চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪

আজ পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.)

রায়হান আজাদ

১০ নভেম্বর, ২০১৯ | ৩:২৮ পূর্বাহ্ণ

আজ পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) তথা মহানবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের এ জগতে তাশরিফ আনয়নের দিন। অধিকাংশ ঐতিহাসিকের মতে- মহানবী (সা.) এর শুভাগমন ঘটে আ‘মুল ফিলের রবিউল আউয়াল মাসের ১২ তারিখ মোতাবেক ৫৭০ ঈসায়ী সনের ২৯ আগস্ট সোমবার। এ দিবস ছিল বিশ্ব মানবতার ইতিহাসে সবচেয়ে সৌভাগ্যময় ও আলোকোজ্জ্বল দিবস। মহানবী (সা.) সৌদি আরবের উম্মুল কোরা নামে খ্যাত প্রাচীন শহর মক্কা নগরীর প্রসিদ্ধ কুরাইশ বংশে আবদুল মোত্তালিবের গুণধর পুত্র আবদুল্লাহর ঘরে জন্মগ্রহণ করেন। জন্মের পর তাঁর দাদাজান নাম রাখেন ‘মুহাম্মদ’ তথা অত্যধিক প্রশংসিত আর আম্মাজান রাখেন ‘আহমদ’, তার অর্থও একই।

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মাতৃগর্ভে থাকাকালে পিতা আবদুল্লাহ ইনতেকাল করেন। নবীজীর মায়ের নাম আমিনা। তিনি মদিনার প্রসিদ্ধ বনু যুহরা গোত্রের সর্দার ওয়াহ্ব-এর কন্যা। মহানবীর বংশ পরিক্রমা উর্দ্ধে মুসলিম মিল্লাতের পিতা সাইয়েদুনা হযরত ইবরাহীম আলাইহিস্সালাম পর্যন্ত গিয়ে পৌঁছে। শৈশবে মহানবীকে তায়িফের বনী সাদ গোত্রের হালিমাতুস সাদিয়া দুগ্ধ পান করান। মহানবী (সা.) জন্মের ৬ষ্ঠ বছরে আম্মা এবং ৮ম বছরে দাদাকে হারান। বস্তুতপক্ষে তিনি চাচা আবু তালিবের হাতেই প্রতিপালিত হন। মহানবী ২৫ বছর বয়সে মক্কার ধনাঢ্য মহিলা হযরত খাদীজাতুল কুবরার সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন এবং এ স্ত্রীর জীবদ্দশায় অন্য কোন স্ত্রী গ্রহণ করেননি। মূলত মহানবীর বংশধারা এ স্ত্রীর সন্তান মা ফাতিমার মধ্যদিয়েই অদ্যাবধি চলে এসেছে।

মহানবীর (সা.) আবির্ভাবকালে মক্কাসহ সারা দুনিয়ার সামগ্রিক পরিস্থিতি ছিল অত্যন্ত ভয়াবহ ও বিভীষিকাময়। রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা, অর্থনৈতিক দুরবস্থা, সাংস্কৃতিক নৈরাজ্য, গোত্রীয় দাসত্ব, ধর্মীয়ভাবে পৌত্তলিকতার রাজত্ব, খোদ বায়তুল্লাহ শরীফে ৩৬০টি মূর্তি স্থাপন, কন্যাসন্তান জীবন্ত প্রোথিতকরণসহ যাবতীয় জঘন্য অপরাধমূলক কর্মকা-ে ডুবে গিয়েছিল তখনকার মানবগোষ্ঠী। ৪০ বৎসর বয়সে নবীজী (সা.) নবুয়ত লাভ করে ১৩ বছর মক্কায় এবং ১০ বছর মদিনায় সর্বমোট ২৩ বৎসরের অক্লান্ত সাধনা ও সংগ্রামে তাওহীদ, রিসালত ও আখিরাতের মিশন বাস্তবায়ন করে পথহারা-বিভ্রান্ত মানুষদের হেরার আলোকরশ্মি দিয়ে সারা পৃথিবীতে অভূতপূর্ব পরিবর্তন সাধনে সক্ষম হন। মদিনাতুল মুনাওয়ারাহকে রাজধানী করে তিনি নবুয়তী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে আরব উপদ্বীপে সকল ধর্মের মানুষের মাঝে শান্তি কায়িম করেন।
৬৩২ ইংরেজি সালের ৮ জুন মোতাবেক ১১ হিজরীর ১২ রবিউল আউয়াল সোমবার দিন পেয়ারা নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইন্তেকাল করেন। তিনি যে জায়গায় শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন সেখানেই চিরতরে শায়িত হন। আর এটি ছিল উম্মুল মোমিনীন হযরত আয়িশার হুজরা, যা বর্তমানে মসজিদে নববীর ভেতরে রওজাতুন্নবী তথা রওজা শরীফ নামে পরিচিত। যেদিন মহানবী পৃথিবীতে আগমন করেন এর ঠিক ৬৩ বৎসর পরে সেদিনই তিনি বিদায় নেন। তাই মিলাদুন্নবী তথা নবীর জন্মদিবস একই সাথে ওয়াফাতুন্নবী তথা মৃত্যুদিবসও বটে।

জীবনের প্রত্যেকটি ক্ষেত্রে মহানবীর রয়েছে অনুপম আদর্শ ও নির্ভুল শিক্ষা। তিনি পূর্ণাঙ্গ জীবন বিধান ইসলামকে সামগ্রিকভাবে প্রতিষ্ঠিত করে গেছেন। তাই ইসলামে রয়েছে মানবজীবনের যে কোন সমস্যার নিখুঁত ও সুষম সমাধান। আধুনিকতা ও প্রগতিশীলতার সাথে একমাত্র ইসলামই তাল মিলিয়ে চলতে পারে। ইসলাম বিজ্ঞানবান্ধব চিরায়ত সৃষ্টিশীল ধর্মের নাম। মহানবীকে লক্ষ্য করে আল্লাহ পরওয়ারদেগার পবিত্র কুরআনুল কারীমে ইরশাদ করেন, ‘আমি আপনাকে অবশ্যই সারা দুনিয়ার জন্য রহমত তথা দয়াদ্রস্বরূপ প্রেরণ করেছি।’ অন্যত্র এসেছে, ‘আল্লাহর রাসুল (সা.) এর জীবনালেখ্য তোমাদের জন্য রয়েছে সর্বোত্তম আদর্শ।’

বর্তমান নব্য জাহেলিয়াতের ঘনঘোর অন্ধকারে নিপতিত দুনিয়াবাসী যদি শান্তি ও মুক্তি ফিরে পেতে চায় তাহলে অবশ্যই আখেরী নবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মহান সীরাত তথা জীবনাদর্শের দিকে ফিরে আসতে হবে। আল্লাহ পাক আমাদের সে বোধোদয় দান করুন। আমিন

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট