চট্টগ্রাম শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

ফের জোরালো অভিযান ষ খাল উদ্ধারে নেমেছে সিডিএ

ষ নভেম্বরের শুরুতে সিডিএ ও সেনাবাহিনীর যৌথ পদক্ষেপ

নিজস্ব প্রতিবেদক

২৩ অক্টোবর, ২০১৯ | ২:১২ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রামের জলাবদ্ধতা নিরসনে মেগা প্রকল্পের অংশ হিসেবে দখল হওয়া খাল উদ্ধারে নেমেছে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ)। চলতি বছরের জুলাই মাসে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ৩৪ ইঞ্জিনিয়ার কন্সট্রাকশন ব্রিগেডের সহায়তায় দখল হওয়া খালে উচ্ছেদ অভিযান শুরু করে সিডিএ। ৩৪টি খালের মধ্যে বর্তমানে ৩২ খালে উচ্ছেদ অভিযান প্রাথমিকভাবে সম্পন্ন হয়েছে। এছাড়া, বদরখালী ও জামালখান খালের সম্পূর্ণ এবং মির্জা খালের অবশিষ্ট থাকা অংশে এখনো অভিযান চালানো হয়নি। অবশিষ্ট থাকা খালগুলোতে উচ্ছেদ অভিযান আগামী নভেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহের মধ্যে শেষ হবে বলে জানান সিডিএ ও সেনা বাহিনীর সূত্র। চলমান উচ্ছেদ অভিযানে খালের জায়গা দখল করে নির্মাণ করা ভবন ও স্থাপনার অবৈধ অংশ ভেঙে দিচ্ছে সিডিএ। বাকি অবৈধ অংশ ভেঙে দেয়ার জন্য স্থাপনার মালিকদের নির্দিষ্ট সময় বেধে দেয়। নির্ধারিত সময় পেরিয়ে গেলেও অধিকাংশ ভবন মালিক এখনো স্থাপনার অবৈধ অংশ ভাঙেনি। নগরীর বাকলিয়া, হালিশহর, আগ্রাবাদ ও পতেঙ্গা এলাকায় এসবের প্রমাণও পাওয়া যায়। তবে যারা সময় নিয়েও ভাঙেনি, তাদের অবৈধ অংশ সম্পূর্ণ ভেঙে দিয়ে তাদের বিরুদ্ধে শীঘ্রই আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানিয়েছেন সিডিএ’র মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট সাইফুল আলম চৌধুরী। উচ্ছেদ অভিযান সম্পর্কে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ৩৪ ইঞ্জিনিয়ার কন্সট্রাকশন ব্রিগেড প্রকল্প পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. শাহ আলী দৈনিক পূর্বকোণকে জানান, জলাবদ্ধতা প্রকল্পের ৩৪টি খালের মধ্যে দুইটি খাল সম্পূর্ণ এবং একটি খালের উচ্ছেদ অভিযান আংশিক বাকি আছে। বাকি ৩২টি খালে উচ্ছেদ কার্যক্রম সম্পন্ন হয়েছে। উচ্ছেদ

অভিযানে ভবন বা স্থাপনার অবৈধ অংশ আমরা আংশিক ভেঙে দিয়েছি। বাকি অবৈধ অংশ ভবন মালিকেরা ভাঙবে বলে সময় নিয়েছে। যারা সময় নিয়েও নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ভাঙেনি, তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে। ৩৪টি খালের উচ্ছেদ অভিযান সম্পন্ন হওয়ার পর পুনরায় অভিযান শুরু হবে।

এ সম্পর্কে সিডিএ’র মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট সাইফুল আলম চৌধুরী জানান, এ মাসেই আমাদের উচ্ছেদ অভিযান শেষ হওয়ার কথা থাকলেও শেষ করতে পারছি না। শেখ কামাল আন্তর্জাতিক ফুটবল টুর্নামেন্টের কারণে আমরা পর্যাপ্ত পুলিশ পাচ্ছি না, সে কারণে এ মাসের মধ্যে উচ্ছেদ অভিযান শেষ হবে না। তিনি আরো বলেন, খালের জায়গা দখল করে নির্মাণ করা ভবনের অবৈধ অংশ আমরা আংশিক ভেঙে দিয়েছি এবং মালামাল সরিয়ে বাকি অংশ ভবন মালিককে ভাঙার জন্য নির্দেশ দেয়া হয়েছে। যারা নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ভবনের অবৈধ অংশ ভাঙবে না, সিডিএ গিয়ে তাদের ভবনের অবৈধ অংশ গুঁড়িয়ে দিবে এবং তাদের আর কোন সময় দেয়া হবে না। এর পাশাপাশি সেসব ভবন মালিকের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।

উচ্ছেদ হওয়া খালসমূহ: নোয়া খাল থেকে ১৩১টি অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়েছে। চাক্তাই খালের ১৩২টি, ডোমখালী খালের ৮২টি, রাজাখালী-১ খালের ১২৯টি, রাজাখালী-২ খালের ১২টি, বামনশাহী খালের ৪৬টি, হিযরা খালের ৫৫টি, মহেশখালী খালের ৭০টি, বির্জা খালের ৬১টি, মহেশ খালের ৮১টি, গয়নাছড়া খালের ৩৯১টি, খন্দকিয়া খালের ২১টি, মরিয়ম বিবি খালের ৪৪টি, টেকপাড়া খালের ৫২টি, ত্রিপুরা খালের ৯৭ এবং কলাবাগিচা খালের ২৭টি অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়েছে।

এছাড়া সদরঘাট-১ খালের ১০টি স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়েছে। সদরঘাট-২ খালের ১৬টি, রাজাখালী-৩ খালের ১০৭টি, গুপ্তা খালের ৩৪টি, নয়ারহাট খালের ৩২টি, নাসির খালের ৭৯টি, ফিরিঙ্গী বাজার খালের ১৪৮টি, মোগলটুলী খালের ৩১টি, উত্তরা খালের ৯টি, চাক্তাই ডাইভার্সর খালের ১৫০টি, বাকলিয়া খালের ২০২টি, রামপুরা খালের ৯৩টি, আজব বাহার খালের ২২১টি, শীতল ঝর্ণা খালের ১১৪টি স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়েছে।

উল্লেখ্য, ২০১৭ সালের আগস্ট মাসে ৫ হাজার ৬১৬ কোটি টাকা ব্যয়ে সিডিএ’র ‘চট্টগ্রাম শহরের জলাবদ্ধতা নিরসনকল্পে খাল পুনঃখনন, সম্প্রসারণ, সংস্কার ও উন্নয়ন’ শীর্ষক একটি প্রকল্পের অনুমোদন দেয় একনেক। তিন বছর মেয়াদি এই প্রকল্প বাস্তবায়নের শেষ সময় ২০২০ সালের জুন মাস। প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য ২০১৮ বছরের ৯ এপ্রিল সেনাবাহিনীর সঙ্গে সমঝোতা চুক্তি (এমওইউ) স্বাক্ষর করে সিডিএ। এরপর ২৮ এপ্রিল প্রকল্পের কাজ শুরু হয়।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট