চট্টগ্রাম শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

সীতাকু-ে ‘ল্যাম্পি স্কিন’ ছড়িয়ে পড়ছে !

৯ হাজার গরু আক্রান্ত দিশেহারা খামারিরা ওষুধ নেই এ রোগের

নিজস্ব সংবাদদাতা হ সীতাকু-

৭ নভেম্বর, ২০১৯ | ৩:৩৮ পূর্বাহ্ণ

সীতাকু-ে গরুর লাম্পি স্কিন রোগ মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়েছে। গত দুই সপ্তাহে অন্তত ৯ হাজার গরু এ রোগে আক্রান্ত হয়েছে এখানে। কিন্তু প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তারা জানিয়েছেন এ রোগের কোন চিকিৎসাই নেই বাংলাদেশে! ফলে রোগাক্রান্ত গরু নিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন গরুর মালিকরা। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, সাম্প্রতিক সময়ে সীতাকু-ের বিভিন্ন স্থানে গরুগুলোর শরীরে ফোলা ও খোস প্যাঁচড়াসহ নানান উপসর্গ দেখা দিচ্ছে।

লক্ষণগুলো গরুর মালিকদের কাছে অচেনা মনে হওয়ায় গরুকে রোগ মুক্ত করতে বিভিন্ন পশু ডাক্তার ও উপজেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয়ে ছুটছেন তারা। পরীক্ষা নিরীক্ষা শেষে বেশির ভাগ গরুই লাম্পি স্কিন রোগাক্রান্ত হয়েছে বলে ডাক্তাররা নিশ্চিত করেছেন। এদিকে, এই রোগ আগে না থাকায় রোগটি থেকে গরুকে রক্ষা করার উপায় জানতে চাইলে ডাক্তারা সাফ জানিয়েছেন যে এই রোগের কোন ওষুধ এখনো বাংলাদেশে নেই! তবে রোগটি যেন বেশি ছড়িয়ে না পড়ে সে লক্ষে কিছু

এন্টিবায়েটিক ও ব্যথানাশক ঔষধ দিচ্ছেন তারা। ফলে এ নিয়ে অসন্তোষে ভুগছেন খামারিরা।

এ রোগে আক্রান্ত গরু নিয়ে বেকায়দায় পড়া সীতাকু-ের বারৈয়ারঢালা ইউনিয়নের টেরিয়াইল এলাকার গরুর খামারি মোহাম্মদ রাসেল জানান, তার খামারে ২২টি গরু রয়েছে। সপ্তাহখানেক আগে একটি গরুর গায়ে কিছু ফোলা লক্ষণ দেখতে পান তিনি। এরপর গরুটিকে নিয়ে উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তার কাছে যান। তাকে গরু দেখানোর পর তিনি বলেন, এটি লাম্পি স্কিন রোগ। কিন্তু এ রোগের কোন ঔষধ বাংলাদেশে নেই! তবে তিনি কিছু এন্টিবায়েটিক ওষুধ দিয়েছেন যেন রোগটি আরো বেশি ছড়িয়ে পড়তে না পারে। এসময় প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা আক্রান্ত গরুটিকে আলাদা করে মশারির ভেতর রাখাসহ বেশ কিছু পরামর্শ দেন। তিনি বলেন, আক্রান্ত গরুকে আলাদাভাবে রাখার পরেও গত সোমবার থেকে আরও তিনটি গরু এ রোগে আক্রান্ত হয়। এখন উপর ওয়ালার দিকে তাকিয়ে থাকা ছাড়া আর কিছু করা নেই মন্তব্য করে অসহায়ত্ব প্রকাশ করেন তিনি।

একইভাবে উপজেলার ছোট দারোগাহাট এলাকার বাসিন্দা তাজুল ইসলাম জানান, গত ১০/১২দিন আগে তার গরুর পেটের মধ্যে একটি ফোলা দেখতে পান। ভেবেছিলেন শিশুদের ঢিলের আঘাতে ফুলে গেছে। একদিন পর দেখেন সমস্ত শরীর গোটা আকারের ফোলা হয়ে গেছে। এখন তিনি ডাক্তারের শরণাপন্ন হয়ে জানতে পারেন এটি লাম্পি স্কিন রোগ।

এ বিষয়ে জানতে উপজেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয়ে গেলে প্রাণিসম্পদ দপ্তরের উপ সহকারী প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা মোখতার আহমেদ হঠাৎ এ উপজেলায় গরুর লাম্পি স্কিন রোগ ছড়িয়ে পড়ার কথা স্বীকার করে বলেন, লাম্পি স্কিন রোগটি এলএসডি নামক একটি ভাইরাসজনিত রোগ। মশা-মাছির মাধ্যমে এটি দ্রুত ছড়ায়। এ রোগে আক্রান্ত গরুকে কামড়ানোর পর মশা-মাছি অন্য গরুকে কামড়ালে সে গরুটিও আক্রান্ত হচ্ছে। এভাবে এটি দ্রুত ছড়িয়েছে। তিনি বলেন, এই রোগটি বাংলাদেশে নতুন। এখনো এর তেমন কোন ওষুধ এখানে আসেনি। তবে রোগটি দ্বিতীয় ধাপে যাতে না ছড়ায় সেজন্য আমরা আক্রান্ত গরুকে কিছু এন্টিবায়েটিক ও ব্যথানাশক ওষুধ দিয়ে থাকি। এরপর গরুর মালিকদের খামার পরিস্কার রাখা, গরুকে মশারিতে রাখাসহ নানান পরামর্শ দিয়ে থাকি। তিনি আরো বলেন, এ উপজেলায় মোট ১০৬টি খামারসহ উপজেলার ব্যক্তি পর্যায়ে ৯৬ হাজার গরু আছে। এর মধ্যে ১০ শতাংশের মত গরু এই রোগে আক্রান্ত হতে পারে বলে তারা ধারণা করছেন। তবে এখনো পর্যন্ত এ রোগে কোন গরু মারা যায়নি বলে প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তারা জানান।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট