চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪

পুলিশ খুঁজছে শ্রমিক নেতা মাইনুদ্দিনকে লাল শাড়িতেই পারিবারিক কলহ

নাজিম মুহাম্মদ হ

২০ অক্টোবর, ২০১৯ | ৩:০১ পূর্বাহ্ণ

নগরীর মধ্যম হালিশহরের শাহআলমের দুই কক্ষের একটি ভাড়া ঘরেই পরিবার নিয়ে থাকতেন গুদাম শ্রমিক আবু তাহের। এ ঘরেই হাছিনা আক্তারের সাথে তার বিয়ে হয়। সকালে ঘুম থেকে উঠেই স্ত্রী ও আদরের শিশু কন্যাকে নিয়ে একসাথে সকালের নাস্তা করেছেন তাহের। স্ত্রী হাছিনা আক্তার মানুষের বাসায় বুয়ার কাজ করেন। প্রতিদিনের মতো সকাল আটটার দিকে কাজে বের হয়ে যান হাছিনা। এর কিছুক্ষণ পর গুদাম শ্রমিক তাহেরও কাজে বের হয়ে যান। সকাল নয়টার দিকে বাসার ভেতরে হাছিনার কান্নার চিৎকার শুনতে পেয়ে প্রতিবেশী লোকজন এসে দেখেন তাহের রক্তাক্ত মৃতদেহ মেঝেতে ও সাড়ে তিন বছরের শিশু ফাতেমা নূরের মৃতদেহ খাটের ওপর পড়ে আছে। মাত্র দুইঘন্টার ব্যবধানে দুইটি খুনের ঘটনায় প্রতিবেশী লোকজন হতবাক। তবে ঘটনার পর থেকে মাইনুদ্দিন নামে একজন গুদাম শ্রমিক নেতা পলাতক রয়েছে। মাইনুদ্দিন একই এলাকায় কয়েকঘর পরে আর একটি ঘরে ভাড়ায় থাকেন।

প্রতিবেশী লোকজনের ধারণা মাইনুদ্দিনকে পাওয়া গেলে এ হত্যাকা-ের রহস্য উন্মোচন হবার সম্ভবনা রয়েছে। কারণ কয়দিন আগে হাছিনাকে একটি লালশাড়ি উপহার দিয়েছিলো মাইনুদ্দিন। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে তাহেরের সাথে তার স্ত্রীর ঝগড়া লেগে থাকতো প্রায় সময়। তাহেরের ধারণা মাইনুদ্দিনের সাথে তার স্ত্রীর পরকীয়া সম্পর্ক গড়ে উঠেছে।

বন্দর জোনের সহকারী কমিশনার কামরুল হাসান জানান, জোড়াখুনের বিষয়টি আমরা গুরুত্বসহকারে তদন্ত করে দেখছি। আশা করছি কাল (আজ রবিবার) ভাল কিছু দিতে পারবো।
বাড়ির মালিক শাহ আলম জানান, প্রায় চার বছরের অধিক সময় ধরে স্ত্রীসহ তাহের এ ভবনের নিচ তলায় ভাড়া থাকছেন। এ বাসাতেই তাদের বিয়ে হয়েছে। নিহত শিশু ফাতেমার জন্মও এ বাসায়। একই ভবনের তিন তলায় হাছিনার এক বোন স্বামীসহ ভাড়ায় থাকেন।

অনুসন্ধানে জানা যায়, আবু তাহেরের বাড়ি নোয়াখালি হলেও ২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে শাহ আলমের ভাড়া বাসার ঠিকানায় ভোটার হয়েছেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক প্রতিবেশী লোকজন জানান, হাছিনা মানুষের বাসায় বুয়ার কাজ করতেন। যে গুদামে তাহের শ্রমিকের কাজ করতেন সেই গুদামের শ্রমিক নেতা মাইনুদ্দিনের সাথে হাছিনার পরকীয়ার সম্পর্ক গড়ে উঠেছিলো। মাইনুদ্দিনের বাড়িও নোয়াখালি সূবর্ণচরে। গত ১৭ আগস্ট হাছিনাকে একটি লাল রঙের শাড়ি উপহার দেন মাইনুদ্দিন। এ শাড়ির ঘটনাকে কেন্দ্র করে কয়দিন ধরে তাহেরের সাথে তার স্ত্রীর প্রায় সময় ঝগড়া লাগতো।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক প্রতিবেশী এক মহিলা জানান, সকাল আটটার সময় হাছিনা প্রতিদিনের মতো কাজে চলে যায়। এর কিছুক্ষণ পর তাহেরও তার কাজে চলে যায়। সকাল নয়টার সময় হাছিনার কান্নার শব্দ শুনে প্রতিবেশী লোকজন বিষয়টি জানতে পারেন। প্রতিবেশী উক্ত মহিলা জানান, হাছিনা একা তার স্বামী ও মেয়েকে খুন করেছে এটা বিশ্বাসযোগ্য নয়। গুদাম শ্রমিক নেতা মাইনুদ্দিন মাঝে মাঝে হাছিনার ঘরে আসতো। মাইনুদ্দিনের সাথে অনৈতিক কিছু দেখে ফেলার কারণে তাহের ও তার শিশু কন্যা খুনের শিকার হয়েছেন কিনা তা খতিয়ে দেখা দরকার।

বন্দর থানার পরিদর্শক (ওসি) সুকান্ত চক্রবর্তী জানান, হাছিনার পরকীয়ার একটি বিষয় এসেছে। তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আমরা আটক করেছি।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট