চট্টগ্রাম বৃহষ্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪

আতঙ্কিত সেন্টমার্টিন দ্বীপে আটকে পড়া পর্যটকরা

কক্সবাজারে নিচু এলাকা প্লাবিত

নিজস্ব সংবাদদাতা হ কক্সবাজার

১০ নভেম্বর, ২০১৯ | ৩:২৭ পূর্বাহ্ণ

বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের প্রভাবে কক্সবাজার সমুদ্রবন্দরে ৪ নম্বর সতর্কতা সংকেত জারি করা হয়েছে। এতে সাগর উত্তাল রয়েছে। সর্বত্র গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি অব্যাহত রয়েছে। ঘূর্ণিঝড়ের পাশাপাশি পূর্ণিমা তিথির জোয়ারে স্বাভাবিকের চেয়ে সাগরের জোয়ারের পানি বেড়েছে ৭-৮ ফুট। এতে উপকূলের নিচু এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। কুতুবদিয়া, মহেশখালীর ধলঘাটা, মাতারবাড়ি এলাকায় জোয়ারের পানি লোকালয় প্লাবিত করছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা।

এদিকে সতর্ক সংকেত থাকায় টেকনাফ থেকে কোন জাহাজ না ছাড়ায় দেড় হাজার পর্যটক সেন্টমার্টিন দ্বীপে আটকা পড়েছেন। এতে সেন্টমার্টিনে বেড়াতে এসে আটকা পড়া অনেক পর্যটক আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন। গতকাল সকাল থেকে থেমে থেমে বৃষ্টি হয়। বাতাসের গতিবেগও বেড়ে যায়। দ্বীপে গতকাল শনিবার সকাল থেকে বৃষ্টি ও বাতাসের গতি বৃদ্ধি পাওয়ায় ভয়টা বেশি কাজ করছে তাদের মাঝে। শনিবার দুপুরে দ্বীপে আটকাপড়া বেশ কয়েকজন পর্যটকের সঙ্গে মুঠোফোনে কথা হয়েছে। অনেকে একদিনের টাকা নিয়ে এখানে ভ্রমণে এসেছে, এখন টাকাও শেষ।

সেন্টমার্টিন ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান নূর আহম্মদ জানিয়েছেন, ‘দ্বীপে আটকা পড়া পর্যটকদের হোটেল ও খাবার বিল ডিসকাউন্ট দিতে সকল হোটেল-মোটেলকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। শুক্রবার রাত থেকে দ্বীপে বৃষ্টি ও বাতাস বেড়েছে। এজন্য পর্যটকদের রুম থেকে কাউকে বের হতে নিষেধ করা হয়েছে। এছাড়া দ্বীপের চারদিকে সমুদ্র সৈকতে যাতে কোন পর্যটক না নামে, পরিষদের পক্ষ থেকে শনিবার মাইকিং করা হয়েছে। যারা প্রথমবারের মত সেন্টমার্টিন ভ্রমণে এসেছে, তাদের মধ্যে কিছু লোকজন ভয়ের মধ্যে রয়েছে বলে শুনেছি। তবে দ্বীপে বেড়াতে এসে আটকা পড়া পর্যটকদের সার্বক্ষণিক খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে’।

সমুদ্র উত্তাল থাকায় শুক্রবার সকাল থেকে টেকনাফ-সেন্টমার্টিন নৌপথে জাহাজ চলাচল বন্ধ রয়েছে। এ কারণে এক হাজারের বেশি পর্যটক টেকনাফে এসেও সেন্টমার্টিন দ্বীপে যেতে পারেননি। তবে এর আগে সেন্টমার্টিন দ্বীপে ভ্রমণে এসে আটকা পড়েছেন দেড় হাজার পর্যটক। এদিকে পূর্বমধ্য বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় ঘূর্ণিঝড়ের আশঙ্কায় কক্সবাজার সমুদ্র উপকূলে ৪ নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত দেওয়া হয়েছে। এ কারণে জাহাজ চলাচল বন্ধের এ সিদ্ধান্ত নেয় জেলা প্রশাসক।
অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) টেকনাফ অঞ্চলের সমন্বয় কর্মকর্তা আমজাদ হোসেন জানান, ‘এখনও ৪ নম্বর সতর্ক সংকেতের কারণে দুর্ঘটনা এড়াতে এই রুটে পর্যটকবাহী জাহাজ চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে। দ্বীপে বেড়াতে এসে আটকা পড়া পর্যটকদের খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে’।

সেন্টমার্টিন পুলিশ ফাঁড়ির পরিদর্শক আজমীর ইলাহি বলেন, দ্বীপে আটকা পড়া পর্যটকদের নিরাপত্তার জন্য পুলিশ রাত-দিন কাজ করে যাচ্ছে।
সেন্টমার্টিন হোটেল মালিক সমিতির সভাপতি মুজিবুর রহমান বলেন, ইউএনও’র নির্দেশে দ্বীপে আটকা পড়া পর্যটকদের ডিসকাউন্ট দেওয়ার সিন্ধান্ত হয়েছে। সে অনুযায়ী সবার কাছ থেকে ভাড়া নেওয়া হবে। তবে বৈরী আবহাওয়ার কারণে দ্বীপের পর্যটন ব্যবসায়ীদের দেড় কোটি টাকার বেশি লোকসান হয়েছে।

টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম বলেন, দ্বীপে আটকা পড়া পর্যটকরা যাতে কোনভাবে হয়রানির শিকার না হয়, সার্বক্ষণিক খোঁজখবর রাখা হচ্ছে। পর্যটকরা যাতে নিরাপদে থাকে সেজন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সর্তক অবস্থানে রয়েছে। ঘূর্ণিঝড় ‘বুলবুল’ মোকাবিলায় সেন্টমার্টিনের পাচঁটিসহ মোট ৬৫টি সাইক্লোন সেন্টার প্রস্তুত রাখা হয়েছে।

কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মো. কামাল হোসেন জানিয়েছে, জেলার ৮ উপজেলায় ৫৩৮টি সাইক্লোন শেল্টার প্রস্তুুত রাখা হয়েছে। খোলা রাখার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে বহুতল ভবনের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোও। উপকূল হিসেবে মহেশখালী, কুতুবদিয়া, সদরের পোকখালী, চৌফলদন্ডী, খরুশকুল, টেকনাফের সাবরাং, শাহপরীরদ্বীপ ও সেন্টমার্টিনে বিশেষ নজর রাখা হচ্ছে। সামগ্রিকভাবে জেলার উপকূল এবং আশপাশ এলাকার ক্ষয়ক্ষতি মোকাবেলা এবং ঘূর্ণিঝড় পরবর্তী সহযোগিতার জন্য প্রস্তুুতি নেয়া রয়েছে। ০১৭১৫-৫৬০৬৮৮ নম্বর সচল রেখে জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে একটি কন্ট্রোল রুম চালু করা হয়েছে। দুর্যোগ সংক্রান্ত সকল তথ্য এখানে সরবরাহ ও পাওয়া যাবে।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট