চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪

রিক্শা চলছে না ভিআইপি রোডে

হ গণপরিবহন ব্যবস্থা নিশ্চিত না করায় যাত্রীদের ভোগান্তি চরমে হ ট্রাফিকের এই নতুন সিদ্ধান্ত জানেন না রিকশা চালকরা

আল-আমিন সিকদার

৭ নভেম্বর, ২০১৯ | ৪:০৫ পূর্বাহ্ণ

ভিআইপি রোডকে যানজটমুক্ত রাখতে রিক্শা চলাচল বন্ধে সিদ্ধান্ত হয়েছিল একসপ্তাহ আগে। এ নিয়ে রিক্শা মালিক সমিতির নেতৃবৃন্দ ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধির সাথে হয়েছিল ৩ দফা বৈঠক। সর্বশেষ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের প্রথমদিনে গতকাল বুধবার তিনটি স্পটে মাইকিং করে দিনব্যাপী সচেতনতা তৈরির চেষ্টাও করেছে নগর ট্রাফিক পুলিশের সদস্যরা। কিন্তু তারপরও এই ভিআইপি রোড থেকে পুরোপুরি মুক্ত করা যায়নি রিক্শা চলাচল। যদিও তুলনামূলকভাবে গুরুত্বপূর্ণ এ সড়কে রিক্শা ছিল পূর্বের তুলনায় অনেক কম।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, গতকাল সকাল থেকে দেওয়ানহাট-বারিকবিল্ডিং সড়কে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে রিক্শা চলাচল। ২ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যরে এ ব্যস্ততম সড়কটিকে পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী রিকশা মুক্ত রাখতে মোড়ে মোড়ে দায়িত্ব পালন করেছে ট্রাফিক পুলিশের সদস্যরা। ঘুরিয়ে দিতে দেখা গেছে মূল সড়কে ওঠা রিকশাগুলোকে। তবে বেশ কয়েকটি গলির ভেতর থেকে রিকশা উঠতে দেখা গেছে চলাচল বন্ধ ঘোষণা করা সড়কটিতে। চলাচলরত এসব রিক্শা চালকদের কাছে সড়কে ওঠার কারণ জানতে চাইলে তারা নতুন এ নিয়মের ব্যাপারে কিছুই জানেন না বলে মন্তব্য করেছেন। অন্যদিকে ব্যস্ততম এ সড়কটিতে হঠাৎ করে রিক্শা বন্ধ করে দেয়ায় চরম ভোগান্তিতে পড়েছে নিকটতম গন্তব্যের যাত্রীরা। গণপরিবহন ব্যবস্থা নিশ্চিত না করে রিকশা বন্ধ করে দেয়ায় ট্রাফিক বিভাগের এ সিদ্ধান্ত নিয়ে অভিযোগও তুলেছেন তারা। তবে অনেক পথচারি নতুন এ উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে ট্রাফিক বিভাগকে কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন।

রিকশা চালক জুয়েল বলেন, ‘দেওয়ান হাট থেকে বারিকবিল্ডিং পর্যন্ত যে রিকশা বন্ধ করে দেয়া হয়েছে সেটা আজকে রাস্তায় নেমে জানলাম। গাড়ির কোম্পানিও (রিক্শা মালিক) এ বিষয়ে আমাদের কিছু জানায়নি। বাদামতলী থেকে যাত্রী নিয়ে যখন চৌমুহনীর দিকে যাত্রা শুরু করেছি তখনই পুলিশ বাধা দিয়ে জানালেন যে এই রাস্তায় আর রিকশা চলবে না। প্রতিদিন একবেলা রিকশা চালালে ১২০ টাকা করে কোম্পানিকে জমা দিতে হয়। আগে বাদামতলা থেকে দেওয়ান হাট-চৌমুহনী পর্যন্ত যাত্রী নিয়ে দিনে ৬০০ থেকে ৭০০ টাকা পেতাম। আজ এখন দুপুর ৩টা বাজে, পকেটে আছে মাত্র দুইশ টাকা। বিকাল পর্যন্ত গাড়ি চালালে হয়ত আরও দুইশ টাকা পাওয়া যাবে। কিন্তু কোম্পানিকে ১২০ টাকা দেওয়ার পর নিজে কি খামু, আর ঘরে কি নিমু?।’
সোহাগ নামে আরও এক চালক বলেন, ‘রিকশা বন্ধ করছে ভালো কথা। কিন্তু যেখানে রিক্শা চলাচল করতে পারবে সেখানেও তো অবৈধ টমটম (ব্যাটারি চালিত অটো রিকশা) চলে। মানুষ ৫ টাকা দিয়ে যেতে পারলে কি আর রিক্শায় উঠবে?। আমাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারলে অবৈধ টমটমের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নিতে হবে। না হয়, আমরা গরীব রিকশা চালকরা না খেয়ে মরবো।’

বাদামতলী মোড়ে গাড়ির জন্য অপেক্ষা করা মোমিন নামে এক ব্যবসায়ী বলেন, ‘এখন ছুটির টাইমে বাস পাওয়া ভাগ্যেও ব্যাপার। আমি বাদামতলা থেকে চৌমুহনী যাবো কিন্তু প্রায় দশ মিনিট দাঁড়িয়ে থেকেও একটি খালি বাস পায়নি। যা এসেছে তার বেশিরভাগই ছিল যাত্রীতে ভরপুর। কারণ হচ্ছে নতুন সড়ক আইন কার্যকর হওয়ার পর থেকে ফিটসেন বিহীন ও কাগজপত্র বিহীন যেসব গাড়িগুলো রাস্তায় চলতো তা এখন বন্ধ হয়ে গেছে। তবুও যেগুলো চলছে সেগুলো যদি রিজার্ভ ভাড়ায় কোন যাত্রী না নেয় তাহলে আমাদের ভোগান্তি অনেকাংশে কমে আসবে। তবে গণপরিবহন ব্যবস্থা নিশ্চিত না করে রিক্শা বন্ধ করে দেয়ায় আমরা সাধারণ পথচারিরা চরম দুর্ভোগে পড়েছি।’

উপ-পুলিশ কমিশনার (বন্দর) মোহাম্মদ তারেক আহমেদ পূর্বকোণকে বলেন, ‘আজ থেকে কোনো রিক্শাকে আমরা মূল সড়কে উঠতে দিচ্ছি না। পূর্বের ঘোষণা অনুযায়ী চট্টগ্রামের গুরুত্বপূর্ণ সড়ক বারিক বিল্ডিং থেকে দেওয়ান হাট পর্যন্ত এটা কার্যকর শুরু হয়েছে। সকাল থেকে প্রতিটি মোড়ে ট্রাফিক পুলিশের সদস্যরা কাজ করে যাচ্ছে। তবে এখনো অনেক রিকশা চালক এ বিষয়ে না জেনে চলাচল করছে। আমরা তাদের বুঝিয়ে সড়ক থেকে সরিয়ে দিচ্ছি।’ রিকশা চালকদের ব্যাটারী চালিত অটোরিকশা নিয়ে করা অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘পুরো নগরীর ট্রাফিক বিভাগকে আমরা ঢেলে সাজাতে চেষ্টা করছি। অবৈধ কোন কিছুই সড়কে নামতে দেয়া হবে না। টমটমগুলোর বিরুদ্ধে আমরা একাধিক বার অভিযান পরিচালনা করেছি। আমাদের ডাম্পিং জোনে ৮০টিরও বেশি টমটম আটক অবস্থায় আছে। গণপরিবহন ব্যবস্থার উন্নতি হলে এসব গাড়িগুলোর বিরুদ্ধে আরো কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে জানান তিনি।’

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট