চট্টগ্রামের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (এডিএম) এ জেড এম শরীফ হোসেন বলেছেন, নিরাপদ সড়ক উপহার দেয়া আমাদের সকলের দায়িত্ব। এজন্য সারাদেশে দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন চলে আসছে। সড়ক দুর্ঘটনায় কারো মৃত্যুবরণ তা কখনো কাম্য নয়। প্রতিযোগিতামূলক মনোভাব ও অদক্ষ চালক দ্বারা গাড়ি চালানোর কারণে সড়কে প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনা ঘটছে। আবার যান্ত্রিক ত্রুটিযুক্ত ও ফিটনেসবিহীন অসংখ্য লক্কর ঝক্কর গাড়িও সড়কে চলাচল করছে। এগুলোর জন্য শুধু গাড়ির চালক-হেলপার দায়ী নয়, যিনি গাড়ির মালিক তাকেও এ ব্যাপারে সচেতন থাকতে হবে। গাড়ি নিয়মিত চেকআপ করতে হবে। মোটরযান আইন, ট্রাফিক সাইন ও ট্রাফিক পুলিশের নির্দেশ মেনে গাড়ি চালাতে হবে।
মাদক সেবন বা চোখে ঘুম নিয়ে গাড়ি চালানো থেকে বিরত থাকতে হবে। শুধু বড় গাড়ি নয়, মাইক্রোবাস, সিএনজি অটোরিক্সা, নছিমন, করিমন ও অন্যান্য গাড়ি চালকদেরকে নিয়োগ দেয়ার আগে তাদেরকে প্রশিক্ষণের আওতায় আনতে হবে। সড়কে দ্রুত গতিতে গাড়ি চালিয়ে কার আগে কে যাবে এ ধরনের মনোভাব পরিহার করতে হবে। ছাত্র-ছাত্রী, রাস্তা ব্যবহারকারী, গাড়ি-চালক-হেলপারসহ সকলে সচেতন হলে নিরাপদ সড়ক নিশ্চিত করা সম্ভব হবে। সড়কে শৃঙ্খলা ফিরে আসলে দুর্ঘটনা অনেকটা হ্রাস পাবে। যাদের ড্রাইভিং লাইসেন্স নেই তাদেরকে প্রশিক্ষণ শেষে লাইসেন্স নিয়ে গাড়ি চালাতে হবে। রাস্তায় অবহেলায় দুর্ঘটনার জন্য যাতে কেউ মারা না যায় সে ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট সকলকে সোচ্চার থাকতে হবে। নিজেরা সচেতন না হলে দুর্ঘটনা এড়ানো সম্ভব নয় বলেও জানান তিনি।
আজ ২২ অক্টোবর ২০১৯ ইং মঙ্গলবার সকাল ১০টায় নগরীর ষোলশহরস্থ এলজিইডি মিলনায়তনে জেলা প্রশাসন ও বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি (বিআরটিএ) আয়োজিত জাতীয় নিরাপদ সড়ক দিবস-২০১৯ এর আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। এবারের দিবসটির প্রতিপাদ্য বিষয় হচ্ছে- ‘জীবনের আগে জীবিকা নয়, সড়ক দুর্ঘটনা আর নয়’।
সভায় অন্যান্য বক্তারা বলেন, নগরীর গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলোতে ফুটওভার ব্রিজ থাকলেও এগুলোর তেমন ব্যবহার হয় না। মানুষ গাড়িকে হাত উঁচিয়ে সঙ্কেত দিয়ে দৌঁড়ে রাস্তা পারাপার হয়। এতে মারাত্মক দুর্ঘটনার ঝুঁকি থাকে। এ ধরনের মন-মানসিকতা পরিহার করে ফুটওভার ব্রিজ ব্যবহারে সকলকে আন্তরিক ও সচেতন হতে হবে। যাচাই-বাছাই করে ড্রাইভিং লাইসেন্স, গাড়ির রেজিস্ট্রেশন ও ফিটনেস প্রদানসহ গ্রাহকদের হয়রানিমুক্ত সেবা দেয়ার জন্য বিআরটিএ’কে আহ্বান জানান তিনি।
বিআরটি’র উপ-পরিচালক (ইঞ্জি.) মোহাম্মদ শহীদুল্লাহর সভাপতিত্বে কবি ফারুক তাহের ও পুনম দত্তের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় স্বাগত বক্তব্য রাখেন বিআরটিএ চট্টগ্রাম মেট্টো সার্কেলের সহকারী পরিচালক (ইঞ্জি.) উসমান সরওয়ার আলম। নিরাপদ সড়ক সম্পর্কিত বিষয়ে বক্তব্য রাখেন বিআরটিএ চট্টগ্রাম জেলা সার্কেলের সহকারী পরিচালক (ইঞ্জি.) এমডি শাহ আলম।
বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন চট্টগ্রাম সওজ’র নির্বাহী প্রকৌশলী মো.জুলফিকার আলী, সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক অলি আহমদ, মেট্টো মালিক গ্রুপের মহাসচিব বেলায়েত হোসেন বেলাল ও চট্টগ্রাম সড়ক পরিবহন মালিক গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলাম চৌধুরী। আলোচনা সভার পূর্বে নগরীর ষোলশহরের চিটাগাং শপিং কমপ্লেক্সের সামনে থেকে নিরাপদ সড়কের দাবিতে এক বর্ণাঢ্য র্যালি বের করা হয়। র্যালিটি প্রধান প্রধান সড়ক ঘুরে এলজিইডি মিলনায়তনে গিয়ে শেষ হয়।
এতে প্রধান অতিথি ছিলেন অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (এডিএম) এ.জেড.এম শরীফ হোসেন। র্যালী ও আলোচনা সভায় বিভিন্ন স্কুলের সহস্রাধিক শিক্ষার্থী, বিআরটিএ’র বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তা-কর্মচারী ও পরিবহন মালিক-শ্রমিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দরা অংশ নেন।
পূর্বকোণ/রাশেদ