চট্টগ্রাম শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

ভাঙায় পড়ল ৩৫ খালের ৩১৩৫ স্থাপনা

সিডিএ’র উচ্ছেদ অভিযানের প্রাথমিক সমাপ্তি আগামী সপ্তাহ থেকে ফের অভিযান শুরু লাভ লেন, জামালখান ও কোরবানীগঞ্জে অভিযান

ইমরান বিন ছবুর

৭ নভেম্বর, ২০১৯ | ৩:৩৮ পূর্বাহ্ণ

নগরীর জলাবদ্ধতা নিরসনে বাস্তবায়নাধীন মেগা প্রকল্পের কাজের অংশ হিসেবে ৩৬টি খাল পুনরুদ্ধারে নেমে একটি খালের অস্তিত্বই খুঁজে পায়নি সিডিএ। গত চার মাসে ৩৫টি খালের বিভিন্ন অংশ দখল করে গড়ে ওঠা ৩১৩৫টি স্থাপনার অবৈধ অংশ ভেঙেছে সংস্থাটি। অধিক ক্ষতি এড়াতে যেসব ভবন মালিক অবৈধ স্থাপনা নিজ দায়িত্বে অপসারণ করার অঙ্গীকার করেও তা রক্ষা করেননি আগামী সপ্তাহ থেকে সেসব স্থাপনা ভাঙার পাশাপাশি তাদের বিরুদ্ধে মামলা করবে সিডিএ। জানা যায়, চলতি বছরের জুলাই মাসে বাংলাদেশ সেনা বাহিনীর ৩৪ ইঞ্জিনিয়ার কন্সট্রাকশন বিগ্রেডের সহায়তায় খাল উদ্ধারে নামে সিডিএ। জলাবদ্ধতা নিরসনে চিহ্নিত করা ৩৫টি খালে উচ্ছেদ অভিযান চালিয়ে স্থাপনার অবৈধ অংশের আংশিক বা সম্পূর্ণ গুঁড়িয়ে দেয়া হয়।

অভিযান চলাকালে কোন কোন ভবন মালিক অধিক ক্ষতি এড়াতে নিজ উদ্যোগে অবৈধ অংশ অপসারণের অঙ্গীকার করেন। এজন্য সময় বেঁধে দেয় সিডিএ। যারা সময় নিয়েও এসব স্থাপনা অপসারণ করেনি, আগামী সপ্তাহ থেকে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর অভিযানে নামবে সিডিএ। অবৈধ দখলদারদের অবৈধ অংশ অপসারণের পাশাপাশি তাদের বিরুদ্ধে মামলা করা করা হবে বলে জানান, সিডিএ’র স্পেশাল মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. সাইফুল আলম চৌধুরী।

এ পর্যন্ত ৩৫টি খাল থেকে ৩ হাজার ১৩৫ স্থাপনার অবৈধ অংশ ভাঙা হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, অভিযানের সময় অনেক ভবন মালিক সময় নিয়েছেন। মুচলেকা দিয়েছেন তারা নিজ উদ্যোগেই অবৈধ অংশ ভেঙে ফেলবেন। একাজের জন্য তাদেরকে সময় বেঁধে দেয়া হয়েছে। অভিযানে সবচেয়ে বেশি অবৈধ স্থাপনা পাওয়া গেছে গয়নাছড়া খালে। সেখানে ৩৯১টি অবৈধ স্থাপনা ছিল। যারমধ্যে ১৮টি বহুতল ভবন। বিএস এবং আর এস মূলে ৩৬টি খালের মধ্যে পাখিজা নামের একটি খালের অস্তিত্ব পায়নি সিডিএ ও সেনা বাহিনী। এর পরিবর্তে নতুন একটি খাল প্রকল্পে যুক্ত করা হবে বলে জানান সেনা বাহিনীর প্রকল্প পরিচালক।

বাংলাদেশ সেনা বাহিনীর ৩৪ ইঞ্জিনিয়ার কন্সট্রাকশন বিগ্রেড প্রকল্প পরিচালক লেপ্টেন্যান্ট কর্নেল মো. শাহ আলী জানান, গত ২ জুলাই থেকে উচ্ছেদ অভিযান শুরু হয়। ৩৫টি খাল থেকে ৩ হাজার ১৩৫টি অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়েছে। প্রাথমিকভাবে উচ্ছেদ অভিযান শেষ হলেও পুনরায় উচ্ছেদ অভিযান শুরু হবে। যেসব ভবন মালিক বা স্থাপনার মালিক সময় নিয়ে এখনো স্থাপনার অবৈধ অংশ অপসারণ করেনি, এখন তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

খালভিত্তিক অবৈধ স্থাপনা:
নোয়া খালে থেকে ১৩১টি অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়েছে। চাক্তাই খালের ১৩২টি, ডোমখালী খালের ৮২টি, রাজাখালী-১ খালের ১২৯টি, রাজাখালী-২ খালের ১২টি, বামনশাহী খালের ৪৬টি, হিযরা খালের ৫৫টি, মহেশখালী খালের ৭০টি, বির্জা খালের ৬১টি, মহেশ খালের ৮১টি, গয়নাছড়া খাল ১ এবং ২ মিলে মোট ৩৯১টি, খন্দকিয়া খালের ২১টি, মরিয়ম বিবি খালের ৪৪টি, টেকপাড়া খালের ৫২টি, ত্রিপুরা খালের ৯৭ এবং কলাবাগিচা খালের ২৭টি অবৈধ স্থাপনার অবৈধ অংশ বা আংশিক উচ্ছেদ করা হয়েছে। এছাড়া সদরঘাট-১ খালের ১০টি স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়েছে। সদরঘাট-২ খালের ১৬টি, রাজাখালী-৩ খালের ১০৭টি, গুপ্তা খালের ৩৪টি, নয়ারহাট খালের ৩২টি, মির্জা খালের৩৫১টি, নাসির খালের ৭৯টি, ফিরিঙ্গী বাজার খালের ১৪৮টি, মোগলটুলী খালের ৩১টি, উত্তরা খালের ৯টি, চাক্তাই ডাইভার্সন খালের১৫০টি, বাকলিয়া খালের ২০২টি, রামপুরা খালের ৯৩টি, আজব বাহার খালের ২২১টি, শীতল ঝর্ণা খালের ১১৪টি, বদরখালী খালে ৫০টি এবং জামানখান খালে ৫৭টি স্থাপনার অবৈধ অংশ বা আংশিক উচ্ছেদ করা হয়েছে।

উল্লেখ্য, ২০১৭ সালের আগস্ট মাসে ৫ হাজার ৬১৬ কোটি টাকা ব্যয়ে সিডিএ’র ‘চট্টগ্রাম শহরের জলাবদ্ধতা নিরসনকল্পে খাল পুনঃখনন, সম্প্রসারণ, সংস্কার ও উন্নয়ন’ শীর্ষক একটি প্রকল্পের অনুমোদন দেয় একনেক। তিন বছর মেয়াদি এই প্রকল্প বাস্তবায়নের শেষ সময় ২০২০ সালের জুন মাস। প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য ২০১৮ বছরের ৯ এপ্রিল সেনাবাহিনীর সঙ্গে সমঝোতা চুক্তি (এমওইউ) স্বাক্ষর করে সিডিএ। এরপর ২৮ এপ্রিল প্রকল্পের কাজ শুরু হয় এবং চলতি বছরের ২ জুলাই উচ্ছেদ কার্যক্রম শুরু হয়।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট