চট্টগ্রাম শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

পুকুর ভরাট বন্ধ করতে পারেনি প্রশাসন

৬ পাহাড় কেটে সাবাড় কক্সবাজারে

নিজস্ব সংবাদদাতা হ কক্সবাজার

১৬ অক্টোবর, ২০১৯ | ৩:২২ পূর্বাহ্ণ

পাহাড় কেটে ভরাট করা হয়েছে বিশাল আকৃতির পুকুর। তাও আবার কক্সবাজার সদর উপজেলা কমপ্লেক্সের অভ্যন্তরে। পরিবেশবাদীদের আপত্তির মুখে কিছুদিন বন্ধ থাকলেও পরে লুকোচুরি করে তা আবারও ভরাট করা হয়েছে। গণপূর্ত বিভাগ জানিয়েছে, পুকুরটি ভরাট করে তাতে একটি মসজিদ নির্মাণ করা হবে। আর ওই কাজের দায়িত্ব পেয়েছে ‘মা কনস্ট্রাকশন’ নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।

সরেজমিন দেখা গেছে, কক্সবাজার সদর উপজেলা কমপ্লেক্সের অভ্যন্তরে এক একর আয়তনের পুকুরটি ভরাট কাজ শেষ করা হয়েছে দিনে-রাতে মাটি ফেলে। সেখানে নির্বিচারে কেটে ফেলা হয়েছে গাছ। কক্সবাজার সদর উপজেলার পিএমখালী ইউনিয়নের উত্তর পরানিয়াপাড়া শ্মশানের পাশে আলতাজ, মমতাজ, মিন্টুর দখলে থাকা একটি সরকারি পাহাড়, তোতকখালীর কমলাঘোনার সোনা আলী, রিনা বেগম, ধলু, নাজিম উদ্দিন বাবুল, ডোনার ও আলমের দখলে থাকা ৫টি বন বিভাগের মালিকানাধীন পাহাড় কাটা হয়েছে দিনে-রাতে। ১০/১২টি পিকআপ যোগে পুকুর ভরাটে মাটি নিয়ে যান মনজুর, মুফিজ, ইয়াছিন, আবদুল্লাহসহ ৭ জন পিকআপ মালিক। বর্তমানে পুকুরটি ভরাট শেষ পর্যায়ে। এখন সেখানে যাতে পাহাড়ের মাটি দেখা না যায় সেজন্য উপরে বালির প্রলেপ দেয়া হচ্ছে। পরিবেশবাদী সংগঠন ‘এনভায়রনমেন্ট পিপল’ এর প্রধান নির্বাহী রাশেদুল মজিদ বলেন, ‘পাহাড় কেটে পুকুর ভরাটে আমরা প্রতিবাদ জানালে তা ১৫ দিন বন্ধ ছিল। কিন্তু লুকোচুরি করে আবারও পাহাড় কেটে পুকুরটি ভরাট করে ফেলা হয়েছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘মা কনস্ট্রাকশন নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান অতি মুনাফার লোভে পিএমখালীতে একে একে ৬টি পাহাড়

কেটে সাবাড় করছে। কেটে ফেলা হয়েছে গাছও।’ যোগাযোগ করা হলে মা কনস্ট্রাকশনের স্বত্বাধিকারী নাজমুল আলম বলেন, ‘নির্মাণ কাজের জন্য পুকুরটি ভরাট করা হচ্ছে। তবে পাহাড় কেটে ভরাট করা হচ্ছে কিনা তা আমার জানা নেই। সেখানে আমার নিয়োজিত লোকজন কাজ করছে।’

ঠিকাদারের পক্ষে কাজ তদারকিতে থাকা কাইয়ুম নামে এক ব্যক্তি বলেন, ‘ স্থানীয় হাজিপাড়ার পিকআপ মালিক মনজুরকে পুরো পুকুরটি ভরাটের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। তিনি ১০/১২টি পিকআপ নিয়ে পুকুর ভরাট করছেন, কিন্তু মাটি কোথা থেকে আনছেন তা আমার জানা নেই।’

মনজুর বলেন, ‘ঠিকাদারই আমাকে এসব মাটি আনতে বলেছেন। আর এটি সরকারি কাজ এখানে সমস্যা হওয়ার কথা নয়।’
কক্সবাজার উত্তর বন বিভাগের পিএমখালী রেঞ্জে’র রেঞ্জ কর্মকর্তা মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘পরানিয়াপাড়ায় পাহাড় কাটা হচ্ছে না। তোতকখালীতে কয়েকটি স্পটে পাহাড় কাটা হচ্ছে। সেখানে ১৮টি মামলা দেয়া হয়েছে। কিন্তু বন মামলা করে পাহাড় কাটা ঠেকানো যাচ্ছে না। বিষয়টি প্রশাসনের বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত আকারে জানিয়েছি।’

পরিবেশ অধিদপ্তর কক্সবাজার কার্যালয়ের উপ-পরিচালক মো. নুরুল আমিন বলেন, ‘পাহাড় কেটে পুকুর ভরাট বন্ধ রাখতে বলা হয়েছিল। সংশ্লিষ্টদের নোটিশও দেয়া হয়েছিল। বিষয়টি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে।’

গণপূর্ত অধিদপ্তর কক্সবাজারের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. জহির উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘পুকুরটি ভরাট করে মসজিদ নির্মাণের জন্য মা কনস্ট্রাকশনকে কার্যাদেশ দেয়া হয়েছে। কিন্তু সেখানে পাহাড় কেটে মাটি আনা হবে তা বলা হয়নি। পাহাড় কাটা হলে তার সম্পূর্ণ দায় ঠিকাদারের।’

দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মো. কামাল হোসেন বলেন, ‘গাছ কাটা, পাহাড় কাটা, পুকুর ভরাট আইনত অপরাধ। আমরা নিয়মিত এসবের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করে থাকি। পাহাড় কাটার বিষয়টি গুরুত্বের সাথে নিয়ে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া হবে।’

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট