চট্টগ্রাম বুধবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

৫০ হাজার মানুষ আশ্রয় কেন্দ্রে

হ সরকারি অফিস সারাদিন খোলা রেখে পরিস্থিতি মনিটরিং হ প্রস্তুত ২৯০টি মেডিকেল টিমসহ বিভিন্ন সংস্থা

নিজস্ব প্রতিবেদক

১০ নভেম্বর, ২০১৯ | ৩:২৮ পূর্বাহ্ণ

ঘূর্ণিঝড় ‘বুলবুল’ এর কারণে উপকূলবর্তী উপজেলাসহ মহানগরীর ঝুঁকিপূর্ণ জায়গা থেকে গতকাল (শনিবার) সারাদিনে প্রায় ৫০ হাজার মানুষকে সরিয়ে আশ্রয় কেন্দ্রে নেওয়া হয়েছে। ঝুঁকিপূর্ণ এলাকার মানুষকে নিরাপদ আশ্রয়ে যেতে মাইকিং অব্যাহত ছিল। আশ্রয় কেন্দ্রগুলোতে ইউএনও, এসিল্যান্ড ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের তত্ত্বাবধানে খাবারের ব্যবস্থা করা হয়েছে।

গতকাল (শনিবার) নগরীর পতেঙ্গা সি-বিচসহ আশপাশের এলাকা থেকে ভাসমান দোকানগুলো তুলে দিয়ে সকল লোকজনকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে।
এছাড়া জেলায় সর্বমোট ৪৭৯টি আশ্রয় কেন্দ্রসহ ৪ হাজার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রস্তুত রাখা হয়েছে। উপজেলাসহ জেলার সকল সরকারি অফিস সারাদিন খোলা রেখে ঘূর্ণিঝড় পরিস্থিতি মনিটরিং করা হচ্ছে। কন্ট্রোল রুম থেকে সার্বক্ষণিক জরুরি তথ্য সহায়তা প্রদান করা হচ্ছে।
ঘূর্ণিঝড় পরবর্তী পরিস্থিতি মোকাবেলার জন্য প্রয়োজনীয় নগদ টাকা, জি আর চাল, শুকনো খাবার, ঢেউটিন ও তাঁবু প্রস্তুত রাখা হয়েছে। প্রস্তুত আছে ২৯০টি মেডিকেল টিম, রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি, ফায়ার সার্ভিস, বিএনসিসি, স্কাউট, স্বেচ্ছাসেবক টিম সহ সকল সহযোগী সংস্থা। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, পুলিশ, নৌ পুলিশ, কোস্টগার্ড ও অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সাথে যোগাযোগ অব্যাহত রয়েছে এবং তারা প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে।

এ সম্পর্কে পতেঙ্গা সি-বিচে জেলা প্রশাসক মো. ইলিয়াস হোসেন জানান, আমরা লোকজনকে আশ্রয় কেন্দ্রে নিয়ে আসছি। যারা আশ্রয় কেন্দ্রে যেতে ইচ্ছুক না, তাদের পাশবর্তী ফাঁকা বাড়ি বা স্থাপনা থাকলে সেখানে রাখার ব্যবস্থা করছি। চুরি হওয়ার ভয়ে অনেকে বাড়ি ছেড়ে যেতে চায়না। ইউনিয়নের চকিদার বা দফাদারকে সে ব্যাপারে নজর রাখার জন্য নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। নৌ বাহিনী, সেনা বাহিনী, কোস্টগার্ড, ফায়ার সার্ভিস, রেডক্রিসেন্ট ও স্বাস্থ্য বিভাগসহ আমরা সকলে কাজ করে যাচ্ছি। আশা করছি দুর্যোগ মোকাবেলায় আমাদের সকল প্রস্তুতি রয়েছে।
তিনি আরো জানান, পর্যাপ্ত পরিমাণে শুকনো খাবার মওজুদ রাখা হয়েছে। আশ্রয় কেন্দ্রগুলোতে এসব খাবার সরবরাহ করা হবে। এমনকি দুর্যোগ পরবর্তী উদ্ধার কার্যক্রম সম্পন্ন করার জন্যও আমাদের প্রস্তুতি রয়েছে। বাংলাদেশ সেনা বাহিনীসহ সব সংস্থা প্রস্তুত রয়েছে। যে কোন সময় তারা উদ্ধার কাজ চালাতে পারবে। নৌ বাহিনী সন্দ্বীপ এলাকায় তাদের টিম প্রস্তুত রেখেছে।

এ পর্যন্ত ৮ লাখ টাকার বেশি নগদ টাকা বরাদ্দ পেয়েছি। প্রায় ৪০০ মেট্রিক টন চাল মজুদ এবং ২ হাজার পেকেট শুকনো খাবার রয়েছে। এছাড়া, স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সাহায্যের জন্য নির্দেশনা দেয়া হয়েছে বলেও জানান তিনি।
জেলা পুলিশ : বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূণিঝড় বুলবুল মোকাবেলায় চট্টগ্রাম জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে ব্যাপক প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে। গতকাল (শনিবার) চট্টগ্রাম জেলা পুলিশ সুপার নুরেআলম মিনার সভাপতিত্বে জেলা পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সাথে এক জরুরি সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় পুলিশ কর্মকর্তাদের জেলা উপজেলা প্রশাসনের সকল সংস্থার সাথে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রক্ষাসহ কার‌্যাবলীর সমন্বয় সাধন এবং স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, কমিউনিটি পুলিশিং সদস্য ও চৌকিদার-দফাদারদের পুলিশি তৎপরতায় সম্পৃক্ত করার জন্য নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে।
সিভিল সার্জন কার্যালয় : জেলা সিভিল সার্জন ডা. আজিজুর রহমান সিদ্দিকী জানান, সরকারি সকল দপ্তরের কর্মকর্তা কর্মচারীদের ছুটি বাতিলসহ কর্মস্থলে থাকা নিশ্চিত করা হয়েছে। উপজেলা, জেলা ও বিভাগীয় পর্যায়ে কন্ট্রোল রুম স্থাপন করা হয়েছে। এরা সরাসরি মন্ত্রণালয়ের সাথে তথ্য আদান-প্রদান করবে। পানি বিশুদ্ধকরণের জন্য পর্যাপ্ত পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট, ওরস্যালাইন, কলেরা আইভিএম স্যালাইন, টেট্রাসাইক্লিন ক্যাপসুল, সিপ্রোফ্লক্সাসিন ট্যাবলেট ও মেট্রোনিডাজল ট্যাবলেট পর্যাপ্ত রয়েছে।

তিনি আরো জানান, সিভিল সার্জনকে আহ্বায়ক করে ৯ সদস্য বিশিষ্ট জেলা স্বাস্থ্য বিভাগীয় সমন্বয় কমিটি গঠন করা হয়েছে। স্বাস্থ্য বিভাগের অনুপস্থিত কর্মকর্তাদের শোকজ এবং উপস্থিত কর্মকর্তাদের হাজিরা স্কেন করে সিভিল সার্জন কার্যালয়ে পাঠানো হবে।
রেড ক্রিসেন্ট: ঘূর্ণিঝড় ‘বুলবুল’ মোকাবেলায় রেড ক্রিসেন্টের মাইকিং করা হয়। চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের ব্যবস্থাপনায় ও বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি, চট্টগ্রাম জেলা ও সিটি ইউনিটের তত্ত্বাবধানে যুব রেড ক্রিসেন্ট চট্টগ্রামের স্বেচ্ছাসেবক কর্তৃক নগরীর ২৬ নং হালিশহর ওয়ার্ড, ৩৭ নং মুনীরনগর, ৩৮ নং দক্ষিণ মধ্যম হালিশহর, ১০ নং উত্তর কাট্টলী, ১১ নং দক্ষিণ কাট্টলী, ৩৯ নং দক্ষিণ হালিশহর, ৪৯ নং উত্তর পতেঙ্গা, ৪১ নং দক্ষিণ পতেঙ্গা ও ১৮ পূর্ব বাকলিয়া, ৩৩ নং ফিরিঙ্গি বাজার, ৩৪ নং পাথরঘাটা এবং ৩৫ নং বক্সিরহাট ওয়ার্ডসমূহে জনসচেতনতামূলক মাইকিং করা হয়। এছাড়াও নগরীর ঝুঁকিপূর্ণ পাহাড়সমূহ মতিঝর্ণা, বাটালি হিল, আকবরশাহ পাহাড়ের পাদদেশে বসবাসরত মানুষকে আশ্রয়কেন্দ্রে যাওয়ার জন্য মাইকিং করে যুব রেড ক্রিসেন্ট চট্টগ্রামের স্বেচ্ছাসেবকরা।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট