চট্টগ্রাম বৃহষ্পতিবার, ২৮ মার্চ, ২০২৪

সর্বশেষ:

পাচার হয় ভালো মানের চাল

খাদ্য বিভাগে অনিয়ম-দুর্নীতি কোন সিন্ডিকেট নেই অনিয়ম দূর করে স্বচ্ছতা ফিরছে : খাদ্যমন্ত্রী

মুহাম্মদ নাজিম উদ্দিন

২৪ অক্টোবর, ২০১৯ | ২:২১ পূর্বাহ্ণ

খাদ্য বিভাগের কর্মকর্তা ও গুদামের কর্মকর্তা-ই হচ্ছেন বড় ‘পোকা’। কুরে কুরে খাচ্ছে গুদামের চাল। দীর্ঘদিন ধরে উন্নতমানের চাল নিয়ে করে আসছে ‘চালবাজি’। টাকার বিনিময়ে ভালো মানের চাল তুলে দেয় ব্যবসায়ীদের হাতে। আর নি¤œমানের চাল পড়ে থাকে গুদামে। গত মঙ্গলবার দেওয়ানহাট সিএসডি খাদ্য গুদামে নি¤œমানের চাল মজুদের অভিযোগে ১০টি গুদাম সিলগালা করা হয়। খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার গুদাম পরিদর্শন করে এই নির্দেশ দেন। এরপর থেকে সরকারি চাল নিয়ে চালবাজিতে পাহাড়তলী বাজারের এক ব্যবসায়ীর নাম ওঠে আসছে। খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার গতকাল বুধবার সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্তে যাদের নাম আসবে কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না।’

তথ্যানুসন্ধানে জানা যায়, খাদ্য গুদামের চাল নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে তুঘলকি কা- চলে আসছে। খাদ্য বিভাগ এবং খাদ্য গুদাম কমকর্তাদের যোগসাজশে খোলা বাজারে নির্বিঘেœ পাচার হয়ে আসছিল উন্নতমানের চাল। দেওয়ানহাট ও হালিশহর এবং জেলা-উপজেলার সবকটি গুদাম থেকে একই যোগসূত্রে চাল পাচার হয়ে আসছে। টিআর,

কাবিখা থেকে শুরু করে সরকারি খাদ্যবান্ধব সকল কর্মসূচির ডিও নিয়ে চলে আসছে ‘চালবাজি’। ডিও’র অনুকূলে বরাদ্দের চাল নিয়ে খোলা বাজারে পাচার হয়। ডিও ব্যবসায়ী চক্র গুদাম কর্মকর্তাদের বশে নিয়ে ভালো মানের চাল নেয় গুদাম থেকে। আর নি¤œমানের চাল পড়ে থাকে খাদ্য গুদামে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ২০১৭ সালে হালিশহর সিএসডি গুদাম খোলা বাজারে চাল পাচারকালে বিপুল পরিমাণ চাল জব্দ করেছিল র‌্যাব। এই ঘটনায় ৭ জনকে আসামি করে মামলা দায়ের করা হয়। মামলাটি বিচারাধীন রয়েছে। মামলায় খাদ্য বিভাগের দুই কর্মকর্তা, পাহাড়তলী বাজারের খাজা ভা-ারের শাহাবুদ্দিন, খাতুনগঞ্জের নুরু সওদাগর, ট্রাকচালকসহ ৭ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছিল। এবার দেওয়ানহাট সিএসডি গুদামে অভিযানের পর আবারো আলোচনায় এসেছে খাজা ভা-ারের মো. শাহাবুদ্দিনের নাম। সেইবার র‌্যাবের অভিযানে আটক দুই কর্মকর্তা ফখরুল ও গুদাম ম্যানেজার প্রনয়ন চাকমা জামিনে এসে ফের খাদ্য বিভাগে বহাল হয়েছেন। ফখরুল চট্টগ্রাম আঞ্চলিক কার্যালয়ের কর্মকর্তাদের যোগসাজশে বদলি বাণিজ্য থেকে শুরু করে অনিয়মের কলকাঠি নাড়েন বলে অভিযোগ রয়েছে। তার সঙ্গে রয়েছে আসাদুজ্জামান ভূঁইয়া নামের আরেক কর্মচারী।

আসাদুজ্জামান অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগে রাঙ্গুনীয়া খাদ্য গুদাম থেকে শাস্তিমূলক বদলি হয়েছিলেন। বর্তমানে তিনি নাজিরহাট খাদ্য গুদামে কর্মরত রয়েছেন। খাদ্য বিভাগে অনিয়ম-দুর্নীতি করেও আরো দাপুটে কাজ করে যাচ্ছেন কয়েক কর্মকর্তা। জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক কার্যালয়ের কয়েকজন কর্মকর্তার যোগসাজশে দীর্ঘদিন ধরে একটি সিন্ডিকেট নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত রয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে।

এবারও গুদামে নি¤œমানের চাল মজুদের অভিযোগে সিলগালা ঘটনার পর শাহাবুদ্দিন ও তার ব্যবসায়িক অংশীদার আলমের নাম আলোচনা আসছে। এছাড়াও পাহাড়তলী চাল বাজার ও চাক্তাই-খাতুনগঞ্জে এই ধরনের একাধিক সিন্ডিকেট রয়েছে।
চাল ব্যবসায়ী শাহাবুদ্দিন দাবি করেন, ‘কাপ্তাই, রাঙামাটি, খাগড়াছড়ির শান্তকরণ প্রকল্পের চাল স্থানীয় ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে বাজার দরে আমরা কিনি। অনেকেই এই ব্যবসা করলেও কিন্তু বার বার আমার নামটি চলে আসে।’
সরকারি বিভিন্ন প্রকল্পের অধীনে চালের ডিও হয়। চাল ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেটের মাধ্যমে সেই ডিও কিনে নেয়। প্রতিটি উপজেলায় ডিও ব্যবসায়ীদের কারসাজিতে খাদ্য গুদামে অনিয়ম চলে আসছে বলে অভিযোগ রয়েছে।

ডিও’র বিপরীতে গুদাম থেকে খাদ্যশস্য সরবরাহ করা হয়। কিন্তু ডিও নিয়ে চলেছে লুকোচুরি খেলা। উপজেলা-থানা বা জেলা থেকে ডিও’র কর্মসূচি নেওয়া হয়। নিয়মানুযায়ী ওই চাল ডিও সংশ্লিষ্ট উপজেলা খাদ্য গুদাম থেকে সরবরাহ করার। কিন্তু সিন্ডিকেটের যোগসাজশে উপজেলা বা থানা গুদাম ছাড়া কৌশলে নগরীর হালিশহর ও দেওয়ানহাট খাদ্য গুদাম থেকে সরবরাহ করা হয়। কিন্তু ক্ষেত্র বিশেষে দুই গুদামে শুধু বরাদ্দের ইন ভয়েস আদান-প্রদান করা হয়। কাগজপত্র ঠিক রেখে চাল পাচার হয় বিভিন্ন গুদাম থেকে। বেশি হয় হালিশহর ও দেওয়ানহাট দুই সিএসডি থেকে। মাঝখানে পরিবহন খরচ সাশ্রয় হয় ব্যবসায়ীদের। তবে সেই খরচ আবার গুদাম কর্মকর্তাদের মধ্যে ভাগ বাটোয়ারা করা হয়। দীর্ঘদিন ধরে এই কারসাজি চলে আসছে বলে একাধিক সূত্র জানায়।

শুধু তাই নয়, চট্টগ্রাম ছাড়াও দেশের বিভিন্ন জেলা থেকেও একইভাবে খাদ্যশস্যের ডিও ব্যবসার প্রচলন রয়েছে। চাল ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট একই কায়দার বাণিজ্য চালিয়ে আসছে।

তবে খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার সাংবাদিকদের বলেন, ‘বর্তমানে কোন সিন্ডিকেট নেই। সরকারের নানা সিদ্ধান্তের কারণে খাদ্য বিভাগে অনিয়ম দূর হচ্ছে। ফিরে আসছে স্বচ্ছতা।’

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, নওগাঁ, দিনাজপুর, নেত্রকোণা ও আশুগঞ্জের চাল উন্নতমানের। এসব অঞ্চলের চালের কদর বেশি। চালের কদর বেশি হওয়ায় পাচার দরও একটু বেশি হয়।

ডিও ব্যবসায়ী ও গুদাম কর্মকর্তাদের যোগসাজশ থাকায় থাকায় বেছে বেছে ভালোমানের চাল খোলা বাজারে পাচার করা হয়। আর নি¤œমানের চাল গুদামে পড়ে থাকে।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট