চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪

চসিকের বিরুদ্ধে ৬৮ অভিযোগ

দুদকের গণশুনানি

নিজস্ব প্রতিবেদক

১৫ অক্টোবর, ২০১৯ | ৩:৩১ পূর্বাহ্ণ

অনিয়ম-দুর্নীতি নিয়ে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের বিরুদ্ধে গতকাল ৬৮টি অভিযোগের শুনানি হয়েছে। মূলত সেবা না পাওয়া, হয়রানি আর অনিয়ম-দুর্নীতি নিয়েই এসব অভিযোগ। শুনানিতে সাধারণ মানুষের পাশাপাশি কর্পোরেশনের কিছু কর্মকর্তা-কর্মচারীও কোন কোন সহকর্মীর বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছেন। অভিযোগ পড়েছে কিছু কাউন্সিলরের বিরুদ্ধেও। কিছু অভিযোগ শুনানির আগেই নিজেদের মধ্যে নিস্পত্তি করে ফেলেছেন অভিযোগকারী এবং অভিযুক্ত ব্যক্তি।

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের বীর উত্তম শাহ আলম মিলনায়তনে এ শুনানির আয়োজন করে দুদক ও মহানগর দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটি, চট্টগ্রাম। শুনানির আগে আলোচনায় সভায় বক্তব্য দেন দুদক কমিশনার(তদন্ত) এ এফ এম আমিনুল ইসলাম, চসিক মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন, চট্টগ্রামের অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার মো. নুরুল আলম নিজামী ও দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির সাধারণ সম্পাদক সিরাজুল ইসলাম।

শুনানিতে এসব অভিযোগের তাৎক্ষনিক ব্যাখ্যা দেন অভিযুক্ত কর্মকর্তা এবং সিটি মেয়র। কিছু ব্যাখ্যায় সন্তুষ্ট হতে না পেরে দুদক অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নেয়। বাকি অভিযোগ মীমাংসার সময় বেঁধে দেন দুদক কমিশনার আমিনুল ইসলাম।
নগরীর চান্দগাঁও এলাকায় জহির আহমদের পাঁচতলা ভবন। ২০১৫ সালে চসিক এই ভবনের গৃহকর নির্ধারণ করেছিল ১ লাখ ৪৩ হাজার টাকা। ওই বছরের ২৮ জুন কর আদায়কারীকে সব টাকা জমা দিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু তাঁকে রসিদ দেয়া হয় ৫৫ হাজার টাকার। বাকি টাকার কোনো হিসাব নেই। চার বছর ধরে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে ধরনা দিয়েও এর সমাধান পাননি প্রবাসী জহির আহমদ। গতকাল তিনি এই অভিযোগ তুলে ধরেন।

চসিক প্রকৌশলী সুদীপ বসাকের বিরুদ্ধে অভিযোগ করা হয়, তিনি তার ভাইকে ৮০ লাখ টাকার কাজ দিয়েছেন। এই অভিযোগে প্রকৌশলী বসাক বলেন, কাজ পাওয়া ব্যক্তিটি তার আপন ভাই নয়। চাচাত ভাই। চসিকের সাবেক প্রকৌশলী শামসুল হুদা সিদ্দিকী সুদীপ বসাকের বিরুদ্ধে ২০১৬ সালের নভেম্বরে চসিকের টলি নম্বর-১২ হতে ৩৭ পর্যন্ত টলিসমূহের মেরামত বাবদ ভুয়া প্রতিষ্ঠান মেসার্স মাসুম এন্টারপ্রাইজের নামে ভুয়া বিল তৈরি করে কোটি কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ তোলেন। ভুয়া ট্রেড লাইসেন্সে কাজ দেয়ার অভিযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, ট্রেড লাইসেন্স দিয়ে থাকে রাজস্ব বিভাগ। তারা সবকিছু যাচাই করেই তা দিয়ে থাকে। ওপেন টে-ারের মাধ্যমে কাজ দেয়া হয়।
এক ব্যক্তি অভিযোগ করেন তাকে প্লট দেয়ার জন্য রাজস্ব বিভাগের কর্মকর্তা জানে আলম ৩৩ লাখ টাকা নিয়েছেন। কিন্তু প্লট দেননি। এসময় এই অভিযোগের জবাব দেয়ার জন্য জানে আলম উপস্থিত ছিলেন না। এসময় সিটি মেয়র বলেন, ওই কর্মকর্তাকে বরখাস্ত করে এবিষয়ে তদন্ত চলছে। তবে তিনি অভিযোগকারীর উদ্দেশ্যে বলেন, চসিকের একজন কর্মকর্তার পক্ষে প্লট বরাদ্দ দেয়া সম্ভব নয়। এবিষয়টি যেকোন নাগরিক জানে। যিনি এভাবে টাকা দিয়েছেন তার উদ্দেশ্যও সৎ ছিল না। এই টাকা উদ্ধারে দুদক কমিশনার দুই মাস সময় বেঁধে দেন।

শুনানিতে ডা. জাকির হোসেন সিটি কর্পোরেশন হোমিওপ্যাথিক কলেজ ও হাসপাতালের অধ্যক্ষ নুরুল আমিনের বিরুদ্ধে স্বেচ্ছাচারিতা ও ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগ করেন এক ব্যক্তি।
লালখান বাজার ওয়ার্ড কাউন্সিলর এ এফ কবির আহমেদ ওরফে মানিক বিরুদ্ধে মসজিদের জায়গায় জোরপূর্বক দোকান নির্মাণ, রেলওয়ের জায়গা দখলের অভিযোগ করেন সালামত মিয়া নামের এক ব্যক্তি। অভিযোগের জবাবে কাউন্সিলর মানিক দুদক কমিশনারকে বলেন, পাহাড়ে বনায়ন করার অনুমতি নিয়েছেন তিনি। তার বক্তব্যে দুদক সন্তুষ্ট হতে না পেরে জেলা প্রশাসককে এই ব্যাপারে তদন্তের নির্দেশ দেন।

গণশুনানিতে ১০ নং ওয়ার্ড কাট্টলির বাসিন্দা আবছার উদ্দিন অভিযোগ করেন তাঁর এলাকায় সরকারি নালা দখল করে এক ভূমিদস্যু ৫ তলা ভবন নির্মাণ করেছেন। অল্প বৃষ্টিতেই পুরো এলাকাটি জলাবদ্ধ হয়ে থাকে। একাধিকবার সিটি কর্পোরেশনে অভিযোগ করেও কোনো ফল পাননি। এমন অভিযোগে দুদক কমিশনার (তদন্ত) আমিনুল ইসলাম বিষয়টিতে চসিকের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও সার্ভেয়ার মাহামুদুল হক ও আবুল কাশেমের গাফিলতির কথা উল্লেখ করে ভবিষ্যতে যেন এ ধরনের জনদুর্ভোগ সংক্রান্ত কাজে গাফিলতি না হয় সে জন্য সতর্ক করেন। একই সাথে এক সপ্তাহের মধ্যেই সরকারি নালা দখল করে অবৈধ ভবন নির্মাণের ব্যাপারে প্রতিবেদন তৈরি করে দুদককে জমা দেয়ার নির্দেশ দেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন লিখিত অভিযোগ করেন, তালাকনামার কোর্ট ফি ২৫ টাকা হলেও পেশকাররা এক হাজার বা দুই হাজার টাকা চেয়ে বসেন। না হয় সহজে তালাকনামার কপি তুলতে পারেন না।

শুনানিতে পরিচ্ছন্নতা বিভাগের কার্যক্রম এবং রাজস্ব বিভাগের বিরুদ্ধে ট্রেড লাইসেন্সে অতিরিক্ত টাকা আদায়, হয়রানি, গৃহকর বৃদ্ধির ব্যাপারে অভিযোগ করেন একাধিক ব্যক্তি। তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করেন সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন। মেয়র বলেন, ৭০ লাখ নগরবাসীর এই শহরে সমস্যা থাকবেই। সেসব সমস্যা সমাধানের উপায়ও আছে। ঢালাওভাবে অভিযোগ না করে নিয়মতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় সমাধানের জন্য সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির কাছে আসতে হবে। তবেই সমাধান হবে। অভিযোগকারীদের মধ্যে প্রায় ২০ জন অভিযোগকারী গণশুনানিতে অংশ নেয়নি।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট