চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪

সিডিএ ও ফায়ার সার্ভিসের অনুমোদন নেই জহুর হকার্স মার্কেটের

ইফতেখারুল ইসলাম হ

২০ অক্টোবর, ২০১৯ | ৩:০১ পূর্বাহ্ণ

প্রায় দেড় হাজার দোকানের পৌর জহুর হকার্স মার্কেটে সিডিএ’র অনুমোদন নেই। অগ্নি নিরাপত্তা ব্যবস্থা না থাকায় লাইসেন্স দেয়নি ফায়ার সার্ভিসও। এমনকি অগ্নিনির্বাপণের জন্য প্রাথমিক সরঞ্জামও রাখেনি মার্কেট কর্তৃপক্ষ। মানা হয়নি বিল্ডিং কোড।

ছোট ছোট দোকানগুলি বেড়া এবং কাঠের ছাদ দিয়ে করা হয়েছে দুই থেকে তিন তলা। চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের (চসিক) তত্ত্বাবধানে পরিচালিত এই মার্কেটের রাস্তাগুলো বেদখল হওয়ার কারণে পানিবাহী গাড়িও প্রবেশ করতে পারেনি। ফায়ার সার্ভিস বলছে, অগ্নিকা-টি গভীর রাতে না হয়ে দিনে হলে প্রাণহানি ঠেকানো কঠিন হত। ক্ষতির পরিমাণ আরো অনেক বেশি হত। নগরীর রিয়াজুদ্দিন বাজারসহ আরো অনেক মার্কেট অগ্নিঝুঁকিতে থাকায় ফায়ার লাইসেন্স দেয়নি ফায়ার সার্ভিস কর্তৃপক্ষ।
এদিকে চসিকের প্রধান প্রকৌশলীকে প্রধান করে ঘটনা তদন্তে কমিটি করেছে সংস্থাটি। গতকাল সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন অগ্নিকা-স্থল পরিদর্শনে গেলে কমিটি গঠন করে তিনদিনের মধ্যে প্রতিবেদন দেয়ার নির্দেশ দেন। চসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সামসুদ্দোহা বলেন, কমিটির প্রতিবেদন অনুযায়ী অগ্নি নিরাপত্তার বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়া হবে। এদিকে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সিডিএ’র ভবনের অনতিদুরে অবস্থিত এই মার্কেটের দোকানগুলো যে যার ইচ্ছেমত উর্দ্ধমুখী সম্প্রসারণ এবং সড়ক দখল করলেও সিডিএ’র সংশ্লিষ্টরা কখনোই কোন পদক্ষেপ নেয়নি।

এবিষয়ে জানতে চাইলে সিডিএ’র অথরাইজড অফিসার-২ প্রকৌশলী মো. শামীম পূর্বকোণকে বলেন, পৌর হকার মার্কেট নির্মাণের সময় সিডিএ থেকে অনুমোদন নেয়নি। সিটি কর্পোরেশনের এই ধরনের আরো ভবন আছে যা নির্মাণের সময় সিডিএ’র অনুমোদন নেয়া হয়নি।

ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স চট্টগ্রাম বিভাগের উপ-সহকারী পরিচালিক জসিম উদ্দিন পূর্বকোণকে জানান, ভাগ্য ভাল যে, অগ্নিকা-টি রাতের বেলা ঘটেছে। দিনে এই ঘটনা ঘটলে প্রাণিহানি ঠেকানো কঠিন হত। এই মার্কেটের ফায়ার লাইসেন্স নেই উল্লেখ করে তিনি বলেন, অত্যন্ত অগ্নিঝুঁকিতে ছিল এই মার্কেট। মার্কেট কর্তৃপক্ষকে লাইসেন্স নেয়ার জন্য অতীতে বহুবার তাগাদা দেয়া হয়েছে। কিন্তু তারা কর্ণপাত করেনি। এই মার্কেটের অগ্নিনিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কি রকম খরচ হতে পারে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, দোকান প্রতি ৫০০ টাকা খরচ করলেই পুরো মার্কেট অগ্নিনিরাপত্তার মধ্যে চলে আসবে। একটি দোকানের জন্য ৫০০ টাকা বড় কিছু নয়। আন্তরিকতা এবং উদ্যোক্তার অভাবে কাজটি হচ্ছে না। গতকাল এই মার্কেটের আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে বেশ বেগ পেতে হয়েছে উল্লেখ করে বলেন, মার্কেটের ভেতরে ফায়ার সার্ভিসের পানিবাহী গাড়ি প্রবেশ করতে পারেনি। অনেক দূর থেকে পাইপের মাধ্যমে পানি নিয়ে তা ছিটাতে হয়েছে। তাছাড়া এখানকার দোকানগুলির বেশিরভাগই বাঁশ, কাঠ এবং টিন দিয়ে নির্মিত। কোথাও আগুন লাগলে দোকান নির্মাণের এসব উপাদানের মাধ্যমে সহজেই দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। গতকালও তাই ঘটেছে। তাই যেসব দোকানে আগুন লেগেছে, তা নির্বাপণ করার পাশাপাশি আগুন যাতে ছড়িয়ে পড়তে না পারে তার নিয়ন্ত্রণ করাই ফায়ার কর্মীদের কাছে অনেক বেশি কঠিন ছিল। অগ্নিনিরাপত্তার গাইড লাইন বিষয়ে জানতে তিনি বলেন, সিডিএ’র ইমারত নির্মাণ আইন ও বিধি মেনে চললেই অগ্নিঝুঁকি আর থাকে না। এটি মার্কেট নির্মাণের সময় স্থপতি-প্রকৌশলীরা তার ডিজাইন করে দেন। জহুর হকার মার্কেট নির্মাণের সময় তা করা হয়নি। নির্মাণের সময় তা না করলেও পরবর্তীতে যেকোন সময় করতে পারে। কিন্তু তাদের আগ্রহ নেই।

১৯৮৯ থেকে টানা ১৪ বছর জহুর হকার্স মার্কেট ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করা মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ ইউনুছ পূর্বকোণকে বলেন, তার দায়িত্ব পালনকালে প্রতিবছর মহড়া চালাতেন। তখন মার্কেটের ভিতর দিয়ে ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি প্রবেশ করতো। মহড়াশেষে ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তারা সচেতনতামূলক বক্তব্য রাখতেন। তিনি দায়িত্ব থেকে সরে যাওয়ার গত ২০ বছরে এখানে কোন মহড়া হয়নি। এ পর্যন্ত এই মার্কেটে ৬ বার অগ্নিকা-ের ঘটনা ঘটেছে উল্লেখ করে বলেন, তিনি দায়িত্ব হস্তান্তরের সময় ছয়টি ফায়ার এক্সটিংগুইশার রেখে আসছিলেন। যাতে আগুন লাগলে প্রাথমিবভাবে মোকাবেলা করা যায়। এছাড়া জালালাবাদ মার্কেটের পাশের একটি পানি টাংকি ছিল। অগ্নিকা- ঘটলে সেখান থেকে পানি নেয়ার জন্যই এটি করা হয়েছিল। বর্তমানে গলি দখল, হ য র ব ল বিদ্যুতের তারের কারণে সেখানে ফায়ারসার্ভিসের গাড়ি প্রবেশ করতে পারেনা। এসব অপসারণ করা উচিত।

আসন্ন শীত মৌসুমে অগ্নিকা-ের আরো বেশি ঝুঁকির কথা উল্লেখ করে মোহাম্মদ ইউনুছ বলেন, শীতকে সামনে রেখে দোতলার উপর কম্বল স্ত্রী করা হয়। গভীর রাতে কম্বল আইরণ করার সময় হয়তো যিনি আয়রণ করেন তিনি ঘুমিয়ে পড়লেন সহজেই অগ্নিকা- ঘটে যাবে। গতকালও সেকারণে আগুন ধরেছে কিনা তা খতিয়ে দেখা উচিত এবং রাত ১১ টার পর দোতলায় কাপড় ইস্ত্রি করা নিষিদ্ধ করা উচিত বলে তিনি মনে করেন।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট