চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪

কাজীর দেউড়ি চত্বরের নতুন নাম জাকেরিয়া চৌধুরী চত্বর

নিজস্ব প্রতিবেদক

১৯ অক্টোবর, ২০১৯ | ২:৩৯ পূর্বাহ্ণ

নগরীর ১৫নং বাগমনিরাম ওয়ার্ডেও কাজীর দেউড়ি চত্বরকে ডা. এম এম জাকেরিয়া চৌধুরী চত্বর নামকরণ করা হয়েছে।

আগামী সোমবার বিকালে চত্বরের উদ্বোধন করবেন সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন। স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় গত ১৮ এপ্রিল তাঁর নামে চত্বরটি নামকরণের প্রশাসনিক অনুমোদন দেয়। ডা. জাকেরিয়া চৌধুরীর পুত্র চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের উপসচিব আশেক রসুল চৌধুরী টিপু পূর্বকোণকে বলেন, তার পিতা রাউজানের ২নং ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচিত প্রতিনিধি ছিলেন ২৯ বছর। একইসাথে তাঁর ঘনিষ্ঠ বন্ধু সাংবাদিক সাধন ধর ছিলেন চেয়ারম্যান। তিনি প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক ছিলেন ডাবুয়া ওয়েলফেয়ার এসোসিয়েশন ও ডাবুয়া বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের। দুইকানির অধিক জমি দান করে পশ্চিম ডাবুয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ডাবুয়া টি আই ইনস্টিটিউশন এবং ফোরকানিয়া মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি নির্বাহী সদস্য ছিলেন রাউজান কলেজ এবং পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির। পরিচালক ছিলেন রেড ক্রিসেন্ট ও রাউজান ইয়ং মেনস এসোসিয়েশনের। সাবেক পরিচালক ছিলেন ডাবুয়া আর্বান কো-অপারেটিভ ব্যাংক, রাউজান থানা সেন্ট্রাল কো-অপারেটিভ সোসাইটির। জুরার এ- এসেসর ছিলেন চট্টগ্রাম জজ কোর্টের। দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে তিনি চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আওয়ামী মুসলিম লীগের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ছিলেন। ১৯৪৯ সালের পর থেকে রাউজান থানা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন।

১৯৫২ সালে দেশজুড়ে ভাষা আন্দোলনের শুরুতেই রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ রাউজান উপজেলার সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। ৫৪’র যুক্তফ্রন্ট নির্বাচন, আইয়ুব বিরোধী শাসনামলে ৬৬ এর ছয়দফা আন্দোলনেও সক্রিয় অংশগ্রহণ করেন। ওই সময় জাকেরিয়া চৌধুরী গ্রেপ্তার হন। সাথে রাউজান উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি ও মেয়র শফিকুল ইসলাম চৌধুরী বেবীও ছিলেন। প্রখ্যাত আইনজীবী উইলিয়ামসের নেতৃত্বে আগরতলা মামলা পরিচালনায় আওয়ামী লীগ কর্মীদের সংগৃহীত মামলার চাঁদা জননেতা এম এ আজিজের নির্দেশনায় বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য সহধর্মিণীর হাতে পৌঁছে দেয়ার দায়িত্ব পালনে সম্মানিতবোধ করতেন। ১৯৭০ এর নির্বাচনে রাউজানের প্রধান নির্বাচনী সমন্বয়কারীর দায়িত্ব পালন করেন। ওই নির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী অধ্যাপক মো. খালেদের নিকট তৎকালীন পাকিস্তানের স্পিকার ফজলুল কাদের চৌধুরী পরাজিত হন। ১৯৭১ সালে ভারতের সাবরুম ও হরিণায় ক্যাম্পে মুক্তিযোদ্ধাদের ট্রেনিং ও ট্রানজিট ক্যাম্পের সংগঠক ও তত্ত্বাবধায়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধুর দেশগঠনের আহবানে সাড়া দিয়ে যুদ্ধ বিধ্বস্ত রাস্তাঘাট সংস্কার-পুনঃনির্মাণ, এলাকায় বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়সহ অসংখ্য প্রতিষ্ঠান নির্মাণ, এলাকা পুনর্গঠনে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। ৭৫ এর ১৫ আগস্ট সপরিবারে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর নির্বাক হয়ে পড়েন। চা-বাগানের মালিকসহ সম্পদশালী পিতার একমাত্র সন্তান হয়েও উদাসীন হয়ে চা বাগানের মালিকানা পর্যন্ত ছেড়ে দেন।

সাংগঠনিকভাবে তিনি চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ছিলেন। এছাড়া ১৯৫৩ সালে আসকার দিঘি দোস্ত কলোনি জামে মসজিদের মতোয়াল্লি এবং দুই কানি জায়গার উপর মসজিদ ও মাদ্রাসা নির্মাণ এবং মানুষজন চলাচলে জমিদান পূর্বক এলাকার উন্নয়নে ভূমিকা রাখেন।

তিনি জীবন সায়েহ্নও কবিতা, কলাম লেখা, বই পড়া ও টেলিভিশনের খবরাখবর দেখা, মসজিদ ও মানবতার সেবা, মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক দলিল, বই সংগ্রহ করা ও পড়ে শেষ জীবন কাটান। তিনি ২০১৩ সালের ২১ অক্টোবর রাত পৌণে ১২টায় নিজ বাসভবনে ইন্তেকাল করেন। বাসভবনের পাশে দক্ষিণ পূর্ব আসকার দিঘির পাড়স্থ দোস্ত কলোনি মসজিদ সংলগ্ন স্থানে তিনি চিরনিদ্রায় শায়িত আছেন।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট