চট্টগ্রাম শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

‘বুলবুল’ আতঙ্কে ৪৭ হাজার মানুষ আশ্রয় নিয়েছিল অন্যত্র

সরে যাচ্ছে ব্লক, ব্যাপক ভাঙনের শঙ্কায় স্থানীয়রা

বাঁশখালীর অসমাপ্ত বেড়িবাঁধ ব্লক ও বেড়িবাঁধ নির্মাণে মাটির চেয়ে বালি বেশি, তাও নি¤œমানের হওয়ায় জোয়ারের আঘাতে ব্লকগুলো সরে যাচ্ছে ।

অনুপম কুমার অভি, বাঁশখালী

১৫ নভেম্বর, ২০১৯ | ১:২০ পূর্বাহ্ণ

বাঁশখালী উপজেলার উপকূলীয় এলাকায় নির্মিত বেড়িবাঁধের ওপর বসানো ব্লকগুলো জোয়ারের ধাক্কায় সরে পড়তে শুরু করেছে। এতে করে জনগণের মনে বাড়ছে আতঙ্ক। সাম্প্রতিক ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের সময় আতঙ্কিত হয়ে প্রায় ৪৭ হাজার মানুষ আশ্রয় কেন্দ্রসহ আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতে ঠাঁই নিয়েছিল।

উপকূলের ছনুয়া, গ-ামারা, খানখানাবাদে বেড়িবাঁধের অংশবিশেষে কাজ না হওয়ায় এমনিতেই বাঁধটি অরক্ষিত হয়ে পড়ে আছে। যেসব অংশে কাজ হয়েছে, সেগুলোতেও নি¤œমানের ব্লকগুলো সরে যাওয়ায় ২৫১ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণাধীন বেড়িবাঁধের নির্মাণকাজের মান নিয়ে সাধারণ মানুষের মাঝে অসন্তোষ দিন দিন বাড়ছেই। টাস্কফোর্স দলের তদন্ত টিম বিভিন্ন এলাকায় নির্মিত ব্লক নি¤œমানের হওয়ার কারণে বাতিল করলেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো বাতিল করা ব্লকগুলো বসিয়ে দিয়েছে বলেও অভিযোগ রয়েছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা যায়, বাঁশখালী উপকূলের ৩ লক্ষ মানুষের জীবন রক্ষায় স্থায়ীভাবে বেড়িবাঁধ নির্মাণের জন্য টেন্ডার আহ্বান করা হয়। একনেকের সভায় প্রকল্পটি বাস্তবায়নের পর ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ২৫১ কোটি ২৯ লক্ষ ৮৬ হাজার টাকায় কাজ পায়। এর মধ্যে ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ৯০ কোটি টাকা ও ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ১২০ কোটি টাকার মধ্যে এ পর্যন্ত ৩০ কোটি টাকা ছাড় দেয়া হয়েছে। প্রকল্প ব্যয় আবারো বাড়তে পারে প্রায় ৩০০ কোটি টাকায়। সূত্র জানায়, উপজেলার খানখানাবাদ, বাহারছড়া, গ-ামারা, ছনুয়া ও সাধনপুর এলাকায় পোল্ডার নং-৬৪/১এ, ৬৪/১বি এবং ৬৪/১সি এ বাঁধ নির্মাণের টেন্ডার আহ্বান করা হয়। ২০১৫ সালের ১ মে শুরু হয়ে কাজের মেয়াদ ছিল ২০১৮ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কাজ শেষ করতে না পারায় মেয়াদ পুনরায় বাড়িয়ে ২০২০ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত নির্ধারণ করা হয়। নির্মাণকাজের মধ্যে ছিল ঢাল সংরক্ষণসহ ৯.৯০০ কিলোমিটার বাঁধ নির্মাণ, ৩.৮৪৮ কিলোমিটার নদী তীর সংরক্ষণ, ২ কিলোমিটার বাঁধ পুনরাবৃত্তিকরণ। ৩৪টি প্যাকেজের মধ্যে এই কাজের ঠিকাদারি পায় হাছান এন্ড ব্রাদার্স ২০টি প্যাকেজ, মেসার্স মশিউর রহমান ৮টি প্যাকেজ, মেসার্স আরাধনা এন্টারপ্রাইজ ২টি প্যাকেজ, মোস্তফা এন্ড সন্স ২টি প্যাকেজ, নিয়াজ ট্রেডার্স ১টি প্যাকেজ ও আলম এন্ড ব্রাদার্স ১টি প্যাকেজ। এসব ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের অধীনে খানখানাবাদে চার হাজার ৫০০ মিটার, ছনুয়ায় তিন হাজার ২০০ মিটার, সাধনপুরে দুই হাজার ৭৯ মিটার, পুকুরিয়ায় ১ হাজার ২৬৯ মিটার ও গ-ামারায় ৯০০ মিটার কাজ চলমান আছে।
বেড়িবাঁধ এলাকা পরিদর্শনে দেখা যায়, খানখানাবাদ বেড়িবাঁধের নিম্নাংশে প্রায় ব্লক সরে পড়তে শুরু করেছে। বেড়িবাঁধে মাটির পরিবর্তে বালি বেশি ব্যবহার করে বাঁধ নির্মাণ করায় এবং ব্লকে যে বালি ও পাথর ব্যবহার করা হয়েছে তা অত্যন্ত নি¤œমানের হওয়ায় ব্লকগুলো জোয়ারের পানির ধাক্কায় সরে পড়ছে বলে মন্তব্য স্থানীয়দের। তাছাড়া বেড়িবাঁধে বসানো মাটি যথাযথভাবে রোলার দ্বারা চাপা না দিয়ে বাঁধ নির্মাণ করায় বসানো ব্লকগুলো অতি দ্রুত সরে পড়তে শুরু করেছে বলেও মন্তব্য করেছেন অনেকে। এ ব্যাপারে জানতে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজার জাকের হোসেনের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করলেও তার মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।

ছনুয়ায় বেড়িবাঁধের জন্য বাতিলকৃত ব্লকগুলো নির্ধারিত স্থানে দেখা যায়নি। এদিকে ছনুয়া নৌবাহিনী অফিস সংলগ্ন বাঁধের ওপর ব্লক বসানো শুরু হয়েছে। কিছু দূরবর্তী স্থানে ব্লকগুলো এলোমেলোভাবে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে। বাঁধের সরু অংশ ভাঙতে শুরু করেছে। ছোট ছনুয়ার দিকে এখনো ব্লক বসানো হয়নি। বাহারছড়া ঝাউবাগান থেকে কদমরসুল পর্যন্ত বেড়িবাঁধের ব্লকগুলো বসানো হয়নি। বাঁধটি অরক্ষিত অবস্থায় রয়েছে।
খানখানাবাদ ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান আবু ছিদ্দিক আবু জানান, উপকূলের খানখানাবাদে বেড়িবাঁধ নির্মাণ মানসম্মত হয়নি। ব্লকগুলো বসানোর পর থেকেই সরে পড়তে শুরু করেছে। তদন্ত টিম তদন্ত করলেই বোঝা যাবে কাজের অনিয়ম।

স্থানীয়দের অভিযোগ, বাঁশখালী পানি উন্নয়ন বোর্ডের দায়িত্বরত কর্মকর্তারা বাঁশখালীর গুণাগরী অফিসে বসেন না। অফিস এলাকায় স্টাফ কোয়ার্টার থাকলেও সেখানে তারা থাকেন না। চট্টগ্রাম শহরে অবস্থান করে ইচ্ছানুযায়ী কাজের তদারকি করে থাকেন। সঠিক তদারকি না থাকায় বেড়িবাঁধ নির্মাণ ও সংস্কার কাজে নিয়োগকৃত ঠিকাদারদের কাজের ব্যাপক অনিয়ম নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে উপকূলবাসী। বেড়িবাঁধ নির্মাণ ও সংস্কার কাজের ব্যাপক অনিয়মের বিষয়ে পাউবো চট্টগ্রামের উপ-সহকারী প্রকৌশলী আবু তাহেরকে খুঁজতে পানি উন্নয়ন বোর্ড কার্যালয়ে গিয়েও পাওয়া যায়নি।

পাউবো’র বাঁশখালীর উপবিভাগীয় প্রকৌশলী অপু দেব বলেন, আমি বাঁশখালীতে নতুন। তবে খানখানাবাদে যে সমস্ত ব্লকগুলো সরে গেছে, তা বাঁধ তৈরি করে আবার বসানো হবে। ছনুয়া এলাকায় ব্লকগুলো বসানোর জন্য প্রস্তুতি চলছে। গুণাগরীতে পানি উন্নয়ন বোর্ডের বাঁশখালী কার্যালয় বন্ধ এবং অফিস কার্যক্রম বাঁশখালীতে না করা প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে দ্রুত যোগাযোগের জন্য চট্টগ্রামেই অফিস কার্যক্রম চলছে। দায়িত্বরত কর্মকর্তারা বাঁশখালীতে যাওয়া-আসা করেন। বাঁশখালী অফিস চট্টগ্রামে, এ ধরনের কোন নিয়ম আছে কিনা, জানতে চাইলে তিনি বিষয়টি তিনি এড়িয়ে যান।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট