেকালে মিউনিসিপাল ময়দান নামে পরিচিত ছিল। ১৮৮৭ সালে এই ময়দানে মহারানী ভিক্টোরিয়ার মূর্তি স্থাপন করা হয়। চল্লিশের দশকে স্বাধীনতা আন্দোলনের সময় এই মূর্তি ভেঙ্গে ফেলেন বিপ্লবীরা।

ঊনবিংশ শতকের শেষে উত্তর ও দক্ষিণ পাড়ের রাস্তাটি হবার পর মিউনিসিপাল ময়দান দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে যায়। পূর্ব দিক সাধারণ জনগণের খেলার মাঠে রূপান্তরিত হয়। মুসলিম উচ্চ বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হলে তখন সে মাঠ মুসলিম উচ্চ বিদ্যালয়ের খেলার মাঠ হিসেবে পরিচিতি লাভ করে। এই মাঠ এখন ‘লালদিঘির মাঠ’ নামে পরিচিতি লাভ করেছে। এই মাঠ বিভিন্ন সময়ে সভা-সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। রাজনৈতিক দলের জাতীয় ও স্থানীয় নেতৃবৃন্দ এ মাঠে বক্তৃতা করেছেন। দেশের জাতীয় অনেক গুরুত্বপূর্ণ সময়ে এ মাঠ থেকে কালজয়ী ঘোষণা দেয়া হয়েছে। কালক্রমে এ মাঠ ‘ঐতিহাসিক মাঠ’ এ খ্যাতি পায়।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট