চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪

বুলবুল নেই, বাতাসের বেগ বা কালো মেঘ দেখলেই শঙ্কিত উপকূলবাসী

সীতাকু- অকেজো স্লুইস গেটের কারণে ক্ষতির শিকার অসংখ্য কৃষক পরিবার

নিজস্ব সংবাদদাতা, সীতাকু-

১৪ নভেম্বর, ২০১৯ | ১:০০ পূর্বাহ্ণ

ঘূর্ণিঝড় বুলবুল চলে গেলেও সীতাকু-ের সাগর উপকূলীয় এলাকায় বসবাসরহ লোকদের মাঝে ঘূর্ণিঝড় আতঙ্ক এখনো কাটেনি। সাগর উপকূলে কালো মেঘ বা বাতাসের বেগ দেখলে যেন স্বস্তি পায় না মানুষ কোনভাবেই। সবচেয়ে বেশি আতঙ্ক দেখা দিয়েছে মুরাদপুর ইউনিয়নের গুলিয়াখালী,ভাটেরখীলসহ আরো অন্যান্য স্থানে।

২০১৭ সালে বর্ষা মৌসুমে পাহাড়ি ঢলে মুরাদপুর ইউনিয়নের গুলিয়াখালী উপকূলীয় এলাকার জীবন রক্ষা বেড়িবাঁধ ধসে স্লুইস গেটে পড়লে স্লুইস গেটটিও ধসে যায়। এতেকরে ওই এলাকার পানি চলাচলের রাস্তা বন্ধহয়ে পড়ে। এসময় উপজেলার পাশর্^বর্তী ইউনিয়নের সাগরের সাথে সংযুক্ত খাল ও ছড়াগুলো মাটিতে ভরাট হয়ে পানি নিষ্কাাশনের সু-ব্যাবস্থা না থাকায় কৃষকদের সবজি ক্ষেতে পানি ঢুকে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। এতেকরে পানিয়ে তলিয়ে যায় কৃষকদের অতি পরিশ্রমের কোটি কোটি টাকার ফসলও। তার সাথে পুকুরের বিভিন্ন প্রজাতির মাছও ভেসে যায় তখন। তাই মুরাদপুর ইউনিয়নের উপকূল গুলিয়াখালী, ভাটেরখীলের সাগরের তীরবর্তীতে থাকা কৃষক পরিবারের লোকদের এখন আকাশে মেঘ দেখলেই আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে বলে জানান, গুলিয়াখালি এলাকার এক প্রবীন কৃষক মো. আবু তাহের। তিনি বলেন, গত ২০১৭ সাল থেকে স্লুইচ গেট ধসে পাহাড়ি ঢলের পানিতে এখানকার কৃষকদের হাজার হাজার একর জমির ধানের চারা ও সবজি ক্ষেত তলিয়ে গিয়েছিল। বর্তমানেও ১২০ শতক জমিতে আমন ধান ও বিভিন্ন প্রজাতির সবজির চাষ করেছি। কিন্তু বর্ষা পেরিয়ে এখন আবার ঘূর্ণিঝড় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে কৃষকদের মাঝে। তবে চট্টগ্রামসহ সীতাকু-ে ঘূর্ণিঝড় আঘাত না হানলেও জমিতে ফসলের চাষ করে অনেক ঝুঁকিতে আছি আমরা। কারণ বিষয়টি দূরথেকে কেউ বুঝতে পাড়ে না। সাগরের পাশে যারা বসবাস করে আসছে একমাত্র তারাই বলতে পারেন সাগরের পানির সাথে যুদ্ধকরে কিভাবে আমরা জমিতে ফলে ফলাই। অপরদিকে উপজেলার মুরাদপুর ইউনিয়নের গুলিয়াখালী এলাকায় সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, সমুদ্রের সাথে সংযুক্ত অধিকাংশ খাল ও গুলিয়াখালী স্লুইচ গেট দীর্ঘদিন ধরে ধসে পড়ে আছে। ফলে গুলিয়াখালী এলাকার প্রায় ৩০০ কৃষক পরিবারের লোকজন চাষাবাদ নিয়ে চরম দুশ্চিন্তায় রাত কাটাছেন বলে জানান একাধিক কৃষক। তাই বার বার এভাবে ক্ষতির শিকার হলে আগামীতে জমি চাষ নিয়ে অনেকটা অনিশ্চিত প্রান্তিক কৃষক পরিবারের লোকজন। উপজেলা উপ-সহকারী উদ্ভিদ সংরক্ষণ কর্মকর্তা বলেন, প্রাকৃতিক দুর্যোগে বেড়িবাঁধের মাটি ধসে পড়লে স্লুইচ গেটটি ধসে যায়। এটি সংস্কার করা গেলে পাহাড়ি ঢলের পানি কৃষকদের জমিতে তেমন প্রবেশ করতে পাড়বে না। কৃষি বিষয়ে নানান রকম উদ্যোগ গ্রহণ করে চলেছেন বর্তমান সরকার। এদিকে ৪ নং মুরাদপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান জাহেদ হোসেন নিজামী(বাবু) বলেন,গত ৯ নভেম্বর শনিবার বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় বুলবুল মোকাবেলায় আমরা সকলেই প্রস্তত ছিলাম। কিন্তু দুর্যোগ কেটে গেলেও অকেজো স্লুইস গেট এলাকায় উপকূূলের কৃষক ও জেলেদের মাঝে অতঙ্ক এখনো কাটেনি।

কারণ ২০১৭ সালে গুলিয়াখালী বেড়িবাঁধের স্লুইস গেট ধসে গিয়েছিল। সেজন্য এখানকার কৃষক ও উপকূলবাসী যে কোনো দুর্যোগের খবর শুনলেই আতঙ্কে থাকে। স্লুইচ গেট অকেজোর কারণে মুরাদপুর ইউনিয়নের অসংখ্য কৃষক বার বার ক্ষতির শিকার হচ্ছেন। তিনি আরো বলেন, খাল ও স্লুইচ গেট সংস্কার বিষয়ে একটি ফাইল পানি মন্ত্রণালয়ে দেয়া আছে। তবে খাল ও স্লুইচ গেট দ্রুত সংস্কার করা না গেলে প্রতি মৌসুমে দুর্যোগকালীন সময়ে কৃষক ও এখানকার মৎস্য চাষীরা বার বার ক্ষতির শিকার হবেন। এবিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মিল্টন রায় জানান, মুরাদপুর ইউনিয়নের গুলিয়াখালী বেড়িবাঁধের অকেজো স্লুইস গেট সংস্কারের বিষয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলীর সাথে কথা বলবেন এবং এটি সংস্কারের বিষয়ে তাকে অনুরোধ করবেন তিনি।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট