চট্টগ্রাম শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪

চবি ভর্তি পরীক্ষা ‘ভুল সিদ্ধান্ত’ দায় নিতে রাজি নয় ভর্তি কমিটি

নিজস্ব সংবাদদাতা হ চবি

৭ নভেম্বর, ২০১৯ | ৪:০৪ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় নীতি নির্ধারণী পর্যায়ে ভুল সিদ্ধান্তে ঘটে যাওয়া ঘটনার দায় নিতে রাজি নয় ভর্তি কমিটি এবং ভর্তি প্রক্রিয়া বাস্তবায়নকারী দপ্তর আইসিটি সেল। নিজেদের ভুল স্বীকার না করে একে অপরের ওপর দোষ চাপিয়ে দায় সারছেন। এতে করে প্রশ্ন উঠেছে এ ভুলের দায় কার? এদিকে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী ও বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকরা তদন্তের মাধ্যমে দায়ীদের খুঁজে বের করতে কমিটি গঠনের দাবি জানান।

বিশ্বস্ত একাধিক সূত্রে জানা গেছে, গত ২ সেপ্টেম্বর ভর্তি কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হওয়ার পর সে অনুযায়ী সিস্টেম তৈরি করতে আইসিটি সেলকে নির্দেশনা দেন ভর্তি কমিটি। কিন্তু নির্দেশনা অনুযায়ী সিস্টেম তৈরিতে জটিলতা রয়েছে জানিয়ে আলোচনা করতে পরের দিন ৩ সেপ্টেম্বর ভর্তি কমিটির জরুরি সভা আহ্বানের অনুরোধে জানান সেল। ওই সভায় সিস্টেম তৈরিতে সৃষ্ট জটিলতার কথা ডিনদের সমন্বয়ে গঠিত ভর্তি কমিটির কাছে তুলে ধরলেও কোন রকম ইতিবাচক সাড়া মেলেনি। এতে আইসিটি সেলের পরিচালক ক্ষুব্ধ হয়ে ওই মিটিংয়ে অনুমোদন পাওয়া সিদ্ধান্তসমূহ লিখিত আকারে দেয়ার অনুরোধ করেন। গত ৩ সেপ্টেম্বর সিদ্ধান্ত হওয়া নথির একটি কপি পূর্বকোণের হাতে এসে পৌঁছেছে। এতে দেখা যায়, সিদ্ধান্ত ১ এর (ক)তে বলা হয়, ভর্তি পরীক্ষার ফলাফল শেষে ভর্তির জন্য প্রাথমিকভাবে নির্বাচিত ভর্তিচ্ছু প্রার্থীদের অনলাইনে বিভাগ পছন্দক্রম ওয়েব সাইটে প্রকাশের পূর্বে প্রাথমিকভাবে নির্বাচিত ভর্তিচ্ছু প্রার্থীদের ২০১৯ সালের উচ্চ মাধ্যমিক বা সমমান পরীক্ষায় (মান উন্নয়ন) উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের ইউনিটভিত্তিক তালিকা আইসিটি সেল তৈরি করে তা সংশ্লিষ্ট ইউনিট অফিসে সরবরাহ করবে। এছাড়া (খ) এর সিদ্ধান্তের দ্বিতীয় অংশে বলা হয়, ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষে ভর্তির জন্য যারা ২০১৮ সালের উচ্চ মাধ্যমিক বা সমমানের পরীক্ষার ফলাফলে আবেদনের যোগ্য ছিল না। তবে ২০১৯ সালের মান উন্নয়ন পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে যোগ্যতা অর্জন করেছে তারা আবেদনের যোগ্য বিবেচিত হবে। যাচাই বাছাই করে উল্লেখিত যোগ্যতা অর্জন করলেই ওই শিক্ষার্থীর ভর্তির মূল সনদপত্রের সাথে প্রয়োজনীয় ফি জমা নিবে সংশ্লিষ্ট ইউনিট। একই চিঠিতে এব্যাপারে সতর্কতার সাথে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সংশ্লিষ্ট ইউনিট কর্মকর্তাদের অনুরোধ করা হয়।

এ ব্যাপারে আইসিটি সেলের পরিচালক অধ্যাপক ড. হানিফ সিদ্দিকীর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি কোন মন্তব্য করতে রাজি হয়নি।
অন্যদিকে ভর্তি পরীক্ষায় সৃষ্ট জটিলতায় দায়ী কে জানতে প্রতিটি ইউনিট প্রধানের সাথে যোগাযোগ করা হলে তারা কেউ ফোন ধরেননি। তবে এক ইউনিট প্রধান পূনরায় ফোন করে নাম প্রকাশ না করা শর্তে মন্তব্য করতে রাজি হন। তবে সৃষ্ট জটিলতায় কে দায়ী তা স্বীকার না করলেও তিনি বলেন, ‘ সংকট নিরসনে সকলে মিলে সমাধানের চেষ্টা করছি। শিক্ষার্থীদের বিভাগ পছন্দের সুযোগ দেয়া হয়েছে। পরবর্তীতে সবগুলো পর্যায় ক্রমে শেষ করা হবে।

পরীক্ষা শুরু হওয়ার আগে মান উন্নয়ন পরীক্ষার্থীদের কোন তালিকা হাতে পেয়েছিলেন কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এরকম কোন তালিকা পাইনি। বুধবার একটি তালিকা আমাদের হাতে এসেছে।’

এদিকে, বুধবার সকাল থেকে প্রশাসনিক ভবনের সামনে অবস্থান নেন আন্দোলনরত ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীরা। সৃষ্ট জটিলতা নিরসনে আলোচনায় বসে ভর্তি কমিটি। সভা শেষে ভর্তিচ্ছুরা বিভাগ পছন্দ প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করতে পারবেন বলে জানানো হয়। এ বিষয়ে একাডেমিক শাখার ডেপুটি রেজিস্ট্রার ও ভর্তি কমিটির সচিব এসএম আকবর হোছাইন বলেন, শীঘ্রই বিষয় পছন্দের তালিকা দেয়া হবে। স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় তারা আবেদন করবে।
তবে এটিকে অস্পষ্ট সিদ্ধান্ত বলছেন অন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীরা বলছেন, এতবড় সিদ্ধান্তের সাথে কারা জড়িত তাদের খুঁজে বের করা জরুরি। আমরা কার ভুলে এই শাস্তি ভোগ করছি? বিশ্ববিদ্যালয়ের উচিত তদন্তের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের শিক্ষা জীবন নিয়ে খেলা করার নেপথ্যে কারা জড়িত তা তদন্তের মাধ্যমে খুঁজে বের করা হবে।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট