চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪

স্যার আশুতোষ কলেজ

সরকারিকরণের পরও আর ফিরেনি শিক্ষার অতীত গৌরব

বোয়ালখালী পাঁচ হাজার শিক্ষার্থী অনিশ্চয়তায়, অধ্যক্ষ উপাধ্যক্ষসহ শিক্ষক সংকটে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছে কলেজটি।

সেকান্দর আলম বাবর, বোয়ালখালী

২৩ অক্টোবর, ২০১৯ | ১:৩০ পূর্বাহ্ণ

শিক্ষক সংকটে হ-য-ব-র-ল অবস্থা চট্টগ্রামের অন্যতম প্রাচীন কলেজ স্যার আশুতোষ সরকারি কলেজের। ১৯৩৯ সালে ১৯.৪৩ একর জমির ওপর প্রতিষ্ঠিত এ কলেজে রয়েছে নানামুখী সমস্যা। শিক্ষাবান্ধব বর্তমান সরকারের এ যাবতকাল পর্যন্ত দৃশ্যমান উন্নয়ন হয়নি কলেজটিতে। এতে পাঠদান ব্যাহত হচ্ছে হরহামেশাই। শিক্ষার্থীদের অভিযোগ শিক্ষক অপ্রতুলতার কারণে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছে কলেজটি। ১৯৮৬ সালে সরকারিকরণের পরও এটির অতীত রাজকীয় গৌরব ফিরিয়ে আনা সম্ভব হয়নি।

তথ্যানুসন্ধানে জানা যায়, কলেজে ৪১টি শিক্ষক ও প্রদর্শকের পদের বিপরিতে রয়েছেন ২৯ জন। নেই অধ্যক্ষ ও উপাধ্যক্ষও। এনাম কমিশনের প্যার্টান অনুযায়ী সরকারি কলেজে অনার্স থাকলে প্রতি বিভাগে সহযোগী ও সহকারী ও ২ জন প্রভাষক থাকার কথা। অনার্স কোর্স থাকলেও সেই রীতি অনুসরণ হচ্ছে না আশুতোষ কলেজে। গত বছরের ৩১ ডিসেম্বর কলেজের উপাধ্যক্ষ প্রফেসর শামীম আরা বেগম, পিআরএল-এ গমন, এ বছরের ২৩ সেপ্টেম্বর অধ্যক্ষ প্রফেসর সাগর কান্তি দে’র বদলিজনিত কারণে কলেজ ত্যাগ করেন। বর্তমানে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব পালন করছেন ইসলামী ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আবদুল্লাহ আল মামুন চৌধুরী। এছাড়া বাংলা বিভাগে প্রভাষক নেই ১ জন, দর্শন বিভাগে প্রভাষক ১ জন, ইতিহাস বিভাগে সহকারী অধ্যাপক ১ জন, গণিত বিভাগে সহকারী অধ্যাপক ১ জন, রসায়ন বিভাগে প্রভাষক মুহাম্মদ মামুনের অকাল মৃত্যুতে শূন্যপদ ১ জন, পদার্থ বিভাগে সহকারী অধ্যাপক ১ জন, প্রাণিবিদ্যা বিভাগে প্রভাষক ১ জন, উদ্ভিদবিদ্যা বিভাগে প্রভাষক ১ জন, ব্যবস্থাপনা বিভাগে প্রভাষক ১ জন, রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগে প্রভাষক ২ জনের পোস্ট দীর্ঘসময় ধরে খালি রয়েছে। তা পূরণের একাধিকবার মাওশি ও মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠানো হলেও কার্যকর হয়নি। সেই অনুসারে আশুতোষ কলেজে ১৪ বিভাগে অধ্যক্ষ ও উপাধ্যক্ষসহ ৫৮জন শিক্ষকের বিপরীতেও শিক্ষক সংখ্যা প্রায় অর্ধেক। এদিকে ওই কমিশনে সহযোগী অধ্যাপকের পদ থাকলেও তা নেই আশুতোষ কলেজে। প্রদর্শক ছাড়াই চলছে উদ্ভিদ, প্রাণী ও পদার্থ বিদ্যা বিভাগের কার্যক্রম। শূন্যপদগুলোতে লোকবল না থাকায় কলেজের কার্যক্রমে প্রায়শঃ স্থবিরতা দেখা দিয়েছে। কলেজে ২০০৯-১০ শিক্ষাবর্ষ থেকে হিসাববিজ্ঞানে ৮০ ও রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিষয়ে ১৩০ আসন নিয়ে অনার্স কোর্স চালু হলেও চাহিদা অনেক বেশি, ফলে পূরণ হচ্ছে না এলাকার চাহিদাও। গত ২ মাস আগে মন্ত্রণালয় বাংলা বিভাগে অনার্স কোর্স চালুর অনুমতি দিলেও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে আটকে আছে এ পর্যন্ত।

বর্তমান কলেজটিতে শিক্ষার্থী সংখ্যা ৫১৮৩ জন। এদের মধ্যে ছাত্র ২৫৭৪ জন এবং ছাত্রী ২৬০৯ জন। তবে যারা এ বিশাল শিক্ষার্থীর কার্যক্রমকে এগিয়ে নেবেন তাদের সংখ্যা খুবই নগণ্য। মাত্র ২৯ জন। সরকারি পরিপত্রে যেখানে প্রতি ২৫ জন শিক্ষার্থীর বিপরীতে ১ জন শিক্ষক থাকার কথা সেখানে এ কলেজে শিক্ষক বিপরীতে শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় ১৮০ জন। যা শিক্ষকের তুলনায় শিক্ষার্থী ৭ গুন। বলা যায়, শিক্ষক সংকটে পাঠদান কার্যক্রম নিয়মিতই ব্যাহত হচ্ছে আশুতোষ কলেজে। অতিথি শিক্ষক দিয়ে পাঠদান কার্যক্রমকে এগিয়ে নেয়ার প্রাণান্ত চেষ্টাও যেন কিছুতেই কিছু হচ্ছে না। এতে বৃহত্তর চট্টগ্রামের প্রাচীন এ বিদ্যাপীঠের গৌরব হারাতে বসেছে বলে আশঙ্কা করছেন শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা। এ বিশাল কার্যক্রমকে চালাতে কলেজে অতিথি শিক্ষক রয়েছেন ১১জন। যাদের অনভিজ্ঞতা ভোগাচ্ছে পাঠদান কার্যক্রমকে এমনটিই মনে করছেন কলেজের অধিকাংশ শিক্ষার্থী।

এ ব্যাপারে কলেজের (ভারপ্রাপ্ত) অধ্যক্ষ আবদুল্লাহ আল মামুন চৌধুরী বলেন, শিক্ষকের শূন্যপদ পূরণে মন্ত্রণালয়ে ও মাওশিতে লিখিতভাবে প্রতিমাসে জানানো হয়। শিক্ষক সংকট শিক্ষা কার্যক্রমকে ব্যাহত করে স্বীকার করে তিনি বলেন, পাঠদানের ধারাবাহিকতা চাইলে শিক্ষক সংকট দূর করতে হবে। এ সময় তিনি দাবি করেন, একাধিক অনার্স কোর্স চালুর দরকার এ কলেজে। আছে ২টি, বাংলা মন্ত্রণালয়ে অনুমোদন হলেও আটকে আছে বিশ্ববিদ্যালয়ে।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট