চট্টগ্রাম শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

সম্পদের ছড়াছড়ি ইয়াবা রূপমের

দুটি ভবন দুটি প্লট, ১টি ফ্ল্যাট, ব্যাংকে কাড়ি কাড়ি টাকা, রয়েছে সেফটি লকারও

নাজিম মুহাম্মদ

২১ অক্টোবর, ২০১৯ | ২:০৬ পূর্বাহ্ণ

মঞ্জুরুল আলম নামে একজন ইয়াবা ব্যবসায়ীকে ধরতে গিয়েছিল পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) একটি টিম। তাকে পাওয়া যায়নি। ধরা পড়ে যায় রূপম নামে একজন ব্যক্তি। তার কথাবার্তা অসংলগ্ন মনে হওয়ায় নিয়ে আসা হয় পিবিআই অফিসে। পরে জিজ্ঞাসাবাদে দেখা যায় রূপম বড় মাপের ইয়াবা পাচারকারী। তার বিরুদ্ধে ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাঙামাটিসহ বিভিন্ন থানায় ইয়াবা পাচারে অভিযুক্ত থাকার অপরাধে মামলা রয়েছে ১২টি। ব্যাংকে কাড়ি কাড়ি টাকার পাশাপাশি রয়েছে সেফটি লকারও। তবে সেফটি লকারে কী রয়েছে তা এখনো অজানা।

নিজেকে কখনো কখনো রূপন, কখনো রিপন, কখনো আবার রূপম চৌধুরী পরিচয় দিতেন। গ্রেপ্তার এড়াতে এসব ছদ্মনাম ব্যবহার করতেন তিনি। ঠিকানাও ব্যবহার করতেন একাধিক। বাড়ি বোয়ালখালী উপজেলার সারোয়াতলী হলেও জাতীয় পরিচয়পত্র নিয়েছেন রাঙামাটির কাঠালতলীর ঠিকানায়। সফলও হয়েছিলেন তিনি। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর চোখে ধুলো দিয়ে নির্বিঘেœ করেছেন ইয়াবা ব্যবসা। দেশজুড়ে চলা মাদকের বিরুদ্ধে সাঁড়াশি অভিযানেও রূপম ছিলেন নিরাপদ। গড়ে তুলেছেন অঢেল সম্পদ। সর্বশেষ পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) চট্টগ্রাম মেট্রোর হাতে ধরা পড়ার পর অনুসন্ধানে এই ইয়াবা কারবারির বিপুল সম্পদের খোঁজ মেলে। মাদক ব্যবসার মাধ্যমে তার অর্জিত অবৈধ সম্পদ খতিয়ে দেখতে দুদককে চিঠি দিয়েছে পিবিআই। বোয়ালখালী উপজেলার সারোয়াতলী

গ্রামের পদ্ম পুকুরের সামনে কানুন চৌধুরী বাড়ির মৃত দয়াল চৌধুরীর ছেলে রূপম চৌধুরী ওরফে রূপন চৌধুরী। বিয়ে করেছেন দুইটা। লোকচক্ষুর অন্তরালে থেকে দুই বউয়ের নামে গড়ে তুলেছেন অঢেল সম্পদ। কয়েক কোটি টাকার দুইটি ভবন (একটি চারতলা ও একটি দুইতলা), দুইটি প্লট, একটি ফ্ল্যাট ও ব্যাংকে জমা আছে ৬৫ লাখ টাকা। ব্যাংকের সেফটি লকার ভাড়া নিয়েও জমা রেখেছেন সম্পদ। পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের চট্টগ্রাম মেট্রো অঞ্চলের পুলিশ পরিদর্শক সন্তোষ কুমার চাকমা বলেন, ‘মাদক মামলায় অভিযুক্ত মঞ্জুরুল আলম নামে এক আসামিকে ধরতে গিয়ে ধরা পড়েন রূপম চৌধুরী। প্রাথমিকভাবে সে পুলিশকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করে। এক পর্যায়ে স্বীকার করে তার বিরুদ্ধে ৭-৮টি মামলা আছে। এসব মামলায় তাকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। পরে তদন্ত করতে গিয়ে দেখি তার কোন দৃশ্যমান আয়ের উৎস নেই। কিন্তু তিনি কোটি কোটি টাকার সম্পদ অর্জন করেছেন। বিষয়টি খতিয়ে দেখতে দুদককে জানাতে পিবিআই সদর দপ্তরকে চিঠি দেওয়া হয়েছে।’ পিবিআই জানায়, গত ৭ জুলাই নগরীর খুলশী থানার হলি ক্রিসেন্ট মোড়ের বাস্কেট সুপারের সামনে থেকে রূপম চৌধুরীকে গ্রেপ্তার করা হয়। তার বাড়ি বোয়ালখালী উপজেলায় হলেও রাঙামাটি সদর উপজেলার কাঠালতলী এলাকা থেকে জাতীয় পরিচয়পত্র সংগ্রহ করেছেন তিনি। নগরীর বায়েজিদ বোস্তামী থানার শ্যামল ছায়া আবাসিক এলাকার ‘বসুধা পানকৌড়ি’ নামে আবাসিক ভবনে ফ্ল্যাট কিনে সেখানে বসে ইয়াবা ব্যবসা পরিচালনা করতেন রূপম। একাধিকবার পুলিশের হাতে গ্রেপ্তারও হয়েছেন। কিন্তু একেক সময় একেক নাম ও ঠিকানা ব্যবহার করে পার পেয়ে যান। অল্প সময়ে জামিনে বেরিয়ে এসে আবারো জড়িয়ে পড়েন ইয়াবা ব্যবসায়। শুরুতে কক্সবাজার জেলার চকরিয়া উপজেলার সন্ধ্যা রানী চৌধুরী নামে এক নারীকে বিয়ে করেন। ওই ঘরে তার দুইটি সন্তান রয়েছে। সন্ধ্যা রানী চৌধুরীর নামে নগরীর হালিশহর থানার মধ্যম নাথ পাড়া নির্মল মাস্টারের বাড়ি সংলগ্ন ‘পুষ্প কুঞ্জ’ নামে একটি চারতলা ভবন রয়েছে। এছাড়া ইউসিবিএল ব্যাংকের হালিশহর শাখায় ৫০ লাখ টাকার এফডিআর ও সঞ্চয়ী হিসাবে জমা আছে ১৩ লাখ টাকা। ব্যাংকটির একই শাখায় সেফটি লকার ভাড়া নেওয়া আছে। সেখানে কি পরিমাণ সম্পদ জমা আছে তা জানা যায়নি। সীতাকু- থানার ছিন্নমূলে পৌনে দুই কাঠার একটি প্লট ও বায়েজিদ থানার শ্যামল ছায়া আবাসিক এলাকার ‘বসুধা পানকৌড়ি’ ভবনে একটি ফ্ল্যাট (নম্বর-বি-১) আছে।

২০১৩ সালে নিজেকে মুসলিম পরিচয় দিয়ে বিয়ে করেন কুমিল্লা জেলার নাঙ্গলকোট উপজেলার জাহানারা আক্তারকে। জাহানারারও দুইটি ছেলে রয়েছে। তার নামে বায়েজিদ বোস্তামী থানার জালালাবাদ কুলগাঁও এলাকার খন্দকিয়া হাট কার্টন ফ্যাক্টরির বিপরীতে একটি দুইতলা ভবন আছে। একই এলাকায় দুই শতক জমিও আছে।
এ প্রসঙ্গে জাহানারা আক্তার জানান, আট বছর আগে গার্মেন্টেসে চাকরি করার সময় রং নাম্বারের সূত্র ধরে রূপমের সঙ্গে তার পরিচয়। এরপর বিয়ে। বিয়ের একবছর পর জানতে পারেন রূপম হিন্দু। তার আরেকটি সংসার আছে। পরে তিনি ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছেন। আগে জানতেন তিনি গাছের ব্যবসা করতেন। কয়েক বছর পর লোকজনের কাছ থেকে জানতে পারেন রূপম ইয়াবা ব্যবসা করেন।

জাহানারা বলেন, ‘এটি জানার পর তাকে বারবার বলেছি এসব ব্যবসা ছেড়ে দিতে। কিন্তু সে ছাড়েনি। কয়েক বছর আগে থেকে যখন ‘ক্রসফায়ার’ দেওয়া শুরু হয়, তখন ইয়াবা ব্যবসা ছেড়ে দেয়। তবে পরিবারের কাউকে এ ব্যবসায় যুক্ত করেনি। লোকজন দিয়ে এ ব্যবসা করাতো। আমার নামে কোন সম্পদ রাখেনি। সব সম্পদ তার বড় স্ত্রীর নামে রেখেছে। একটা দুইতলা বিল্ডিং আমার নামে রেখেছিল, সেটা আমি ৪০ লাখ টাকায় বিক্রি করে দিয়ে সংসার খরচ চালিয়েছি। এখন দুই সন্তান নিয়ে সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। শুরুতে কয়েকবার জেলখানায় গিয়ে দেখা করেছিলাম। এখন জামিনের বিষয়ে সবকিছু করছে তার বড় স্ত্রী। এজন্য আমি আর যোগাযোগ রাখিনি। আদালতে আনলে তখন সে ফোন করে।’

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট