চট্টগ্রাম বৃহষ্পতিবার, ২৮ মার্চ, ২০২৪

সর্বশেষ:

উরিরচরে ধানের কেজি ১০ টাকা

উপযুক্ত মূল্য না পাওয়ায় জমিতে ধান পুড়তে চায় ক্ষুব্ধ কৃষকরা

নরোত্তম বনিক, সন্দ্বীপ

১৩ নভেম্বর, ২০১৯ | ৫:১৫ পূর্বাহ্ণ

রোদ-বৃষ্টি উপেক্ষা করে মাথার ঘাম পায়ে ফেলে লাভের আশায় মাঠে রাজশাইল ধান ফলিয়েছে সন্দ্বীপ উপজেলার উরিরচরের স্থানীয় কৃষকরা। কিন্তু বাজারে ধানের উপযুক্ত দাম না পেয়ে হতাশ তারা। সরকার নির্ধারিত ধানের মূল্য প্রতি কেজি ২৬ টাকা হলেও চরের কৃষকরা বেপারীদের কাছে প্রতি কেজি মাত্র ১০ থেকে ১৩ টাকায় ধান বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছে। ক্ষেতে থাকা ধানের উৎপাদন খরচের চেয়ে এই দাম অনেক কম। ধান বিক্রি করতে হলে আবার নতুন করে মজুরি দিয়ে ধান কাটতে হবে। তাই এত ক্ষতিতে বিক্রি না করে জমিতে ধান পুড়িয়ে ফেলার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন কৃষকরা।

সন্দ্বীপ উপজেলার নদী বিচ্ছিন্ন ইউনিয়ন উরিরচরের প্রায় ৮৫ ভাগ মানুষ চাষাবাদের ওপর নির্ভরশীল। এ বছর চরের প্রায় আঠারো থেকে বিশ হাজার একর জমিতে রাজশাইল জাতের ধান চাষাবাদ হয়। নদীর পলিমাটি ভরাট হয়ে চর গড়ে উঠায় জমির মাটি প্রাকৃতিকভাবে উর্বর। এ কারণে একরপ্রতি ২০ থেকে ২৫ মন ধান উৎপাদন হয়েছে। গতবছরে এ সময় একই ধান মণপ্রতি বিক্রি হয়েছে ৭শ থেকে ৮শ টাকায়। কিন্তু এ বছর বেপারীরা সিন্ডিকেট করে প্রতি মণ ধান কিনছে মাত্র ৪শ থেকে ৫শ টাকায়। কম দামে কেনা ধান নোয়াখালীর বিভিন্ন অটো রাইস মিলে সরবরাহ করে। বাজারে উপযুক্ত মূল্য না পেয়ে চাষাবাদ ছেড়ে দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন অনেক চাষী।

দক্ষিণ চরের চাষী মো. রানা জানায়, নিজে খাটার পরেও জমি চাষ দেয়া, বীজ কিনে রোপণ করা, সার ও কীটনাশক দেয়া, আগাছা পরিষ্কার করে ফসল পাকা পর্যন্ত প্রতি একর জমিতে ১১ থেকে ১২ হাজার টাকা খরচ হয়। ৬ মাস খেটে এক একর জমির ধান বিক্রি করতে হচ্ছে ১০ হাজার টাকা। এই ধান কেটে বিক্রি করতে নতুন করে খরচ হবে আরো ৪ হাজার টাকা। জমি থেকে ধান কেটে এত কম দামে বিক্রি করার চেয়ে জমিতে ধান পুড়িয়ে দিলে ৪ হাজার টাকা ক্ষতি কম হবে। অন্যদিকে ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের কারণে পানিতে ধানের জমি ডুবে যাওয়ায় অনেক ফসল নষ্ট হয়ে গেছে।
বিশ্ববিদ্যালয়পড়ুয়া ছাত্র মো. সায়েদ রানা ক্ষোভের সাথে বলেন, পারিবারিক আর্থিক সচ্ছলতা না থাকায় চাষের জন্য মহাজন থেকে চড়া সুদে ঋণ নিয়ে আমরা চাষ করেছি। এখন বাজারে ধানের যে দাম তাতে ধান বিক্রি করে পরিবার চালাবো কীভাবে আর দেনা শুধবে কীভাবে; সেই চিন্তায় অস্থির। যদি কৃষি ঋণের সুবিধা থাকতো তবে আমাদের অনেক উপকার হতো।

চরের চাষাবাদ ও ধানের দামের পরিস্থিতি নিয়ে কথা বলতে চাইলে উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অফিসের কাউকে পাওয়া যায়নি। তবে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বিদর্শী সৌম্বদি চাকমা বলেন, চাষাবাদের খরচের তুলনায় ধানের বিক্রয়মূল্য কম হলে কৃষকরা চাষাবাদের আগ্রহ হারিয়ে ফেলবে। এতে জাতীয় উৎপাদন কমে যাবে। আমি বিষয়টি নিয়ে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে অবহিত করব। আশা করি, এই সমস্যার সমাধান হবে।
কৃষকদের দাবি, সরকার সারাদেশের মতো উরিরচরের প্রান্তিক কৃষকদের থেকে সরকারনির্ধারিত মূল্যে ধান কিনলে লাভবান হবে তারা।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট