চট্টগ্রাম বৃহষ্পতিবার, ২৮ মার্চ, ২০২৪

সর্বশেষ:

মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয়ের প্লেট সিএনজি ট্যাক্সিতে!

হ প্রতি প্লেটের মূল্য ৮০ হাজার টাকা হ প্লেট লাগিয়ে নগরে চলছে প্রায় দেড়শতাধিক ট্যাক্সি

আল-আমিন সিকদার

১৭ অক্টোবর, ২০১৯ | ১:৫৯ পূর্বাহ্ণ

সিএনজি ট্যাক্সি এখন যেন এক একটি সোনার হরিণ। শো-রুম মূল্য ৩ লাখ ৭০ হাজার টাকা হলেও বর্তমানে রেজিস্ট্রেশনসহ একটি সিএনজি ট্যাক্সির দাম দাঁড়ায় প্রায় ১৪ লাখ টাকা। বিআরটিএ থেকে রেজিস্ট্রেশন না দেয়ার ফলে হঠাৎ আকাশ ছোঁয়া হয়ে যায় এর দাম। এতে নতুন করে ব্যয়বহুল এ ব্যবসায় আর আগ্রহ দেখাচ্ছে না ব্যবসায়ীরা। ব্যবসায়ীদের এ দুঃসময়ের সুযোগ নিয়ে সক্রিয় হয়ে উঠেছে একটি প্রতারক চক্র। চক্রটি মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয়ের প্লেটসহ আদালতের ভূয়া অনুমতি পত্র দিয়ে গাড়ির মালিকদের কাছ থেকে নিচ্ছে ৮০ হাজার টাকা। এই প্লেট ও কাগজ থাকলে গাড়ির রেজিস্ট্রেশন করার প্রয়োজন নেই বলে গাড়ির মালিকদের আশ্বস্ত করছে প্রতারক চক্রটি। স্বল্প ব্যয়ে সড়কে সিএনজি ট্যাক্সি নামানোর লোভে পড়ে এ প্রতারক চক্রের কাছ থেকে মন্ত্রণালয়ের ভুয়া প্লেট সংগ্রহ করছে ব্যবসায়ীরা। যেখান থেকে কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে প্রতারক চক্রটি।

সম্প্রতি নগর পুলিশের ট্রাফিক বিভাগের হাতে এমন দুটি সিএনজি ট্যাক্সি আটকের পর বেরিয়ে আসে এসব তথ্য। ট্রাফিক পুলিশের পরদির্শক (প্রশাসন) মহিউদ্দিন পূর্বকোণকে বলেন, ‘এ মাসে রেজিস্ট্রেশন বিহীন বেশ কয়েকটি সিএনজি ট্যাক্সি আটক করা হয়। এর মধ্যে দুটি সিএনজি ট্যাক্সির সামনে মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের পিতলের গোলাকৃতির দুটি প্লেট ছিল। এছাড়া গাড়ি দুটির চালক থেকে যেসকল কাগজ জব্দ করা হয় তাও ভুয়া। চক্রটি প্রতারণা করে সিএনজি মালিকদের কাছে ৮০ হাজার টাকা করে বিক্রি করছে প্রতিটি প্লেট। ধারণা করা হচ্ছে, নগরীতে এ ধরণের প্লেট ব্যবহার করে প্রায় শতাধিক সিএনজি ট্যাক্সি চলছে।’

জব্দ হওয়া কাগজগুলোতে দেখা যায়, ঢাকা বিআরটিএ কার্যালয়ের চীফ অফিসারের স্বাক্ষর করা অনুমতি পত্র। ডুপ্লিকেট কার্বন রিসিপ্ট বুক। সেখানেও ৪৬ হাজার একশ টাকার রশিদে স্বাক্ষর করেছেন এক চীফ অফিসার। জিয়াউর রহমান নামে এক ব্যক্তির জাতীয় পরিচয়পত্র। মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অনুদান পত্র। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের সাব জজ আদালত (ঢাকা) এর ‘দায়মুক্তি সনদপত্র’। যেখানে লেখা রয়েছে, উক্ত গাড়িদ্বয় ঢাকা সিটি কর্পোরেশন ব্যতিত দেশের সকল সিটি কর্পোরেশনে চলাচলে অনুমতি প্রদান করা হলো। ট্রাফিক বিভাগকে এ গাড়ি চলাচলে কোন রকম হয়রানি না করার আদেশ করা হলো। এসব কাগজের সাথে সংযুক্ত ছিল ট্রাফিকের আটক করার রশিদ। যেখানে পারভেজ নামে এক ব্যক্তির কাছ থেকে গাড়িটি আটক করা হয় বলে উল্লেখ রয়েছে।

পারভেজের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি পূর্বকোণকে বলেন, ‘গাড়িটি আমি বদলি চালাচ্ছিলাম। ওই দিনই প্রথম গাড়িটি চালাই। আমি গাড়ির মালিক কে জানিনা। তবে যার কাছ থেকে বদলি নিয়েছি তার নাম নাছের।’ এরপর পারভেজের থেকে নাছেরের মোবাইল নম্বর সংগ্রহ করে তার সাথে যোগাযোগ করা হয়।

নাছের বলেন, ‘এই গাড়িটার মালিক একটা মহিলা। তার নাম আমি জানি না। তবে একজন এই গাড়িগুলো দেখাশুনা করেন।’ এসময় গাড়িটির তত্বাবধায়কের নম্বর চাইলে, তিনি পাঠাচ্ছেন বলে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন। তবে নাছের প্রতিবেদককে কোন নম্বর না পাঠালেও নিজেকে জোবায়ের পরিচয় দিয়ে প্রতিবেদককে ফোন দেয় এক ব্যক্তি। আটক হওয়া সিএনজি ট্যাক্সির চালক থেকে জব্দ করা কাগজের বৈধতা আছে বলে দাবি করেন। তবে এ সিএনজি ট্যাক্সিগুলোর সাথে তার সম্পৃক্ততার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি কোন মন্তব্য করেনি।

চট্টগ্রাম জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কমান্ডার মো. শাহাবুদ্দিন পূর্বকোণকে বলেন, ‘মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয়ের এমন কোন কার্যক্রম নেই। এছাড়া মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয়ের অনুদানে কেউ গাড়ি নিলেও তাকে সরকারি নিয়ম অনুযায়ী রেজিস্ট্রেশন করাতে হবে। এদের কারণে মুক্তিযোদ্ধাদের মান ক্ষুণœ হচ্ছে। চক্রটির বিরুদ্ধে প্রশাসনের কঠোর হস্তক্ষেপ কামনা করছি।’

এদিকে জব্দ হওয়া কাগজ পত্রগুলো ভুয়া এবং এটি সংঘবদ্ধ একটি প্রতারক চক্রের কাজ বলে জানিয়েছেন চট্টগ্রাম বিআরটিএর নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট এস এম মঞ্জুরুল হক। তিনি বলেন, ‘জব্দ হওয়া কাগজগুলোর মধ্যে বিআরটিএর যে কাগজটি রয়েছে সেটি ভূয়া। কারণ কাগজটিতে স্বাক্ষর করেছেন একজন চীফ অফিসার। অথচ বিআরটিএতে চীফ অফিসার বলতে কোন পদ নেই। শুধু বিআরটিএ’রটিই নয়, সেখানে আদালতের যে কাগজগুলো রয়েছে সেগুলোও ভুয়া। কারণ, সেখানে আদালত যে নির্দেশনা দিয়েছেন তা কখনো আদালত দিতে পারেন না। এটি একটি সংঘবদ্ধ প্রতারক চক্রের কাজ। তাদের ধরতে আমরা কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করবো।’

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট