চট্টগ্রাম মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

বোয়ালখালীজুড়ে শোক, নীরব কান্না

নিজস্ব সংবাদদাতা হ বোয়ালখালী

৮ নভেম্বর, ২০১৯ | ৩:০৭ পূর্বাহ্ণ

না ফেরার দেশে চলে গেলেন বক্তৃতায় সংসদ কাঁপানো নেতা মঈন উদ্দিন খান বাদল। গতকাল (বৃহস্পতিবার) সকালে খবরটা ছড়িয়ে পড়ার পর বোয়ালখালী নিজের জম্মস্থানসহ সর্বত্র শোকের ছায়া নেমে আসে। এ যেন বিনা মেঘে বজ্রপাত।

গত ১ নভেম্বর শারীরিক সুস্থতা চেয়ে জুমার নামাজের পর বোয়ালখালীসহ চট্টগ্রাম-৮ এলাকায় মসজিদে মসজিদে বিশেষ মোনাজাত করা হয়। পরবর্তী শুক্রবার না আসতেই তিনি বিধাতার ডাকে সাড়া দিয়ে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।

গতকাল (বৃহস্পতিবার) সকালে তাঁর মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়লে শোকের ছায়া নেমে আসে এলাকায়। বাকরুদ্ধ হয়ে পড়ে যেন বোয়ালখালীর মানুষ। ফেসবুক টুইটারে তাঁর অনবদ্য কীর্তির প্রশংসা আর মাগফেরাত কামনা করে দেশ বিদেশের লক্ষ লক্ষ ইউজারস পোস্ট দিতে থাকেন। সকালে এবং বিকেলে তাঁর নিজের বাড়ি সারোয়াতলী নুর আলী খানের বাড়ি প্রকাশ এমপি বাড়িতে গিয়ে দেখা যায় দলমত, ধর্মবর্ণ নির্বিশেষে সকল শ্রেণি-পেশার মানুষের ভিড়। তাঁরা যেন বিশ্বাস করতে চাচ্ছেন না তাঁদের প্রিয় এমপি মারা গেছেন। অনেকেই হাউমাউ করে কাঁদছেন। আবার অনেকের চোখেমুখে অস্পষ্ট কান্নার শব্দ যেন প্রকৃতিকে ভারী করে দিয়েছে। যে বাড়িটি এমপি আসলে লোকে লোকারণ্যে থাকত, আজ আজ সংখ্যায় আরো বেশি। তবে তাতে কথাবার্তা আনন্দ ফটোসেশনের বদলে চাপা কান্নার গুঞ্জন। দেখা গেছে, তাঁর ভাই মনির উদ্দিন আহমদ খান ঘরের মধ্যে এক কোণায় টেবিলে বসে প্রায় বাকরুদ্ধ। অন্যদিকে ঘরের বাইরে আগতদের সাথে হালকা কথা বলে হারানোর দুঃখ ভুলার চেষ্টা করছেন অপর ভাই কামাল উদ্দিন খান মুকুল। অন্দরমহলে প্রতিবেশী, আত্মীয় আর আগত শতশত নারীদের কান্নার আওয়াজ পরিবেশকে ভারী করে তুলেছে। বিকেলে তাঁর বাড়িতে জড়ো হওয়া শত সাধারণ মানুষ তাঁর মাগফেরাত কামনা করছে দু’হাত তুলে আল্লাহর কাছে, এতে অন্যরকম আবেগঘন পরিবেশের সৃষ্টি হয়।

সংসদ কাঁপানো নেতা মঈন উদ্দিন খান বাদলের মৃত্যুতে শোক ও সমবেদনা প্রকাশ করেছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হািমদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, স্পিকার ড. শিরিন শারমীন চৌধুরী, মন্ত্রী পরিষদ সদস্যবর্গ, সংসদ সদস্য, বিভিন্ন রাজনৈতিক, পেশাজীবী, সামাজিক, সাংস্কৃতিক, ক্রীড়া, ধর্মীয় সংগঠন। শোকের ব্যানারে ব্যানারে ছেয়ে গেছে তাঁর নিজ বাড়ি সারোয়াতলীর এপ্রান্ত থেকে ওপ্রান্ত।
তাঁর মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করে দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোছলেম উদ্দিন আহমদ বলেন, জাতি একজন দক্ষ পার্লামেন্টিরিয়ানকে হারাল। তিনি একজন জনপ্রিয় সাংসদ, বাম রাজনীতির নীতি নির্ধারক, সদালাপি ব্যক্তি, জাতীয় নেতা ছিলেন। তাঁর মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করছি। সমবেদনা জানাচ্ছি শোকাহত পরিবারকে।

উপজেলা বিএনপির সভাপতি ও দক্ষিণ জেলা বিএনপি’র সদস্য সচিব মোস্তাক আহমদ খান বলেন, একজন জাতীয় বীরকে হারালাম। জনগণের ভোটে নির্বাচিত একজন জননেতাকে হারালাম। যিনি বোয়ালখালীসহ সারাদেশের মানুষকে নতুন নতুন স্বপ্ন দেখাতে শিখিয়েছেন। আমরা উপজেলা ও জেলা বিএনপি তাঁর মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করছি।

উপজেলা চেয়ারম্যান মো. নুরুল আলম বলেন, একজন মুক্তিযোদ্ধা, ভাল মনের মানুষকে হারালাম। যাঁর সাথে ছিল প্রটোকল ছাড়াই সকল শ্রেণি পেশার মানুষের সখ্যতা।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার আছিয়া খাতুন বলেন, একজন কিংবদন্তীর মৃত্যু, একজন স্বপ্নবাজের মৃত্যু, একজন অভিভাবকের চিরবিদায়। তাঁর ফেসবুকে তিনি লেখেন, সরকারি-কর্মচারীদের আবেগতাড়িত হতে নেই। কিন্তু যখন মাথার উপর থেকে পিতৃ¯েœহে আগলে রাখা হাত চিরদিনের মত সরে যায়, সে শোক প্রকাশের ভাষা জানা নেই।
উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার মো. হারুন মিয়া বলেন, এ বিদায় মেনে নিতে পারছি না। আল্লাহ তাঁকে জান্নাতবাসী করুন। উন্নয়ন আর শান্তির অগ্রদূত ছিলেন তিনি।

উপজেলা আ. লীগ ও চেয়ারম্যান সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ মোকারম বলেন, শোক জানানোর ভাষা নেই। একজন সাদা মনের মানুষ, একজন মাটির প্রকৃত সন্তানকে হারাল বোয়ালখালীবাসী।
বোয়ালখালী শিক্ষক সমিতির সভাপতি মোহাম্মদ আলী বলেন, একজন শিক্ষাবান্ধব মানুষ ছিলেন তিনি। শিক্ষার কোনো কাজ আটকে থাকেনি তাঁর দায়িত্বকালীন সময়ে।
উপজেলা ইসলামী ফ্রন্টের সভাপতি স ম এনামুল হক বলেন, তিনি ছিলেন বর্ষীয়ান নেতা, আদর্শের বাতিঘর। রাজনৈতিকভাবে সফল একজন ব্যক্তি।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট