চট্টগ্রাম শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪

জনবল সংকটে সেবাবঞ্চিত সাধারণ মানুষ

দিঘিনালায় ২০২টি প্রশাসনিক কর্মকর্তা-কর্মচারীর পদ শূন্য

জাহাঙ্গীর আলম রাজু, দিঘিনালা

২১ অক্টোবর, ২০১৯ | ১:১৩ পূর্বাহ্ণ

খাগড়াছড়ির দিঘিনালায় উপজেলা প্রশাসনের ২৫টি সরকারি দপ্তরে ২০২ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীর পদ শূন্য রয়েছে। এতে প্রত্যাশা অনুসারে প্রশাসনিক সেবা পাচ্ছে না উপজেলার সাধারণ মানুষ।

জনবল সংকটের কারণে চলতি দায়িত্ব ও ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের ভারে ন্যুয়ে পড়েছে উপজেলার প্রশাসনিক ব্যবস্থা। উপজেলা প্রশাসনের বিভিন্ন দপ্তরে দীর্ঘদিন যাবত জনবল সংকট বিরাজ করলেও শূন্যপদ পূরণে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলোর কারোরই নেই যেনো কোন প্রকার মাথাব্যথা। যতই দিন যাচ্ছে ততই বাড়ছে উপজেলা প্রশাসনের শূন্যপদের সংখ্যা। সম্প্রতি দুর্নীতি দমন কমিশনের এক গণশুনানি অনুষ্ঠানে উপজেলা প্রশাসনের বিভিন্ন দপ্তরে বিপুলসংখ্যক কর্মকর্তা-কর্মচারীর পদ শূন্য থাকার বিষয়টি উপস্থাপন করেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ উল্লাহ। তারপর থেকেই সময়মতো প্রশাসনিক সেবা না পাওয়ার বিষয়টি নজরে আসে উপজেলার সচেতন মহল ও সাধারণ মানুষের মাঝে।

জনগুরুত্বপূর্ণ এ উপজেলায় সহকারী কমিশনারসহ (ভূমি) উপজেলা প্রশাসনের ৯টি সরকারি দপ্তরে ১৮ জন প্রথম শ্রেণির কর্মকর্তা, ১২টি দপ্তরে ২৭ জন দ্বিতীয় শ্রেণির কর্মকর্তা, ২১টি দপ্তরে ১০৭ জন তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারী ও ১৫টি দপ্তরে ৫০ জন চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীর পদ দীর্ঘদিন যাবৎ শূন্য অবস্থায় রয়েছে বলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার দেয়া তথ্যানুসারে জানা গেছে।
উপজেলা প্রশাসনের বিভিন্ন দপ্তর ঘুরে জানা যায়, সবচেয়ে বেশি জনবল সংকট রয়েছে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা দপ্তরে। এ দু’টি দপ্তরে ৭ জন মেডিকেল অফিসারসহ বিভিন্ন শ্রেণির কর্মচারীর ৩৪টি পদ শূন্য রয়েছে। যার ফলে জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম ভেস্তে যাওয়ার পাশাপাশি প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যসেবা পাচ্ছে না উপজেলার সাধারণ মানুষ।

এদিকে সহকারী কমিশনারের (ভূমি) পদটি দীর্ঘদিন ধরে শূন্য থাকায় অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে প্রশাসনিক কাজে হিমশিম খাচ্ছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা। অপরদিকে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) আওতাধীন উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় চলতি অর্থবছরে কোটি কোটি টাকার উন্নয়ন প্রকল্প চলমান থাকলেও উপজেলা প্রকৌশলীর পদটি শূন্য দীর্ঘদিন ধরে। বর্তমানে জনগুরুত্বপূর্ণ এ দপ্তরে প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির ১০টি পদ শূন্য রয়েছে। এছাড়াও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার দপ্তর, কৃষি, সমাজ সেবা, প্রাণিসম্পদ, খাদ্য, মাধ্যমিক শিক্ষা, প্রাথমিক শিক্ষা, মৎস্য, পরিসংখ্যান, মহিলাবিষয়ক, তথ্য, আনসার ও ভিডিপি, যুব উন্নয়ন, প্রকল্প বাস্তবায়ন, দিঘিনালা থানা, পোস্ট অফিস, হিসাবরক্ষণ, রিসোর্স সেন্টার, ভূমি অফিস ও জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর দপ্তরে জনবল সংকট রয়েছে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ উল্লাহ জানান, উপজেলার সবকটি দপ্তরেই কমবেশি জনবল সংকট রয়েছে। এ সংকটের কারণে সাধারণ মানুষের প্রত্যাশা অনুসারে প্রশাসনিক সেবা দেয়া সম্ভব হচ্ছে না। বিষয়টি জেলা প্রশাসকসহ ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। জনস্বার্থ বিবেচনায় শূন্যপদ পূরণে জরুরিভিত্তিতে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা প্রয়োজন বলে জানান তিনি।

উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মো. কাশেম জানান, একটি উপজেলায় ২০২ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীর পদ শূন্য থাকার বিষয়টি নজিরবিহীন। জেলার ৯টি উপজেলার মধ্যে দিঘিনালা জনগুরুত্বপূর্ণ। তাই দিঘিনালাবাসীর প্রশাসনিক সেবা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে অবিলম্বে শূন্যপদে কর্মকর্তা-কর্মচারী প্রেরণে সরকারের প্রতি দাবি জানান তিনি।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট