চট্টগ্রাম শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

পটিয়া শুক্রবারের প্রতিবেদন

বাতিল জিনিসে নান্দনিক রূপ দেন শাহনাজ বেগম

হারুনুর রশিদ ছিদ্দিকী, পটিয়া

৮ নভেম্বর, ২০১৯ | ১২:৫৯ পূর্বাহ্ণ

সংসারের উচ্ছিষ্ট, ছেঁড়া ও অব্যবহৃত জিনিসপত্র দিয়ে ঘর সাজানোর বিভিন্ন সামগ্রী তৈরি করে যাচ্ছেন পটিয়া পৌর সদরের পাইকপাড়া এলাকার গৃহবধূ শাহনাজ রেগম। ওয়াটার ফলস, ওয়াল ম্যাট, ওয়াল হ্যাঙ্গার, বিভিন্ন ধরনের ঝাড়বাতি, জুয়েলারি স্ট্যান্ড, ফুলের টব, ফুলদানি ইত্যাদি তৈরি করে নিজ ঘর সাজানোর পাশাপাশি আত্মীয় স্বজনকেও উপহার দিয়ে চলেছেন।

জন্মগতভাবে চট্টগ্রাম শহরের চাক্তাই এলাকায় বেড়ে উঠলেও গত ২০০০ সালে সাবেক পটিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আমজু মিয়া সওদাগরের ছোট পুত্র কাঠ ব্যবসায়ী অহিদুল আলম চৌধুরী প্রকাশ বাছেক কোম্পানির সাথে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হওয়ার পর সংসার শুরু হয় তার পটিয়ায়। সাংসারিক কাজের পাশাপাশি শাহনাজ এলাকায় নারীদের অধিকার আদায়ে সোচ্চার, এলাকার সামাজিক বিভিন্ন কর্মকা-ে যুক্ত থেকে অসহায় গরীব মেহনতী মানুষের কল্যাণেও কাজ করে যাচ্ছেন। ব্যস্ততার মাঝেও শাহনাজ অবসর সময়ে সংসারের উচ্ছিষ্ট, ছেড়া ও অব্যবহৃত জিনিসপত্র দিয়ে নিজ হাতে তৈরি করে যাচ্ছেন ঘর সাজানোর বিভিন্ন সামগ্রী। তার বাবা চট্টগ্রাম শহরের চাক্তাই ছোবহান সওদাগর সড়কের হাজী নবী হোসেন সওদাগর ও মা মরিয়ম বেগমের সাত সন্তানের মধ্যে সবার ছোট মেয়ে শাহনাজ বেগম। নগরের ইসলামিয়া ডিগ্রি কলেজ থেকে ডিগ্রি পাস করে পড়াশোনার সমাপ্তি করেন। তার সংসারে এক ছেলে এক মেয়ের মধ্যে ছেলে মারুফ আলম চৌধুরী মুন এইচএসসিতে অধ্যয়নরত, মেয়ে সিদরাতুল মুনতাহা আলম চৌধুরী এবারের জেএসসি পরীক্ষার্থী।

চোখধাঁধানো ঘর সাজানোর সরঞ্জাম কীভাবে তৈরি করেন, জানতে চাইলে শাহনাজ বেগম বলেন, ‘বাতিল জিনিস মানেই যে ফেলনা নয়, এটা এক প্রমাণিত কথা। বাতিল হয়ে যাওয়া বিভিন্ন জিনিস দিয়ে নতুন সামগ্রী বানিয়ে ঘরের শোভাবর্ধন করা যায়। আমি মূলত অবসর সময়ে এ কাজগুলো করে যাই। পাড়ার অন্য মহিলারা যখন ইন্ডিয়ান স্টার জলসা দেখতে ব্যস্ত থাকে আমি তখন ইন্টারনেটের মাধ্যমে ইউটিউবে সার্চ দিয়ে এসব অব্যবহৃত জিনিসের মাধ্যমে ঘর সাজানোর সামগ্রী তৈরি করার কলাকৌশল শিখেছি। সেই অনুসারে অবসর সময়ে ঘরের ছেঁড়া কাগজপত্র, বোতল, ককসিট, কাপড়, সিমেন্ট এসব ব্যবহার করে এগুলো তৈরি করি। তবে এখনো পর্যন্ত যা তৈরি করেছি তা নিজেই ঘর সাজানোর কাজে ব্যবহার করেছি। এছাড়া আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধবদের উপহার হিসেবে প্রদান করেছি। এ পর্যন্ত আমি প্রায় ৩শটির ওপর সামগ্রী তৈরি করেছি।’

একটি ফুলের ল্যাম্প ঘরের সৌন্দর্য অনেক বৃদ্ধি করে। এটি তৈরি করতে হলে রঙিন বোতলের নিচের অংশ কেটে নিই। এরপর আঠা দিয়ে জোড়া দিয়ে একটি গোলক বানাই। একদম নিচে মাঝখানে ফাঁকা রাখতে হয়। এরপর একটা ল্যাম্প স্ট্যান্ডের ওপর বসিয়ে দিতে হয়। এরপর তৈরি হয়ে যায় একটি সুন্দর ল্যাম্পশেড। একটি ওয়াটার ফলস ঘরের মধ্যে থাকলে মনে হয় যেন পাহাড়ি এলাকার ঝর্ণা নিজ ঘরে রয়েছে। এতে করে পাহাড়ি যে পানির শব্দ তাও কানে বাজে। এটি বানাতে প্রয়োজন হয় একটি ওয়াটার পাম্প, ককসিট, সিমেন্ট, কাপড়, রঙ ও একটি পানির গামলা। বাড়িতে অতিথি এলে চটপট বানিয়ে ফুল রেখে চমকে দেয়ার জন্য তৈরি করেছি অন্যরকম ফুলদানি। যা তৈরি করতে হয় কোমল পানীয়ের বোতল নিয়ে, যেগুলো নিচে একটু বাঁকানো থাকে। মাঝ বরাবর কেটে নিতে হয়। এরপর খাঁজ কাটতে হয়। কাটা হলে হাতের চাপে ছড়িয়ে সেট করতে হয়। এরপর প্রত্যেকটা খাঁজ বাঁকিয়ে দিয়ে তৈরি হয় ফুলদানি। সবুজ পাতা দিয়ে বানানো ঝুলন্ত ল্যাম্প বানাতে একটু কষ্ট করতে হয়। সবুজ, সাদা, হলুদ, বাদামি এমন নানা রঙের বোতল থেকে পাতা কেটে নিতে হয়। পাতার ধার মসৃণ করা ও শিরা বানানোর জন্য গরম লোহা দিয়ে সাবধানে শেপ করতে হয়। এরপর তার দিয়ে ডাল বানিয়ে পাতাগুলো সেট করতে হয়। ডালের একমাথা খালি রাখতে হয়। পাতাগুলো নিচের দিকে দিয়ে গোল করে শেপ করতে হয়। শেষে পছন্দমতো বাল্ব সেট করতে হয়। রাতে তো দারুণ লাগবেই, দিনেও অসাধারণ লাগে দেখতে। সতেজ সবুজ ঝুলন্ত ল্যাম্প বানিয়ে তাক লাগানোর মজাই আলাদা।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট