চট্টগ্রাম শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪

মৎস্য খামার ব্যবসায়ী হত্যা মামলায় ৯ জনের ফাঁসির আদেশ

আদালত প্রতিবেদক

১৫ অক্টোবর, ২০১৯ | ১০:৩৩ অপরাহ্ণ

কুমিল্লার দাউদকান্দির মৎস্য খামার ব্যবসায়ী জাহাঙ্গীর সরকার খুনের মামলায় আদালত তিন পরিবারের পিতা-পুত্রসহ ৯ আসামির ফাঁসি ও ৪ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের আদেশ দিয়েছেন। সোমবার (১৪ অক্টোবর) চট্টগ্রাম বিভাগীয় দ্রুতবিচার ট্রাইবুনাল বচিারক আবদুল আলীম এ রায় দেন। দণ্ডাদেশপ্রাপ্ত সকলেই কুমিল্লা জেলার দাউদকান্দি উপজেলার হাটচান্দিনা এলাকার গৌরীপুরের বাসিন্দা।

ফাাঁসির আদেশপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন- মো. হারুন মিয়া (৪৫) ও তার দুই ছেলে মো. সজিব (২৪), মো. রাজিব, (২৭), আবু তাহের (৪৭) এবং তার দুই ছেলে আমিন (২৩), মো. শাওন (২২), মরহুম আসাদ মিয়ার ছেলে মো. মোহসীন (২৭) ও মোছলেম মিয়ার দুই ছেলে মো.মমিন (২৮) ও মো. রবু (১৯)। এদের প্রত্যেককে এক লাখ টাকা করে অর্থদ- অনাদায়ে দু’বছর কারাদ-ের আদেশ দেয়া হয়েছে। এদের মধ্যে মোহসীন ও আবু তাহের ছাড়া বাকিরা পলাতক রয়েছেন।

যাবজ্জীবন কারাদণ্ডাদেশ প্রাপ্ত চার আসামি হলেন- মোছলেম উদ্দিনের ছেলে মো. মতিন (৩৫), মৃত্যু দ-াদেশপ্রাপ্ত আসামি আবু তাহেরের দুই ছেলে শাহপরান (২৩) ও মো. শামীম এবং জসুমিয়ার ছেলে খোকন মিয়ার (৪৫) বিরুদ্ধে যাবজ্জীবন কারাদ-, প্রত্যেককে ১ লাখ টাকা করে অর্থদ- অনাদায়ে আরো ২ বছর কারাদণ্ডের আদেশ দিয়েছেন। যাবজ্জীবন কারাদণ্ডাদেশপ্রাপ্ত আসামিরা আদালতে হাজির ছিলেন। উপস্থিত আসামিদের সামনে আদালত রায় পড়ে শোনানোর পর আদালত ভবনের তৃতীয় তলায় আসামিদের আত্মীয়-স্বজনরা কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। এ সময় অভিযোগ প্রমাণ না হওয়ায় নয়ন মিয়া, বিল্লাল ও মোসলেম মিয়াকে আদালত বেকসুর খালাস দিয়েছেন।

রাষ্ট্রপক্ষে ট্রাইবুনাল পিপি এডভোকেট মো. আইয়ুব খান পূর্বকোণকে বলেন, আসামিদের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ রাষ্ট্রপক্ষে সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণ করতে পারায় আদালত এ রায় দেন। মামলার বাদি ও জাহাঙ্গীরের পিতা ফজর আলী সরকার পূর্বকোণকে বলেন, এ রায়ে আমি সন্তুষ্ট। উচ্চ আদালতেও এ আদেশ বহাল থাকবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

আদালত সূত্রে জানা যায়, ২০১৩ সালের ঈদুল আজহার আগে গৌরীপুর গ্রামের একটি সামাজিক মিটিংয়ে হাটচান্দিনার গৌরীপুর গ্রামের একটি সমাজকে ভেঙে দুটি সমাজ করার পক্ষে ছিলেন আসামিরা। এতে জাহাঙ্গীর সরকার ও তার পরিবারের সদস্যরা বিরোধিতা করলে উভয় পক্ষের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়। এ নিয়ে শত্রুতাও সৃষ্টি হয়। এছাড়া তারও আগে গৌরীপুর মৎস্য প্রজেক্টেও পদবি নিয়ে আসামিদের সাথে জাহাঙ্গীরের বিরোধ চলে আসছিল।

২০১৩ সালের ১ ডিসেম্বর সন্ধ্যা ৬ টায় হাটচান্দিনায় তাঁর দোকান বন্ধ করে গৌরীপুর দক্ষিণ পাড়া সিরাজ ডাক্তারের বাড়ির বার্ষিক ওয়াজ মাহফিলে যান জাহাঙ্গীর। মাহফিল থেকে ফেরার সময় রাত ৮টায় আসামিরা লক্ষ্মীপুর গ্রামের আবু ইউসুফের বাড়ির সামনে পথরোধ করে এলোপাতারি ছুরিকাঘাত করে জাহাঙ্গীরকে হত্যা করেন। এ সময় সাথে থাকা মামলার দুই সাক্ষী জাহাঙ্গীরকে উদ্ধারের চেষ্টা করলে তাদেরও প্রহার করে আসামিরা।

খবর পেয়ে জাহাঙ্গীরের পিতা ও পরিবারের সদস্যরা তাকে গৌরীপুর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন। এ ঘটনায় পরদিন নিহতের পিতা বাদি হয়ে দাউদকান্দি মডেল থানায় ১৫ জনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দায়ের করেন। ২০১৪ সালের ১৬ মার্চ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই আসাদুজ্জামান ১৬ জনের বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন। কুমিল্লা জেলা ও দায়রা জজ আদালতে আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয়।

এরপর ২০১৫ সালের ৭ সেপ্টেম্বর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের চাঞ্চল্যকর মামলা মনিটরিং কমিটির সুপারিশে মামলাটি দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য বিভাগীয় দ্রুত বিচার ট্রাইবুনালে স্থানান্তর করেন। ২২ সাক্ষীর মধ্যে ট্রাইবুনাল ১৩ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ করেন। ১৩ আসামির বিরুদ্ধে আনা নরহত্যার অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণ হওয়ায় আদালত এ রায় দেন। দ-াদেশপ্রাপ্ত আসামির আইনজীবী বলেন, এ রায়ে তারা অসন্তুষ্ট। তারা রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে যাবেন।

পূর্বকোণ-এমরান-আফছার

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট